দুর্নীতি বিশৃঙ্খলা নিরাপত্তাহীনতা ও উন্নয়নের তকমা

:: জামালউদ্দিন বারী ::

বেশ কয়েক বছর ধরেই গুম-খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার পরিস্থিতি দেশের নাগরিক সমাজের মধ্যে অন্যতম আলোচনা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকে উন্নয়ণের দাবীকেই সামনে নিয়ে আসার প্রাণান্ত চেষ্টা দেখা গেছে। যদিও দেশের নাগরিক সমাজ তো বটেই সাধারণ মানুষও শেষ পর্যন্ত তথাকথিত উন্নয়নের দাবীর বিপরীতে মানবাধিকার ও নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়গুলোকেই বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সরকারের একতরফার নির্বাচন প্রতিহত ও প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিরোধিদলের আন্দোলনে অসংখ্য মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই সরকারের আমলে প্রায় প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনেই ভোটার ও সাধারণ মানুষের সমর্থনের পাল্লা ছিল সরকার বিরোধি প্রার্থীদের দিকে। নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা ও প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা ছাড়াও পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ভ‚মিকা সত্ত্বেও, সব স্থানীয় নির্বাচনেই বিরোধিদলের প্রার্থীদের শক্ত অবস্থানের মধ্য দিয়ে তা বার বার প্রমানীত হয়েছে। বিষ্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এরপরও মানবাধিকার ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের তরফ থেকে কোন বাস্তব উদ্যোগ নেয়ার বদলে অস্বীকার করা হচ্ছে এবং জনগনকে সরকারের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করার কৌশল গ্রহণ করেছে। তবে এসব কৌশল কতটা কাজে আসছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এতদিনে বিএনপি জামায়াতের শত শত নেতা-কর্মী, ব্যাবসায়ী এবং কিছু পেশাজীবী মানুষ গুম-অপহরণের শিকার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকেও দায়সারা বক্তব্য শোনা গেছে। বিভিন্ন সময়ে দেশি-বিদেশি গবেষণা, মানবাধিকার সংস্থা ও মিশনের তরফ থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যখনই তথ্য-উপাত্ত ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, সাথে সাথেই সরকারের তরফ থেকে সে সব রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ, সংশয় এবং রাজনৈতিক বেøইম গেমে লিপ্ত হতে দেখা গেছে। ২০১৭ সালের বিভিন্ন সময়ে গুম-অপহরণের শিকার হওয়া বেশ কয়েকজন বছরের শেষদিকে হঠাৎ করেই ঘরে ফিরে এসেছেন। এদের মধ্যে ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, শিক্ষক রয়েছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অন্তর্হিত হওয়া এসব ব্যক্তিরা প্রায় অভিন্ন কায়দায় অপহৃত হয়েছিলেন এবং তাদের ফিরে আসার ধরণও প্রায় অভিন্ন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়ার পর তাদের আর হদিস পাওয়া যায়না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদেরকে আটক করার ব্যাপার অস্বীকার করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হলেও পুলিশি তৎপরতা তেমন দৃশ্যমান দেখা যায়না। পুলিশি অভিযানে বা অনুসন্ধানে অপহরণকারি ধরা পড়া বা অপহৃতকে ফিরিয়ে আনার নজিরও বিরল। তবে অপহৃত হওয়ার পর গত বছরের শেষদিকে কয়েকজনের ফিরে আসার ঘটনা এবং ফিরে আসার পর তাদের মন্তব্য ও অভিজ্ঞতার ফিরিস্তিও প্রায় অভিন্ন। মুখোশধারি ব্যক্তিদের দ্বারা বেশ কয়েকমাস আটক থাকার পর জনৈক ব্যবসায়ীকে গত নভেম্বরে ঢাকার রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়। বাসায় ফেরার পর অপহরণকারিদের সম্পর্কে তার মন্তব্য ছিল ‘দে আর ভেরি প্রফেশনাল’। মতিঝিল থেকে অপহৃত তরুণ অনলাইন সাংবাদিক নারায়ণগঞ্জের সোনার গাঁ থেকে উদ্ধার হওয়ার পর বলেছেন তারা টাকার জন্য তাকে অপহরণ করেছিল। প্রায় একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন ফিরে আসা আরো কয়েকজন। তবে তাদের এ ধরনের বক্তব্য তেমন বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। অন্যদিকে শত শত মানুষ নিখোঁজ হওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে তাদের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। অনেকের লাশ পাওয়া যাচ্ছে নদীতে, বাঁধের উপর অথবা ডোবা-নালায়। সেখানে প্রাণ ফিরে পাওয়া মানুষগুলো হয়তো অপহরণকারিদের শিখিয়ে দেয়া বক্তব্যই দিয়েছেন, অপহরণকারি গ্রুপের মিশন শেষে হয়তো তাদের শেখানো কথা বলা অথবা মুখ না খোলার শর্তেই তাদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে।
গত সপ্তায় হঠাৎ করে গুলশানের লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হোসেন মতিন নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এরপর প্রায় একই সময়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের (পিও) ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিনের পরিবারের তরফ থেকে অপহরণের অভিযোগ তোলা হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ তৎপরতার পর অপহৃত হওয়ার দুইদিন পর তাদেরকে গ্রেফতার দেখায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন বলা হচ্ছে, তাদেরকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। লেকহেড গ্রামার স্কুলের উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারি, শিক্ষামন্ত্রীর পিও বা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী প্রমুখ কেউই সমাজের প্রভাবশালী, ডাকসাঁইটে, কেউকেটা বা রাঘব বোয়াল নন। যদি তারা প্রভাবশালী- রাঘব বোয়ালও হোন, সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন, আইন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত নি:সন্দেহে যে কোন ব্যক্তির চেয়ে লম্বা ও শক্তিশালী। যে কোন ঘটনার তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি সন্দেহজনকভাবেও যে কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। পরিবারকে না জানিয়ে এবং অ্যাডভেঞ্চারিজমের আশ্রয় নিয়ে কাউকে আটক করে প্রথমে তা গোপন রাখা, অত:পর কোন অভিযোগে আটক দেখানোর সর্বশেষ উদাহারণ হিসিবে শিক্ষামন্ত্রীর পিএসহ দু’জনের আটক ও গ্রেফতারের ঘটনা ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অপহরণ, গুম ও নিখোঁজের ঘটনাগুলোর সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভ‚মিকাকে নতুনভাবে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট বলেই হয়তো এই তিন ব্যক্তির আটকের কথা স্বীকার করা হয়েছে বলে সাধারণ মানুষের ধারনা। সরকারী বেসরকারী ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনার সাথে জড়িত ও অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও প্রবল প্রতাপে দেশে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে কথিত ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রীর পিও, মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী বা লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিককে আটকের ঘটনা আড়াল করার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে নানাবিধ বিচার-বিশ্লেষণ হতে পারে। কথিত জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা অভিযোগের পাশাপাশি এসব ব্যক্তির যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট না হতেন, তাদের যদি ভিন্ন বা গোপণ কোন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ থাকত তাহলে তাদের ভাগ্যে কি ঘটত তা আন্দাজ করা এখন আর কোন কঠিন বিষয় নয়। সেই সাথে আরেকটি প্রশ্ন সঙ্গতভাবেই এসে যায়, তা হচ্ছে, নিখোঁজের দুইদিন পর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখালেও পুলিশ মহাপরিদর্শক বা র‌্যাবের ডিজি কিছুই জানতেননা? অবিশ্বাস্য।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত আছে। এক প্রতিবেদনে জানা যায়, নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত থাকার দায়ে গত ৫ বছরে ৭৬ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার পরও পুলিশের অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। অর্থাৎ গুরুতর অপরাধের জন্য বিভাগীয় লঘুদন্ড পুলিশের অপরাধ কমাতে এবং জননিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে তেমন কোন কাজে আসছেনা। মাদক ব্যবসা, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা, মানব পাচার, চাঁদাবাজি ছিনতাই-ডাকাতি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর মত গুরুতর অপরাধে দোষি পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ যেখানে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রাপ্য, সেখানে তাদেরকে বদলি, তিরস্কার, আর্থিক জরিমানা বা পদাবনতির মত লঘু শাস্তি দেয়ার কারণেই পুলিশের অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনা যাচ্ছেনা। পুলিশ কর্তৃপক্ষ অপরাধি পুলিশ সদস্যদের জন্য জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলেন, বছরে প্রতিমাসে গড়ে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত নি:সন্দেহে ইতিবাচক। তবে অপরাধি পুলিশ সদস্যরা গুরুপাপে লঘুদন্ডের কথা মাথায় রেখেই রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার সুযোগ হিসেবেই অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে লাখ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার অথবা মুক্তিপণের দাবীতে শিশু অপহরণের পর পুলিশ সদস্যের বাড়ি থেকে শিশুর লাশ উদ্ধারের মত ঘটনা উদঘাটিত হওয়ার পর সে সব অপরাধি পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পুলিশের অপরাধ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। আর পুলিশ বাহিনীতে অসংখ্য অপরাধি সদস্য রেখে দেশে আইনের শাসন, জননিরাপত্তা বা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। দেশকে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির দিকে ঠেলে দিয়ে উন্নয়নের কোন মডেলই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিনত হতে যাচ্ছে বলে সরকারের তরফ থেকে বিশেষ প্রচারনার উদ্যোগ চলছে। জিডিপি ও পরিসংখ্যানের মানদন্ডে দেশকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত করা হয়তো অসম্ভব নয়। কিন্তু এটা বাস্তব সত্য যে গত এক দশকে দেশে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হয়নি। আশানুরুপ কর্মসংস্থান বাড়েনি। রফতানী বাণিজ্যে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। দেশ থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির ব্যর্থতা এবং প্রভাবশালী ব্যাংক পরিচালকদের দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বড় ব্যাংকগুলো থেকে শুরু করে সরকারী বেসরকারী বেশীরভাগ ব্যাংকই এখন দেউলিয়া দশায় উপনীত হয়েছে। ব্যাংক লোপাট ও জাতীয় সম্পদ লুটেপুটেই দেশে কিছু পরিবারের হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। বিনিয়োগ না বাড়লেও সব তফসিলি ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েছে। শীর্ষ একশত ঋণখেলাপির কাছেই ব্যাংকের পাওনা ২১ হাজার কোটি টাকা। কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবনমান উন্নয়নে যে সম্পদ ব্যয়িত হতে পারত সে সম্পদ এখন মুখোশধারি ঋণ খেলাপিদের পকেটে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষণ বলছে, সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে সঙ্গতিহীনভাবে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। এভাবেই অর্থনৈতিক বৈষম্য আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেড়েছে। এহেন বাস্তবতায় কোনমতে দেশকে মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় তুলে দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়া ও উন্নয়নের সার্টিফিকেট নিতে চাইছে সরকার।
আগামী এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দেশে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বলে ধরে নেয়া যায়। অক্টাবরের ৩০ তারিখ থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করার প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সংসদের মেয়াদ শেষে একটি নির্বাচনের অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা সামনে রেখেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করে তোলাই সবচেয়ে বড় জাতীয় চ্যালেঞ্জ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হত এবং দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকত তাহলে গত চার-পাঁচ বছরে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গতিশীলতা নি:সন্দেহে আরো বহুদূর এগিয়ে যেত। অন্যদিকে দশম জাতীয় নির্বাচনোত্তর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, সম্ভাবনা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তিগুলো আরো নড়বড়ে হয়েছে। এরপরও দেশ এখনো একটি সম্ভাবনা ও অনিশ্চয়তার দোলাচল বা ক্রান্তিকালে ঘুরপাক খাচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি জাতীয় রাজনৈতিক সমঝোতা এবং সত্যিকার অর্থে একটি ক্রেডিবল ইলেকশানই সে ক্রান্তিকালকে প্রত্যাশিত সম্ভাবনার সোপানে তুলে দিতে পারে। সর্বগ্রাসি দুর্নীতি, সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নিরাপত্তাহীনতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি জিইয়ে রেখে পরিসংখ্যানের হিসাবে দেশকে মধ্য বা উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করার মধ্যে সাধারণ মানুষের কোন কল্যাণ নেই। আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। দেশকে সে লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমে আমাদের রাজধানী শহর থেকে শুরু করে প্রতিটি জনপদকে নিরাপদ ও বসবাসযোগ্য করতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, বহুদলীয় রাজনীতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, নির্বাচনে কোন বিশেষ দলের প্রশাসনিক প্রাধান্য ও আধিপত্য রোধ করে নির্ভয়ে সব দল ও মতের মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে শুধু পরিসংখ্যানের উন্নয়নে দেশের জনগন বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করা যাবেনা।
bari_zamal@yahoo.com

Advertisement