ইস্ট লন্ডন মসজিদে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘কুরআন রিভিশন ডে’

পবিত্র কুরআনকে কেন্দ্র করে এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো ইস্ট লন্ডন মসজিদে । বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে কুরআনের দেড় শতাধিক হাফিজ এবং শিক্ষক জমায়েত হয়ে দিনব্যাপী কুরআন রিভিশনে অংশ নিলেন । হাফিজগন বিভিন্ন গ্রুপে বিভিক্ত হয়ে সারাদিন কুরআন তেলাওয়াত করেন এবং শিক্ষকগন তাদের তেলাওয়াত শুনেন । সারাদিনে পবিত্র কুরআনের ৩০টি খতম অনুষ্ঠিত হয় । কুরআন রিভিশন চলাকালে কুরআনপ্রিয় মানুষ মসজিদে ছুটে আসেন এবং সারাদিনই মসজিদে অবস্থান করে কুরআন তেলাওয়াত শুনেন ও পর্যবেক্ষন করেন। ইস্ট লন্ডন মসজিদ একদিনের জন্য কুরআনে হাফিজদের মিলনক্ষেত্রে পরিনত হয়েছিলো।

১৩ ফেব্রুয়ারি রোববার এই ‘কুরআন রিভিশন ডে’ অনুষ্ঠিত হয় । ফজরের নামাজের পর থেকে রাত সাড়ে ৭টা তথা এশার নামাজের পুর্ব পর্যন্ত গোটা বৃটেন থেকে আগত ১২০ জন কুরআনের ছাত্র ও ৫০ জন শিক্ষক তেলাওয়াত করেন। কুরআন রিভিশন প্রজেক্ট এই ব্যক্তিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেন।দিনব্যাপী ১৩ ঘণ্টা কুরআন রিভিশন শেষে রাত ৮টার দিকে অংশগ্রহনকারিদের মধ্যে পুরস্কার বিতরনীয় অনুষ্ঠিত হয় । ইস্ট লন্ডন মসজিদের মেইন হলে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরনীপর্বে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন মুসলিম রিসার্চ ডেভোলাপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শায়খ হাইতাম হাদ্দাদ, ইস্ট লন্ডন মসজিদ এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টারের প্রধান ইমাম শায়খ আব্দুল কাইয়ুম, ইস্ট লন্ডন মসজিদের ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান আইয়ুব খান, ডাইরেক্টর দেলওয়ার খান, কুরআন রিভিশন প্রজেক্টের মুল উদ্যোক্তা নিউক্যাসেলের সৈয়দ আনিসুল হক সাইফ, সমন্বয়ক সিরাজুস সালেকীন ও শায়খ সাজিদ
ওমর ।সমাপনী পর্বে কুরআনের ২০ খতম সম্পন্নকারি বিশ জন হাফিজকে ২০টি ঘড়ি উপহার দেয়া হয় । এছাড়াও সকল অংশগ্রহণকারিকে সুন্নাহ মাস্কের ফারফিউম উপহার দেয়া হয় । অংশগ্রহণকারি ১২০ হাফিজের মধ্যে রাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজয়ী হোন হাফিজ আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তালুকদার । তাঁকে একটি আইফোন উপহার দেয়া হয়।

সমাপনী পর্বে অতিথির বক্তব্যে ইমাম হাইতাম হাদ্দাদ বলেন, বৃটেনের মতো একটি নন-মুসলিম দেশের সিটির কাছাকাছি একটি মসজিদে এভাবে কুরআন রিভিশন প্রোগ্রাম হবে এটা আমরা হয়তো একসময় ভাবতে পারিনি । আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে । তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই, যে নিজে কুরআন শেখে এবং অন্যকে তা শেখায়। সুতরাং আজকে যারা এই প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করে সারাদিন কুরআন রিভিশন দিয়েছেন এবং তাদের যে শিক্ষকরা কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন তাঁরা হলেন শ্রেষ্ঠ মানুষ। তিনি বলেন, কুরআন শুধু দোয় করার জন্য কিংবা মৃত্যূর পর পড়ার জন্য নয়; বরং কুরআনের চর্চা পরিবার, সমাজ ও রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে থাকতে হবে।

শায়খ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কুরআন রিভিশন প্রজেক্ট লন্ডনে নতুন, তবে সৌদি আরবে এর বেশ প্রচলন আছে ।হাফিজগন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত পুরো কুরআন শরীফ রিভিশন দেন । তাঁরা তাদের শিক্ষকদেরকে শুনান। হাফিজদের জন্য সবসময়ই কুরআনের রিভিশন দেয়া প্রয়োজন। নতুবা তাদের মেমরী দুর্বল হয়ে যায়। সামনে রামাদ্বান আসছে। অনেক হাফিজ তারাবিহ পড়াবেন। তাই তাদের রিভিশন আরো বেশি প্রয়োজন।ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান আইয়ুব খান বলেন, এই প্রজেক্টের মাধ্যমে গোটা দেশে ছড়িয়ে থাকা হাফিজদের মধ্যে একটি যোগসুত্র রচনা হবে। একজন আরেকজন সম্পর্কে জানতে পারবেন । আজকের এই রিভিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে হাফিজগনের মধ্যে কুরআন তেলাওয়াতের চর্চা গড়ে ওঠবে । তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে ব্যাপক সাড়া দেখে আমরা অভিভূত । ভবিষ্যতে আমরা প্রতিবছরই এই ধরনের আয়োজন করবো।সিরাজুস সালেকীন বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে লন্ডন মুসলিম সেন্টারে আল-মিজান স্কল ও লন্ডন ইস্ট একাডেমি প্রতিষ্ঠাতা হয়েছিলো । এই দুই প্রতিষ্ঠানের হিফজ বিভাগ থেকে অনেক ছাত্র হাফিজ হয়ে এখন কর্মজীবনে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন । আমরা তাদেরকে আবার ফিরিয়ে এনে পুরো দেশের হাফিজদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন রচনা করে দিলাম।

Advertisement