ধর্ষণের চেষ্টা লোমহর্ষক বর্ণনা নিজেই দিয়েছেন নায়িকা পরিমনী

।। হিমিকা আযাদ ।।

পরীমনির এই সংবাদ সম্মেলন বহু ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে।পহেলা বৈশাখে হাজারো মানুষের মাঝে নারীর পরনের শাড়ী টেনে ছিঁড়ে ফেলা, বাধনকে থার্টি ফার্ষ্ট নাইটে টি এস সিতে লান্চিত করা এমন আরো অনেক ঘটনা । আমরা নারীকে কতো কতোভাবে অপদস্থ করাটা গ্র্যানটেড করে নিয়েছি । জন্ম থেকে মৃত্যু অব্ধি সে যে রূপেই হোক মা বোন মেয়ে কিংবা স্ত্রী ভেবে । খুবই সুক্ষ্মভাবে সুণিপুন আবেগ দিয়ে। কি লাভ তাদের এতো তলানীতে ফেলতে চাওয়ার অসীম অসম নোংরা আকাংঙ্খা। হতাশ হই তখন, যখন দেখি সমাজের ছোটো বড় সবাই যখন কোনো মেয়ে ধর্ষিতা হয় আঙ্গুল উচিয়ে তার বিরুদ্ধেই কথা বলেন । কিংবা পরিচিত একজন সভ্য, সুশিক্ষিতা, ঢাকা ক্লাব এবং আওয়ামী লীগ উপকমিটির সদস্যা ইনিয়ে বিনিয়ে ক্লাবের কোড অফ কন্ডাক্টের সাথে পরীমনি যা বলছেন তাতে অমিল খুঁজে পান। এবং তিনি একজন নারী হয়েও, তার কন্যা সন্তান থাকবার পরও পরীমনিকে দোষারোপ করবার পন্থা খু্ঁজে খুঁজে বের করেন। তথাকথিত সভ্যরা যখন অসভ্যতা শুরু করে তখন তারা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য মনে করে।
সবাই নারীদের শুধুমাত্র উপভোগের সামগ্রী ভেবে বসেছেন। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছেন । কিন্তু কাউকে জোরাজোরির প্রশ্নে কোনো যুক্তি তর্কই খাটেনা।

সংবাদ মাধ্যমগুলোর সব ক্যামেরা যখন ঘিরে ধরেছে পরীমনিকে তখন সে চেচিয়ে বলছিল ওই লোকটার সামনে গিয়ে ক্যামেরা ধরেন । মনে হচ্ছিল কি আহলাদের কথা । ইনারা কি সমাজের যেমন তেমন লোক যে ক্যামেরা বল্লেই ধরা যাবে তাদের মুখের সামনে । ওই উচ্চ মর্গীয় মানুষগুলোইতো সব কন্ট্রোল করেন ক্ষমতা আর টাকার জোরে সিদ্ধ হস্তে । সেটা যেকোন ক্ষেত্রই হোক । পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বন্দী তাদের টাকার কাছে। পরীমনি জানান, ১০ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলেন তিনি। রাত তখন ১২টা পেরিয়েছে। বন্ধুটি তাঁদের নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি বোট ক্লাবে। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তাঁর মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ সময় মারধর করা হয় পরীর সঙ্গে থাকা জিমিকেও।
নায়িকা পরীমনি সে একজন সেলেব হয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ঘটনার চারদিনের ভেতরে তাই বলছিলেন তিনি সাক্ষাৎকারে । থানার ওসি থেকে শুরু করে প্রায় সবাই পিছ পা হয়েছেন । এমনকি তার দ্বিতীয় পরিবার বিএফডিসিও এগিয়ে আসেনি । সবশেষে সংবাদ মাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের এই প্রথম সারির নায়িকা পরীমনির ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে তোলপাড় হওয়ার পর খবরটি আমলে নিয়েছে পুলিশ। যার অর্থ হচ্ছে অপরাধ প্রমানের জন্য আগে নিজেকে ডিজিটাল মাধ্যমে ভাইরাল করতে হবে । তবে গিয়ে টনক নড়বে কর্মকর্তাদের । রবিবার রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘তাঁকে ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টা করা হয়েছে। গত চার দিন ধরে প্রতিকার চেয়ে দরজায়-দরজায় কড়া নাড়লেও কোনও লাভ হয়নি।’ শুধু তাই নয় সুবিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থও হয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমনির । সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় “নাসির উদ্দীন মাহমুদ“ নামটি বারবার উচ্চারণ করছিলেন যে কিনা তার সাথে এমন আচরণ করার চেষ্টা করেছেন মুখে গ্লাস চেপে ধরেছিলেন । তিনি কোনো একটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এবং তার প্রোফাইল পিকচারে যে ছবি দেয়া তা বর্তমান আইজিপি বেনজির আহমেদ এবং বর্তমান ঢাকার মেয়র দুজনই আছেন বলে উল্লেখ করেন। কান্নায় ভেঙ্গে পরছিলেন আর বলছিলেন আমি মরতে চাইনা । আমি মরতে চাইনা কতোটা কুক্ষিগত একটি দেশের শাসন ব্যবস্থা ।তা এই নায়িকার ফেইসবুক স্ট্যাটাসের লিখায় স্পষ্ট যা তিনি কষ্ট ঘৃণা আর ক্ষোভের চরমে পৌঁছে লিখেছেন “এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার?আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু, বেনজির আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাইনা মা। যাদেরকে পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়! আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারিনা। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পরে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো।আফসোস ছাড়া কারোর কি করবার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে মা বলে সম্বোধন করে এসব বলেছেন তিনি ।পরীমনি মা হারিয়েছেন যখন তার বয়স আড়াই বছর ।
খুব ই অল্প সময়ে খ্যাতি পাওযা নায়িকার এমন অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। পরীমনির অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (জনসংযোগ) সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পরীমনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব।’যা কিনা মুখস্ত করা একটা স্ক্রীপ্ট হয়ে দাড়িয়েছে পুলিশ প্রশাসনের কাছে । বিচারের আওতায় না এনে ধামাচাপা দিতে সময় প্রয়োজন হয় শুধু মাত্র কয়েকটা দিন ।এভাবেই চলছে ধর্ষণের স্বীকার হওয়া নারিদের বিচার চাওয়া এবং পাওয়ার প্রক্রিয়া। সেটি তিন বছরের শিশুই হোক কিংবা ষাট বছরের বয়োবৃদ্ধা ।
পরিমণি আপনি শক্ত থাকবেন সমাজের নষ্ট চিন্তার মানুষ গুলো আপনার দিকেই আঙ্গুল তুলে কথা বলবে । নিজেদের নিম্ন মানের খায়েস মেটাতে চাওয়ার ইচ্ছা কে অপব্যাখ্যা দিবে। এখন আরো অনেক ধাপ পার হতে হবে।এভাবে হাজার দুয়ার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। আপনি সবগুলো পেরুনোর শক্তি পান ।

হিমিকা আযাদ : ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট, ইউকে।

Advertisement