ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কাজী ফিরোজ রশীদ এমপির অনুরোধ

বাংলাদেশকে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত করতে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘোষণার আলোকে ইতিমধ্যে সরকারী- বেসরকারী নানা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজের ধারাবাহিকতায় ডব্লিওএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল- এফসিটিসি’র আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধন করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে সম্প্রতি অনুরোধ করেছেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।
এক লিখিত চিঠিতে কাজী ফিরোজ রশীদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা পাস করার মাধ্যমে যুগোপযোগী করা হয়। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ এসডিজি’র স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় হু ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে মূলধারার উন্নয়ন কর্মকা-ের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তামাকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০১৬ সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার’স সামিট এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করার ঘোষণাও দেন তিনি।
কাজী ফিরোজ রশীদ আরো উল্লেখ করেন ,বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু দুর্বলতা যেমন, পাবলিক প্লেস এবং পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান সংরক্ষণ, বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্য প্রদর্শন, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর), তামাকপণ্যের খুচরা বিক্রয় এবং ই-সিগারেটসহ নতুন ধরনের তামাকপণ্য বিক্রয় চলমান থাকায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে তা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
এমতাবস্থায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এফসিটিসি’র আলোকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ করেন কাজী ফিরোজ রশীদ, এমপি। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বেশ কিছু প্রস্তাবও পেশ করেন। সেগুলো হলো- ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে সকল পাবলিক প্লেস, বিশেষ করে রেঁস্তোরা ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কো¤পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) এর মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসমূহ আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা।
প্রসঙ্গত, গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে (গ্যাটস)-এর ২০১৭ এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ৩৭.৮ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন, যার মধ্যে ১৯.২ মিলিয়ন মানুষ ধূমপায়ী এবং ২২ মিলিয়ন মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। তাছাড়া গ্যাটসের ২০১৩ এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরী তামাকপণ্য ব্যবহার করে। আর ট্যোবাকো এ্যাটলাস ২০২০ এর রিপোর্ট অনুযায়ী তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

Advertisement