নদী ভাঙনে যে শিশুর ছবি ভাইরাল

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর চলমান ভয়াবহ ভাঙনে সহস্রাধিক পরিবার ইতিমধ্যে গৃহহারা হয়েছে।

ভাঙনকবলিত এলাকার ৩ বছর বয়সী সুলেমান নামের একটি শিশুর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘ছবি যেন ছবি নয়, এ যেন জীবনযুদ্ধ।’

চলমান নদী ভাঙনে তার পরিবারের ভিটে-মাটি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙন থেকে সংসারের মালামাল সরাতে পরিবারের সবাই যখন ব্যস্ত তখন যেন ছোট্ট সুলেমানের দিকে খেয়াল দেয়ার কারো সময় ছিল না।

তাইতো ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ও বিধ্বস্ত শিশুটি এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে রান্না ঘরের পাটখড়ির একটি চালার নিচে। সে অবস্থায় সুলেমান ক্যামেরা বন্দি হয় সুলতান হোসেন লিখন নামে এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনের ক্যামেরায়।

সেটি ছিল গত ৫ অক্টোবরের ঘটনা। ওই ব্যক্তি ছবিটি ওই দিন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ছবিটি ১ হাজার ২৩১ বার শেয়ার হয়েছে।

ছবিটির চিত্রগ্রাহক গোয়ালন্দ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের আলম চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা সুলতান হোসেন লিখন জানান, গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের ভয়াবহ নদীভাঙন দেখতে আমি ওইদিন দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১নং ব্যাপারীপাড়া গ্রামে যাই। সেখানে দেখতে পাই বহু পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত।

তিনি বলেন, ওই অবস্থার মধ্যে সুলেমানকে দেখতে পাই। তাকে দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। শিশুটিকে দেখে আমার ৩ বছর বয়সী সিরিয়ার শিশু আয়লানের কথা মনে পড়ে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে বাঁচতে সে পরিবারের সঙ্গে নৌকাযোগে পাড়ি দিতে চেয়েছিল ভূমধ্যসাগর। গন্তব্য ছিল ইউরোপের দেশ গ্রিস। কিন্তু তাদের শেষরক্ষা হয়নি। নৌকাডুবে আয়লানের নিথর দেহ ভেসে গিয়ে থেমেছিল তুরস্কের উপকূলে। এ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপক তোলপার সৃষ্টি হয়েছিল।

লিখন জানান, সুলেমানের ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর এতটা সারা পড়বে আমি ভাবিনি। সুলেমানের বাবা দরিদ্র গেদন শেখ। মা রোকেয়া বেগম। তাদের আরেকটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা বর্তমানে রাজবাড়ীর সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

সুলেমানদের মতো এ রকম সহস্রাধিক পরিবার নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তার ধার, রেল লাইন ও মহাসড়কের পাশে এবং বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

ছবিটির পোস্টে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে মন্তব্য করেছেন।

এর মধ্যে মিজান খান নামের একজন তার মন্তব্যে বলেছেন- ‘সুলেমানরা যদি এ দেশের মানুষ না হয়ে যদি রোহিঙ্গা হতো তাহলে সরকার এদেরকে যথাযথভাবে হেফাজতে রাখত।’

এ ছাড়া অনেকেই একযোগে সবগুলো ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় ভারতের তুলোধুনা করেন। নদীভাঙন থেকে দৌলতদিয়া ঘাট এবং দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নকে রক্ষা করতে আরও আগে থেকে উদ্যোগ না নেয়ায় সরকারেরও তীব্র সমালোচনা করেন কেউ কেউ।

নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয় গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু জানান, এ পর্যন্ত ৫৫৮টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করে তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ঢেউটিন ও নগদ অর্থ দিয়ে ঘর তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। যাদের জমির কোনো ব্যবস্থা নেই, তাদের প্রয়োজনে খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে পুনর্বাসন করা হবে।

Advertisement