spot_img
শুক্রবার, মার্চ 29, 2024
Home কমিউনিটি নর্থাম্পটনবাসীর স্বজ্জন এক মখন খানের কথা

নর্থাম্পটনবাসীর স্বজ্জন এক মখন খানের কথা

।। এহসানুল ইসলাম চৌধুরী শামীম ।।
পুরো নাম আবদুল শফিক মখন খান। মখন খান নামে সবার কাছে পরিচিত। মখন খানকে নর্থাম্পটনের এমন কেউ ছিনে না এমন লোক পাওয়া মুশকিল। তিনি মানুষকে ভালো বাসেন।অসম্ভব ভালো মনের একজন মানুষ। সব সময় মুখে হাসি লেগেই থাকে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও জীবনকে তিনি  উপভোগ করতে পারেন নিজের মতো করে। শুধু তাই নয় আশপাশের সবাইকে মাতিয়ে রাখার এক অদ্ভুত শক্তি রয়েছে তার মাঝে।
আমাদের কমিউনিটিতে কারো কোন বিপদ আপদের বা মরার খবর শুনলে সর্বপ্রথম চোখবুঝে নির্ভরতা পাওয়া যায় আবদুল শফিক মখন খানের  কাছে। আবদুল শফিক মখন খান ব্রিটেনের নর্থাম্পটনের আল জামাত উল মুসলিমিন অফ বাংলাদেশ জামে মসজিদের চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি ছিলেন মসজিদের সেক্রেটারী। মখন খান সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।তার মেধা,সততা দিয়ে আজ এ পযন্ত এসেছেন।

পাঁচ ওয়াত্তের নামাজ পড়েন মখন খান। নামাজ মিস করেন না। তিনি শত ব্যস্ত থাকলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। ফজরে নামাজে প্রথম যান মখন। ঝর তুফান বা তুষারপাত হলেও মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজে গিয়ে দরজার তালা খুলে দেন মখন খান। অনেক ঝুঁকি নেন। আল্লাহ ঘর মসজিদের  সেবা করে মরতে চান মখন খান।
২০০০ সাল থেকে মরা মানুষের লাশ ধুয়ে আসছেন মখন খান। অসংখ্য মানুষের লাশ ধুইয়েছেন তিনি হিসাব নেই।
আপনি লাশ ধুয়ানোর কাজে আসলেন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে মখন খান বলেন, মরা মানুষের লাশ ধুইতে সকলেই ভয় পায়। আগে লাশ ধুইতেন মসজিদের ইমামরা। তারা গেলে কে ধুয়াবেন লাশ। তাই চিন্তা করলাম লাশ ধুয়ানির কাজ শিখতে হবে। তাই শিখলাম। এটা সুয়াবের কাজ। তাই লাশ ধুয়ানোর কাজে আসলাম।
কার উৎসাহে এ কাজে এলেন? বললেন,  আমার স্ত্রীর উৎসাহে এ কাজে এসেছি। উনি সব সময় পরামর্শ দিতেন লাশ ধুইয়ানোর কাজ করার জন্য। আমার ওয়াইফের সহযোগীতা না পেলে আজ এভাবে আসতে পারতাম না।

লাশ ধুয়ানোর পরে যখন ঘরে  যান তখন পরিবারের কেউ ভয় পায় কি? মখন খান বললেন, না না ভয় পায় না কেউ। পরিবারের সবাই আমাকে এ কাজে সহযোগীতা করে আসছে।
লাশ ধুয়ে কখনো ভয় পেয়েছিলেন কি? মখন খান বললেন, না কখনো ভয় পাইনি।ভয় পাওয়ার কোনো কারন নেই।  লাশ ধুয়ে কখনো কি কষ্ট পেয়েছেন? এ প্রশ্নের  জবাবে মখন খান বলেন, জি কষ্ট পেয়েছি। যখন নিজের  কেউ মারা গেলে। আত্মাীয় সজন,  বন্ধু  বা যাদের সাথে সব সময় উঠা বসা। তারা মারা গেলে যখন আমি লাশ নিজের হাতে ধুইয়ে দেই তখন কষ্ট আসে। চোখের পানি চলে আসে।
লাশ ধুইতে কোন টাকা পয়সা( পাউন্ড) নেন না মখন খান। বললেন,লাশ ধুয়া সুয়াবের কাজ। তা ফ্রি কাজ করি। টাকা পয়সা লইনা।
আপনার পরে কে লাশ ধুয়াবে? কাউকে তৈরী করেছেন কি? আবদুল শফিক মখন খান বললেন, আমার পরে আরো  দুইজন লাশ ধুয়াবেন। তাদের কে লাশ ধুয়ানির কাজ শিখিয়েছি। তারা হলেন হাজী হারুন আলী ও আতিকুর রহমান।।
আপনার শেষ ইচ্ছে কি? বললেন, মসজিদের কাজে সব সময় সেবা  করে মরতে চাই।

বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালী সময়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে এসেছিলেন মখন খান।প্র থমে রেষ্টুরেন্টে  কিচেনে ডিস ওয়াসিংয়ের কাজ করেন। তখন সপ্তাহে  ৪ পাউন্ড বেতন পেতেন। বর্তমানে মখন খান নিজের মালিকানাধীন নর্থাম্পনের বিকসওয়াত তান্দুরীতে শেফের কাজ করছেন।
মখন খান বলেন, যখন এদেশে আসলাম তখন বয়স ছিলো আমার ১৪ বছর। রেষ্টুরেন্টে কাজ করার অনুমতি ছিলো না ।লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করতাম। মাঝ মাঝে পুলিশ আসতো। তখন খুব ভয় পেতাম।
মখন খান ১৯৭১ সালে ১৪ বছর বয়সে সরাসরি যুদ্ধ  না করলেও বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সাহায্য করেছেন। তাদেরকে খাওয়াইছেন গরু জবাই করে।
আবদুল শফিক মখন খান ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। তিনি ১৯৮২ সাল থেকে নর্থাম্পটনে বসবাস করছেন। মখন খানের বাংলাদেশের বাড়ি সিলেটের বিশনাথ উপজেলার হামিদপুরে।

এহসানুল ইসলাম চৌধুরী শামীম : চ্যানেল এসের নর্থাম্পন প্রতিনিধি
Advertisement