নাইফ ক্রাইম : ঈদের আনন্দ নেই জামানুরের পরিবারে (ভিডিওসহ)

।। আশিক মাহমুদ।।

গেল এপ্রিল মাসে ছুরিকাঘাতে নিহত জামানুরের পরিবারের এবার প্রথম ঈদ সন্তান ছাড়া। ঈদের আনন্দতো দুরের কথা, এখনও শোকের ছায়া পুরো পরিবার জুড়ে।

এখনও পরিবারের সবার কাছেই বিশ্বাস করা কঠিন জামানুর নেই পৃথিবীতে। গত এক বছরে লন্ডনে নাইফ ক্রাইম বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। যার ফলাফল জামানুরের মতো চলতি বছরে লন্ডনে নাইফ ক্রাইমে মৃত্যুর সংখ্যা ২৪। লন্ডন মেয়র সাদিক খান নাইফ ক্রাইমের ভয়াবহতা ঠেকাতে ঘোষনা করেছেন বিশেষ পরিকল্পনা।

বিজ্ঞাপন………………………….

গেল ১১ই এপ্রিল টাওয়ার হ্যামলেটসের মাইলএন্ড এলাকায় নিজ বাসার সামনেই ছুরির আঘাতে নিহত হন জামানুর। ২০ বছরের মাঝে এবার প্রথম জামানুরের পরিবারের সামনে ঈদ প্রিয় সন্তানকে ছাড়া। তিন ভাই, এক বোনের পরিবারে জামানুর ছিলেন সবার বড় সন্তান। ঘরের বড় সন্তানকে ছাড়া তাই ঈদের আনন্দতো নয়ই, যেন ঘর জুড়ে এক নিশ্বপ্রান আর নিস্তবদ্ধতার চাপা কান্না।

সৈয়দ জামানুর ইসলামের বাবা সৈয়দ আব্দুল মুকিত জানানা, এখনও পরিবারের কেউই মেনে নিতে পারছেন না ২০ বছরের টগবগে তরুন জামানুর এখন আর নেই পৃথিবীতে। বলছেন, এখনও মনের খেয়ালে জামানুরের মা সহ ঘরের অন্যান্য সদস্যরা খুজে ফেরে জামানুর ইসলামকে। সৈয়দ আব্দুল মুকিতের ভাষায়, সন্তান হারানোর ব্যথা বোঝার উপায় নেই এই পৃথিবীর কারাও, যার নেই এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।

জামানুরের বাবা জানান, হত্যাকারি সন্দেহে গ্রেফতার তিনজনই বাংলাদেশি বংশদ্ভুত, যাদের সবার বয়সই বিশ বছরের নিচে। জামানুরের বাবা বলছিলেন, সন্তানদের বিপদগামী পথ থেকে ফেরাতে দায়িত্ব আছে বাবা মায়েরও। তিনি বলেন, উঠতি বয়সে, অনেকেই বুঝতে পারেনা খারাপ ভালোর তফাৎ। কিন্তু সেই সময়ে বাবা মাকেই দায়িত্ব নিতে হয় সন্তানকে বোঝানোর, যোগ করেন সৈয়দ মুকিত।

সৈয়দ আব্দুল মুকিত বলেন, অনেকেই ছুরি বহন করার ক্ষেত্রে যুক্তি দেয় নিজের নিরাপত্তার। এই ধারণাকে ভুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছুরির মতো অস্ত্র বহন করলে সেটিই আবার ব্যবহার হতে পারে বহনকারির বিরুদ্ধেই। তাই এ বিষয়ে সাবধান ও এমন কোন ধরণের অস্ত্র বা কাজের সাথে যুক্ত হবার বেপারে সাবধান করেন জামানুরের বাবা।

এদিকে, নাইফ ক্রাইমের এ ভয়াবহতা ঠেকাতে, লন্ডনের প্রায় ৪শ ৮৪টি সেকেন্ডারি স্কুলে মেটাল ডিটেক্টর দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন লন্ডন মেয়র সাদিক খান। প্রয়োজনে স্কুলগুলোতে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থারও কথা বলেন সাদিক খান। মেয়রের এ পরিকল্পনাকে ভালোভাবেই দেখছেন বাংলাদেশি টিচার্স এসোসিয়েশন ইন ইউকে। তবে একই সাথে সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল বাসিত চৌধুরী বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে স্কুলগুলোতে যেন কোন ভীতির সৃষ্টি না হয়।

পুলিশের হিসেব মতে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেছে ২৪ জনের যাদের সবার বয়স ২৫ বছরের নিচে।ব্যাধির পর্যায়ে ঠেকা লন্ডনের নাইফ ক্রাইমকে নিয়ন্ত্রনে আনতে, মেয়রের এ পরিকল্পনায় বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৬শ ২৫ হাজার পাউন্ড।

Advertisement