নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সোমবার ৫টা পর্যন্ত সার্চ কমিটিতে নাম দিতে পারবেন

যে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এখনো সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করেনি, সে সকল দলকে আগামীকাল সোমবার ৫টার মধ্যে নাম দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইসি গঠন সংক্রান্ত সার্চ কমিটির সঙ্গে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে তৃতীয় দফা বৈঠক শেষে কমিটিকে সাচিবিক সহায়তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ব্রিফকালে একথা জানান।তিনি বলেন, যে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এখনো সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করেনি সে সকল দলকে আগামীকাল সোমবার ৫টার মধ্যে নাম দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাব এসেছে। যে সকল দল নাম প্রস্তাব করেনি, তাদের ফের অনুরোধ জানানোর জন্য বিশিষ্ট নাগরিক ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠককালে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কমিটি এরপর ফের নাম চেয়ে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন সংক্রান্ত সার্চ কমিটির কাছে ৩২৯ টি নামের প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে ১৩৬ নাম, পেশাজীবীদের কাছ থেকে ৪০ নাম, ব্যক্তিপর্যায় থেকে ৩৪ নাম, মতামত দেয়াকালে ২০ এবং বিভিন্ন ইমেইলের মাধ্যমে ৯৯ নাম। তিনি বলেন, এমনও হতে পারে একই নাম চার পাঁচ বারও রয়েছে। কমিটি বসে এগুলো সর্টআউট করবে। এসব নাম কাল সোমবার বিকেলে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে চারটায় সার্চ কমিটির পরবর্তী বৈঠক হবে।
আজ বিকেল সোয়া ৪ টা থকে তিন ঘন্টা দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নেয়ার অংশ হিসেবে তৃতীয় বৈঠক করেন ইসি গঠন সংক্রান্ত সার্চ কমিটি। সুপ্রিমকোর্টের কনফারেন্স রুমে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
সার্চ কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বৈঠকে সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সার্চ কমিটির সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।গতকাল বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে সার্চ কমিটির দুইটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুইদিেিন পৃথক তিনটি বৈঠকে মোট ৪৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নেন। বৈঠক থেকে বের হয়ে বিশিষ্ট নাগরিকগন গনমাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা আগামী ইসি যেন গ্রহণযোগ্য হয় এই বিষয়ে তাদের স্ব স্ব মতামত দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ঠিকানায় গত বুধবার চিঠি দিয়ে নাম দেয়ার অনুরোধ করে সার্চ কমিটি। চিঠিতে প্রতিটি দলকে শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে অনধিক ১০ জনের নাম (প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি) পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনে দলগুলোর যে কার্যালয়ের ঠিকানা দেয়া আছে, সে ঠিকানায় ওই চিঠি দেয়া হয়।প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেয়ার জন্য নাম সুপারিশ করতে সার্চ কমিটি গঠন করে শনিবার ৫ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেয়ার জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হলো। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনীত করার পর রাষ্ট্রপতি তা চূড়ান্ত করেন। তবে এবার নতুন আইনানুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হলো।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুমোদন দেয়া হয়। গত ২৭ জানুয়ারি বিলটি জাতীয় সংসদে পাসের পর ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আইনটিতে সম্মতি দেন। ৩০ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। আইনানুযায়ী, আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। সে অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য, আইনে বলা হয়েছে, আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই পাঁচজনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।

Advertisement