নীরব ঝড় বইছে সিলেটের বিএনপি নেতাদের মধ্যে

ব্রিট বাংলা ডেস্ক  :: সিনিয়ররা আসেননি নেতৃত্বে। অনুরোধ সত্ত্বেও অনেক নেতাই মুখ ফিরিয়ে নেন। এই সময়ে হাল ধরতে ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে রাজি হননি তারা। ফলে কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যে তালিকা প্রদান করা হয়েছিল, সেই তালিকার সূত্র ধরে গঠিত হয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি। এই কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনো কথা বলছেন না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে বাষ্প দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার ঝড় বইছে। তবে-কমিটি যে বিতর্কমুক্ত হতে পারেনি সেটি গতকালই প্রকাশ পেয়েছে।

কারণ- কমিটিতে অনেকেই রয়েছেন যারা বিগত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেছেন। এসব ছবিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নেতার অভাব নেই সিলেট বিএনপিতে। একেক গ্রুপ একেকটি ইউনিটের সমান। এরপরও দীর্ঘদিন আন্দোলনে থাকার কারণে এখন সিলেট বিএনপির সব ক্ষেত্রেই দৈন্যদশা। ত্যাগীরা আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে মামলার ভারে ন্যুজ্ব হয়ে পড়েছেন। মামলার গ্লানি টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়া নেতারা নীরব হয়ে পড়েছেন। সঠিক মূল্যায়নের অভাবে অনেকেই হয়ে পড়েছেন কোণঠাসা।

কেউ মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন প্রবাসে। এই অবস্থায় কয়েক মাসের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সিলেট জেলা বিএনপি’র কমিটি ভেঙে নতুন করে সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি। কিন্তু এই কমিটি প্রকাশিত হওয়ার পর নীরব ঝড় বইছে নেতাদের মধ্যে। তবে- সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক কমিটির নেতারা জানিয়েছেন- যোগ্য আহ্বায়কের খোঁজ তারা করেছিলেন। এ কারণে তারা ছুটে গিয়েছিলেন বিএনপি’র সিনিয়র নেতা এমএ হক, নুরুল হকের কাছে। যোগাযোগ করেছিলেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনার সঙ্গেও। কিন্তু অসুস্থতা সহ নানা অজুহাতে তারা রাজি হননি। এরপর কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে তালিকা পাঠানো হয়। এই তালিকায় সাবেক কমিটির বেশির ভাগ নেতাকর্মী রয়েছেন। আহ্বায়কের তালিকায় আরো কয়েকজনের নাম উচ্চারিত হলে সেটিকে আমলে নেয়া হয়নি। এদিকে- বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির দুই সদস্যকে নিয়ে এরই মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কমিটিতে বিগত বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করা আহমেদুর রহমান চৌধুরী মিলু ও ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকীর নাম আসায় বিতর্ক দেখা দিয়েছে বিএনপি’র ভেতরেও। অভিযোগ ওঠে- গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আশফাক আহমদের নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চান বিএনপিতে পদ পাওয়া মিলু। এর প্রেক্ষিতে সিলেট জেলা বিএনপি তাকে শোকজও করেছিল।

অপরদিকে ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আশফাকের পক্ষে নগরীর মেজরটিলার আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব মিয়ার বাড়িতে বক্তব্য দেন ইশতিয়াক সিদ্দিকী। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন- এ কমিটিতে ত্যাগীরা স্থান পায়নি। ত্যাগ স্বীকার করার পরও দু’জন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানকে রাখা হয়নি। এমপি প্রার্থী হয়েছিলে অনেকেই। তাদেরও রাখা হয়নি। এই কমিটি দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি লিমিটেড কোম্পানি। ঘুরে-ফিরে একই মুখ। অথচ ত্যাগীদের স্থান দিলে তারা কিছুটা মূল্যায়িত হতেন বলে জানান তিনি। এদিকে- আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন- যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে সিনিয়র-জুনিয়রটি মেইনটেইন করা হয়নি। কে কোথা থেকে এসে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছে সেটির হিসেব মিলছে না। অনেকেই ছাত্রদল থেকে সরাসরি তালিকায় এসে গেছে। এ কারণে এই আহ্বায়ক কমিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন- এখন বিএনপি’র সুদিন নয়। এ কারণে দলের স্বার্থে মুখ বন্ধ করে আছেন সবাই। এখন নতুন আহ্বায়ক কমিটির উচিত সবার সহযোগিতা নিয়ে আগামীর পথচলা। নিজের নয়, সংগঠনের স্বার্থে কাজ করা। এদিকে- আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও ঢাকায় অবস্থান করছেন নতুন আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। তিনি সিলেটে ফিরেই কমিটি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। এরপর সম্মেলন ও কাউন্সিলের রূপরেখা তৈরি করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।

উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র অভিনন্দন: নবগঠিত সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সকল নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সিলেট জেলার আওতাধীন সকল উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। যোগ্য ও ত্যাগীদের সমন্বয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সিলেটের উপজেলা ও পৌর নেতৃবৃন্দ বলেন, তারেক রহমানের নির্দেশনায় জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এই কমিটির সমন্বয়ে জেলা বিএনপি ও সকল উপজেলা পৌর বিএনপি’র কার্যক্রম গতিশীল হবে। একই সঙ্গে এই কমিটির নেতৃত্বে একটি সার্থক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। বিবৃতি প্রদান করেন, সিলেট সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি আফরোজ মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সভাপতি হাজী শাহাব উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুজ্জামান খান ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মুজিব, বিশ্বনাথ উপজেলা সভাপতি জালাল উদ্দিন চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া চেয়ারম্যান, ওসমানীনগর উপজেলা সভাপতি সৈয়দ মোতাহির আলী ও সাধারণ সম্পাদক তাজ মো. ফখর উদ্দিন, বিয়ানীবাজার উপজেলা সভাপতি নজমুল হোসেন পুতুল ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক আহমদ, জৈন্তাপুর উপজেলা সভাপতি এনায়েত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাফিজ, গোয়াইনঘাট উপজেলা সভাপতি ওসমান গনি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সভাপতি সুফিয়ানুল করিম চৌধুরী চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমদ নিহার, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. আবদুল গফুর ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ফয়সল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি হাজী শাহাব উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর, জকিগঞ্জ উপজেলা সভাপতি হেলাল আহমদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, কানাইঘাট উপজেলা সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফরিদ আহমদ, বিয়ানীবাজার পৌর সভাপতি আবু নাসের পিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রুমেল, জকিগঞ্জ পৌর সভাপতি আবদুল জলিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুুুুস শাকুর এবং কানাইঘাট পৌর সভাপতি শরীফুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ডিপজল প্রমুখ।

Advertisement