নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলার নারী দল

সাফের ইতিহাসে নতুন এক ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। আজ নেপালের দশরথ রঙ্গশালায় অনুষ্ঠিত সাফ ওমেন চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে কৃষ্ণার জোড়া গোলে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ৫টি আসরের সব কটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। তবে এবারের আসরের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে ভারতকে। ফলে আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে সাফ। আর সেই শিরোপাটি নিজের করে নিল সাবিনা-কৃষ্ণারা।বাংলাদেশের হয়ে দুটি গোল করেনছেন কৃষ্ণা রানি সরকার। আর ১টি গোল করেন শামসুন্নাহার। নেপালের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন আনিতা বাসেত।১৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দশরথের গ্যালারি ছিল কাণায় কাণায় পূর্ণ। বলার অপেক্ষা রাখে না, নেপালি সমর্থকদের আধিপত্য ছিল। নেপালে থাকা ফুটবলপাগল বাংলাদেশিরা সংখ্যায় অল্প হলেও এসেছিলেন সাবিনা-কৃষ্ণাদের জন্য গলা ফাটাতে।

ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে ভারী বৃষ্টিতে মাঠ হয়ে যায় কর্দমাক্ত, ভারী। ফলে দুদলেরই সমস্যা হয় বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে।প্রথম মিনিটে আক্রমণ শাণিয়ে নেপালকে ভড়কে দেয় বাংলাদেশ। মারিয়া মান্দার বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শট গোলরক্ষক আটকালেও পুরোপুরি গ্লাভসে জমাতে পারেননি। আলগা বলে স্বপ্নার শটেও কর্নারের বিনিময়ে ফেরান আঞ্জিলা থুম্বাপো সুব্বো। এরপরই পাল্টা আক্রমণে ওঠা নেপালের প্রচেষ্টা অনেকটা লাফিয়ে গ্লাভসে নেন রুপনা চাকমা।৯ম মিনিটে শরীর ঘুরিয়ে মারিয়ার জোরালো ক্রসে বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান কৃষ্ণা; এই ফরোয়ার্ডের শট সরাসরি যায় গোলরক্ষকের গ্লাভসে।ডান পায়ের চোট থাকায় স্বপ্নার খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু দশম মিনিটে খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছাড়েন স্বপ্না; বদলি নামেন শামসুন্নাহার জুনিয়র।

স্বপ্নাকে হারানোর এই শঙ্কার কালো মেঘ ১৪ মিনিটে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে ডানা মেলেন শামসুন্নাহার। সানজিদা খাতুনের শট এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে পেয়ে যান মনিকা। একজনকে কাটিয়ে বাইলাইনের একটু উপর থেকে তিনি ক্রস বাড়ালেন বক্সে, শামসুন্নাহারের দুরন্ত ফ্লিকে জাল খুঁজে পায়। টুর্নামেন্টে নেপালের জালে এটাই প্রথম গোল।একটু পর মারিয়ার কোনাকুনি শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে নেপাল। মাঝমাঠে মারিয়া-মনিকার নিয়ন্ত্রণে একটু টান পড়ে; ফলে বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ দিতে থাকে স্বাগতিকরা। কিন্তু পোস্টের নিচে রুপনা ছিলেন দারুণ ক্ষিপ্র, বিশ্বস্ত। ২৩তম মিনিটে অনিতার শট প্রথম দফায় আটকে দ্বিতীয় দফায় গ্লাভসে নেন তিনি।এর মধ্যেও সুযোগ পেলেই বক্সের বাইরে থেকে চেষ্টা করছিলেন মারিয়া। ২৭তম মিনিটে এই মিডফিল্ডারের একই চেষ্টা আটকান সুব্বো। এরপর অনিতা কেসির শট প্রতিহত করেন রুপনা।৩৪তম মিনিটে আবারও রুপনার ঝলক। বক্সের বাইরে অনিতার ছোট ফ্রি কিকে দিপা সাশির শট ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক। এই কর্নার থেকে ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ। গোললাইন থেকে বিপদমুক্ত করেন ডিফেন্ডাররা।

৪১তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের ভুলে বল পেয়ে অধিনায়ক সাবিনা পাস বাড়ান কৃষ্ণার উদ্দেশে। প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একটু এগিয়ে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড।দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে অনিতা কেসিকে তুলে দলের তারকা ফরোয়ার্ড সাবিত্রা ভান্ডারিকে নামান নেপাল কোচ। একটু পরই রুপনার দৃঢ়তা আর পোস্টের বাধায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ।৫১তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ নষ্ট হয় নেপালের; ডান দিক থেকে রাশ্মিকা ঘিসিংয়ের ক্রসে অনিকা বাসনেতের হেড যায় পোস্টের বাইরে। সারাক্ষণ ‘নেপাল নেপাল’ শ্লোগানে গ্যালারি মাতিয়ে রাখা সমর্থকদের চুপসে যায়।৬২তম মিনিটে গোলমুখের সামনে শামসুন্নাহার জুনিয়র বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে হয়তো ম্যাচের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। তার ব্যর্থতায় এগিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে বল নিয়ন্ত্রণে নেন নেপাল গোলরক্ষক।৭০তম মিনিটে ঘুরে দাঁড়ানো গোল পায় নেপাল। বক্সের ভেতরে ফাঁকায় বল পেয়ে জোরাল কোনাকুণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন বাসনেত। রুপনা ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি। টুর্নামেন্টে এই প্রথম গোল হজম করল বাংলাদেশ।দুই মিনিট পর বক্সের বাইরে এসে কর্নারের বিনিময়ে বল ক্লিয়ার করেন রুপনা।প্রতি আক্রমণ থেকে ৭৭ তম মিনিটের গোলে নেপালকে কোণঠাসা করে ফেলে বাংলাদেশ। সতীর্থের থ্রু পাস ধরে ঠাণ্ডা মাথায় নেপাল গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়া দূরের পোস্টে বল পাঠিয়ে উল্লাসে মাতেন কৃষ্ণা।

Advertisement