নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু আর নেই

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের অবসানের পথিকৃৎ আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯০। নেলসন ম্যান্ডেলা ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের যে ক’জন বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছেন, টুটু তাদের একজন। আর এ জন্যই ১৯৮৪ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।ঠিক যে সময় নেলসন ম্যান্ডেলা কারাবন্দী, সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন ২৭ বছরের তরুণ ডেসমন্ড টুটু। তখন থেকেই শান্তির পথে তার যুদ্ধের শুরু।মাত্র পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা, হাসিমুখের মানুষ ছিলেন টুটু, ছিলেন একজন নৈতিক অবতার। দীর্ঘদিন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাওয়ায় ১৯৮৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন ডেসমন্ড। এরপরেই বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তার।পুরো আশির দশকই অক্লান্তভাবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। বৈশ্বিক মঞ্চে কাজ করেছেন মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও। ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল থেকে শুরু করে সমকামীদের অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও কাজ করেছেন টুটু।নোবেল জয়ের দুই বছরের মাথায় ১৯৮৬ সালে তার দ্বিতীয় অর্জন। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের একটি চার্চে আর্চবিশপের পদ লাভ করেন ডেসমন্ড।এর ঠিক চার বছর পরে কারাগার থেকে মুক্তি পান নেলসন ম্যান্ডেলা। কারামুক্তির পরেই ডেসমন্ডের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ট্রুথ অ্যান্ড রিকন্সিলিয়েশন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেন ম্যান্ডেলা, সালটা তখন ১৯৯৪। এই ট্রুথ কমিশন মূলত, বর্ণবাদের সময় আফ্রিকায় সংগঠিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলোর তদন্ত করত।এর মাঝেই ১৯৯০ এর দশকের শেষভাগে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন টুটু। এরপর থেকেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।২০১০ সালের ৭ অক্টোবর ৭৯তম জন্মদিনে অবসরে যান টুটু।সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এ সংবাদ সম্মেলনে টুটু বলেছিলেন, “এবার থামার সময় হয়েছে।কারণ তিনি মনে করেন সময় চলে যাচ্ছে। ফলে শেষ জীবনে পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানো উচিৎ।অবসর কাটানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে টুটু বলেছিলেন, বিকালে স্ত্রীর সঙ্গে চা পান করে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে এবং ক্রিকেট ম্যাচ দেখে তিনি ভবিষ্যতের দিনগুলো অতিবাহিত করবেন।

টুটুর পুরো নাম ডেসমন্ড এমপিলো টুটু। তিনি ১৯৩১ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেন্সবার্গের পশ্চিমে ক্লার্কসডর্প শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন পেশায় শিক্ষক। টুটু নিজেও যুবক বয়সে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। তবে ১৯৫৭ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জোহানেসবার্গের সেন্ট পিটারস থিওলজিক্যাল কলেজে অধ্যয়ন করে চার্চে যোগদানের।এরপর ১৯৬১ সালে যাজক নিযুক্ত হন এবং লন্ডনের কিংস কলেজে তার শিক্ষা চালিয়ে যান। এরপরেই নেলসন ম্যান্ডেলার মতাদর্শে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল।রোববার সকালে জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের ওসিস ফ্রেইল কেয়ার সেন্টারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডেসমন্ড টুটু। তার মৃত্যুতে শোকাহত পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা।দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের জাতির সাহসিকতার একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটল, যার কারণে আমাদের এই প্রজন্ম স্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে।

Advertisement