পাকিস্তান পিডিএমে বিভক্তি, নওয়াজ ফিরলে তবেই পদত্যাগ

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: জাতীয় পরিষদ হিসেবে পরিচিত পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ ইস্যুতে সর্বদলীয় বিরোধী দল পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টে (পিডিএম) চরম বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পূর্বনির্ধারিত লং মার্চ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে পিডিএম। এতদিন একসঙ্গে আন্দোলন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পদত্যাগ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। দলটির সহসভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বলেছেন, তিনি পদত্যাগে প্রস্তুত। তবে তার আগে লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে দেশে ফিরতে হবে। এ ছাড়া আরো অনেক ইস্যুতে মারাত্মক মতবিরোধ দেখা দিয়েছে পিডিএমে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। এতে বলা হয়, মঙ্গলবার পিডিএমের প্রেসিডেন্ট মাওলানা ফজলুর রেহমানের সভাপতিত্বে পিডিএমের বৈঠক হয়েছে।

এমপিদের গণপদত্যাগ, সিনেট নির্বাচন এবং পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে বিরোধী দল থেকে কাকে মনোনীত করা হবে- এসব নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় এতে। এরপর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। এতে যোগ দিয়েছিলেন সংসদীয় দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সবাই। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) কায়েদে নওয়াজ শরীফ, পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, সহসভাপতি আসিফ আলি জারদারি, বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির সিনেটর ড. জেহানজেব জামালদিনি এতে যোগ দেন ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগের কথা সরাসরি প্রত্যাখ্যাপন করেছে পিপিপি। অন্যদিকে মাওলানা ফজলুর রেহমান সিনেট উপচেয়ারম্যান পদে মাওলানা আবদুল গফুর হায়দারির পরাজয়ের জবাব চান। বৈঠকে তীব্র উত্তেজনা শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে মাওলানা ফজল বলেন, পূর্বনির্ধারিত ২৬ শে মার্চের লংমার্চ স্থগিত করা হয়েছে। যতক্ষণ পিপিপি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের বিষয়ে সিন্ধান্তে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। তিনি বলেন, লং মার্চ সহ গণপদত্যাগের বিষয়ে নয়টি দল একমত হয়েছে। কিন্তু পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে খুঁতখুঁতনি আছে পিপিপির।

মাওলানা ফজলের মতে, পিপিপির নেতৃত্ব দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য সময় চেয়েছে। তারপর তারা পিডিএম’কে অবহিত করতে চেয়েছে। আমরা তাদেরকে সুযোগ দিয়েছি। কি সিদ্ধান্ত নেয় তারা আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছি। এ জন্য আগামী ২৬ শে মার্চ পূর্ব নির্ধারিত লংমার্চ স্থগিত করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত এ ঘোষণা দিয়ে দ্রুত সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করেন মাওলানা ফজল। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের আর কোনো প্রশ্ন নেননি। তবে সেখানে অবস্থান করছিলেন পিএমএলএনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ, পিপিপির সিনিয়র নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। মরিয়ম নওয়াজ বলেন, পিপিপি ফিরে এসে সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত কি হতে যাচ্ছে আমি আন্দাজ করতে পারছি না। পিডিএমের অংশীদাররা একত্রিত আছে। প্রকৃত অর্থেই তারা এক আছে। একে অন্যকে সহযোগিতা করে যাবে। ইউসুফ রাজা গিলানি বলেন, যেহেতু লংমার্চ পদত্যাগের একটি শর্ত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো এবং আমি পিডিএমের পুরো নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছি, আমাদেরকে কিছুটা সময় দেয়া হোক। কারণ, পিপিপির কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠকে পদত্যাগের পক্ষে সিদ্ধান্ত আসেনি। যদি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করতে চান তাহলে আমাদেরকে সময় দিন। যাতে আমরা ফিরে গিয়ে সদস্যদের অনুমতি নিয়ে তা জানাতে পারি। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

তবে পিতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ কবে দেশে ফিরছেন তা নিয়ে কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েন মরিয়ম নওয়াজ। পিডিএমের বৈঠকে নওয়াজের দেশে ফেরাকে শর্ত হিসেবে ব্যবহার করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। মরিয়ম বলেন, আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদেরকে বলেছি, নওয়াজ শরীফ দেশে ফিরলে তাকে খুনিদের হাতে তুলে দেয়া হবে। তার জীবনকে এমন বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চান না পিএমএলএন নেতারা ও ভোটাররা। আমাদের নেতার বেঁচে থাকা প্রয়োজন। নেতাদের মৃতদেহ চাই না। তাই আমি জারদারিকে বলেছি, নওয়াজ শরীফের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ কারো কাছে অজানা নয়। মরিয়ম দাবি করেন, তার পিতাকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

Advertisement