পোশাকে সাদা–কালো

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: সাদা পোশাকে কালো ব্যাজ পরে প্রভাত ফেরিতে যাওয়া, এভাবেই একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণ করা শুরু। এরপর সাদার সঙ্গে কালো রং চলে এল পোশাকে। সাদা–কালো রংই এখন হয়ে গেছে একুশের চেতনা ধারণ আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্​যাপনের অনুষঙ্গ। লিখেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার তাহসীনা শাহীন

ফেব্রুয়ারির রংই যেন সাদাকালো। পোশাক: আনোখী বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম জাতিরাষ্ট্র, যে রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য। সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখল মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য কীভাবে মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিতে পারে। জন্ম নিল আমাদের নতুন অধ্যায়।
২৩ ফেব্রুয়াির তৈরি হলো প্রথম শহীদ মিনার। জাতি–ধর্ম-পেশা-শ্রেণিনির্বিশেষে মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার স্পর্ধিত সাহস ও বিসর্জনের বেদনায় শোকে অবনত হওয়া শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পুষ্পিত হতে থাকল এই শহীদ মিনারের ভিত্তিমূল।
সেই সময়ে সাদা পোশাক পরারই চল ছিল। তবু এই একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটায় সাদা পোশাক যেন শুভ্র শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে এল। আর তার ওপর ধারণ করতে হবে কালো ব্যাজ—ভাই হারানোর শোকে। হাতে বর্ণিল ফুল, পরনে শুভ্র পোশাকের ওপর শোকের কালো রং। শুরু হলো আমাদের সাদা–কালো পোশাকে একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণ।
শোক ও গর্ব দুটির প্রকাশ যেন কালো কামিজে। পোশাক: অনীকিনী  সেই থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালিরা প্রভাতফেরিতে অংশ নেয়, শহীদ মিনারে যাত্রা করে শুভ্র পোশাকের ওপর শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে। আজ ৬৭ বছর পরে সেই কালো শোকের চিহ্নটি কালের বিবর্তনে পোশাকেই যুক্ত হয়ে গেছে। এই সময়ে এসে একুশে ফেব্রুয়ারিতে সাদা–কালো পোশাক পরার চল তৈরি হয়েছে। তবে এও উল্লেখ করতে হয়, এদিনের পোশাক কেবলই সাদা–কালো হয় তা নয়, এর নকশায় জড়িয়ে থাকে একুশের চেতনার তাৎপর্য এবং যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য।
একুশের চেতনা মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমিকে ভালোবাসার চেতনা। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা–সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কালো শাড়িতে বর্ণমালাএকুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণাটি আরও একটি নতুন মাত্রা যোগ করে দিল দিবসটি ঘিরে। আমরা আরও আরও আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটিকে উদ্​যাপন করতে শুরু করলাম। তার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বেশির ভাগ বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোতে বিদ্যালয়ের পোশাকের ওপর কালো ব্যাজ পরে একুশের অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করা হয়, যদিও সেখানে অনেকে ছেলেমেয়েই সাদা–কালো শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে। ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোতেও একই ধারা এখন চলছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই চিঠি দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাদা–কালো পোশাক পরে একুশের অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা জানিয়ে দেয়। এ ছাড়া একুশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাদা–কালো পোশাক পরা যেন একটি অলিখিত রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাদা শাড়িতে সাদা নকশা। শাড়ি: সাদাকালো সাদা ও কালো রং দুটি যেন মিশে গেছে একুশের ভাবগাম্ভীর্য এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্​যাপনে। মানুষের একুশের চেতনা ধারণের মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে সারা দেশেই ছোট–বড় প্রতিটি পোশাক বিপণনকেন্দ্র ফেব্রুয়ারি মাসে সাদা–কালো পোশাক প্রদর্শন করে থাকে। দেশের বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলো এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। স্বনামধন্য পোশাক ডিজাইনাররা একুশের চেতনাকে বুকে ধারণ করে প্রতিবছরই নিয়ে আসে নতুন নতুন নকশা-ভাবনা।
একুশের চেতনা স্বদেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসার চেতনা। একুশের চেতনা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চেতনা। তাই একুশের গান-কবিতার মতো পোশাক ডিজাইনারদের নকশা-ভাবনার মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে কখনো বর্ণমালা, কখনো একুশের গান-কবিতা, কখনো শহীদ মিনার, কখনোবা শহীদ মিনারে আঁকা আলপনার ধরন।

Advertisement