প্যারিসে বাংলাদেশি ফাওয়াজ রবের একক প্রদর্শনী ‘ঢাকা, আই লাভ ইউ’

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মোমার্ত গ্যালারির আয়োজনে সম্প্রতি প্রদর্শিত হল বাংলাদেশি শিল্পী ফাওয়াজ রবের একক প্রদর্শনী ‘ঢাকা, আই লাভ ইউ’। প্রদর্শনীর ছবিগুলো এর আগে ফরাসি পত্রিকা ‘লা পারিজিও’তে প্রকাশিত হয়। ফাওয়াজ ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি স্থাপত্য বিষয়ে এচিং ও অ্যাকুয়াটিন্টের (এক ধরনের প্রিন্ট মেকিং) কাজের মাধ্যমে সারাবিশ্বের সামনে কাকে ইতিবাচকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
স্থাপত্য ও নকশা বিভাগে কাজ করলেও ফাওয়াজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য একজন শিল্পী। তাঁর কাজ ইতিমধ্যেই নেপাল, ভারত, ইতালি, ক্রোয়েশিয়া ও ফ্রান্সে প্রদর্শিত হয়েছে। তার শিল্পকর্মে নগরায়ণে তিনি তার অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করেছেন ঢাকার স্বপ্নের আবহ তৈরিতে।
বিশ্বের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ যেখানে নেতিবাচকভাবেই উঠে এসেছে ফাওয়াজ তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে চেষ্টা করছেন এক্ষেত্রে একটি ভিন্নধারা তৈরিতে। ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় অবাসযোগ্য শহর সম্প্রতি এ ঘোষণার প্রতিবাদস্বরূপ ফাওয়াজ এ শহরের জীবনযাত্রা ও স্থাপত্য ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর প্রিন্টমেকিং- এর মাধ্যমে। তাঁর শিল্পকর্মে নির্মাণশিল্প, যানবাহন ও কাকসহ ঢাকার অন্যান্য বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তাঁর শিল্পকর্মের পটভূমিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উঠে এসেছে নানা ফর্ম, আঁকার, এর বৈপরীত্য ও গভীরতা। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশি হ্যান্ডমেড পেপারে এচিং ও অ্যাকুয়াটিন্টের  শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে।
এ প্রদর্শনী নিয়ে শিল্পী ফাওয়াজ বলেন, ‘ঢাকা শহরকে নিয়ে গর্ব করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। এটা শুধুমাত্র পুরানো ঢাকার স্থাপত্যই নয়; এখানে বিশকোটি মানুষের ধর্ম ও সামাজিক শ্রেণি অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে  সহাবস্থান করছে। আমি বিশ্বাস করি, যখন কেউ শুধুমাত্র পরিসংখ্যান দিয়ে একটি শহরকে পরিমাপ করে তখন এর অনেক কথা, অনেক গল্পই হারিয়ে যায়। আমরা সাধারণভাবে আমাদের যানজট নিয়ে কথা বলি। কিন্তু, চারশ’ বছরের এ শহরে এর বাইরেও লুক্কায়িত অনেককিছু রয়েছে। মুঘল, ব্রিটিশ, ফরাসি এমনকি আর্মেনিয়ানরাও এ শহরে তাদের নিজস্ব স্থাপত্যের নিদর্শন রেখে গিয়েছেন।
এর বাইরেও ঢাকা শতাধিক মসজিদ, মন্দির ও গির্জার শহর। আমাদের এখানে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম স্থাপত্যকর্ম লুই আই কানের নকশাকৃত সংসদ ভবন রয়েছে। স্থাপত্যকর্মের বাইরে, এখানকার মানুষের জীবনের প্রতিদিনকার অসম্ভব সুন্দর সব গল্প রয়েছে।
ফ্রান্সের বেশিরভাগ মানুষই ঢাকার জীবন ও স্থাপত্য নিয়ে জানেন না। এ প্রদর্শনী তাদের সুযোগ করে দিচ্ছে এ শহরের অজ্ঞাত এসব গল্প জানতে। আমাদের এখানে ফরাসি দেশের নামানুকরণে ফরাশগঞ্জ রয়েছে এটা জেনে তারা বিস্মিত। কয়েক শ’ বছর আগে এ অঞ্চলে ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে এবং মশলা ব্যবসা তার গতিপরিবর্তনের আগে সহস্রাধিক ফরাসি মশলা ব্যবসায়ী ঢাকায় বাস করতো। এখানে অনেক ভবন রয়েছে যা ফরাসি গথিক নকশা এখনও তার শরীরে বহন করে বেড়াচ্ছে।
ফাওয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের সান ফান্সিসকো থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন আর স্নাতকোত্তর করেছেন ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে। ঢাকায় শিক্ষকতা শুরুর আগে তিনি লস অ্যাঞ্জেলস, সান ফ্রান্সিসকো, বার্সেলোনা, রোম ও বার্লিন শহরে কাজ করেছেন।
Advertisement