প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে ইতালি?

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিপর্যস্ত বিশ্ব-অর্থনীতি। সেই তালিকা থেকে বাদ নেই ইতালিও। জ্বালানিমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেসামাল দেশটির নাগরিক জীবন।চলমান এ বাস্তবতার মাঝেই দেশটিতে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনে উন্মুখ ইতালিরা।পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে দূর-দূরান্ত থেকে নিজস্ব ভোট এলাকায় আগে থেকেই হাজির হচ্ছেন ভোটাররা। নির্বাচনের দৌড়ে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা প্রধানত মধ্য-ডান ও মধ্য-বামপন্থি।তবে নির্বাচনি জরিপে এগিয়ে রয়েছেন ডানপন্থি ব্রাদার্স অব ইতালির নেতা জর্জিয়া মেলোনি। জরিপ অনুযায়ী ডানপন্থিরা যদি বামপন্থিদের হারাতে পারে, তবে নিশ্চিতভাবেই ইতালির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মেলোনি। আর সেই সঙ্গে এই প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে ইউরোপের দেশটি। ইউরোনিউজ, এএফপি।জনমত জরিপে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনে বেশি ভোট পাবে ব্রাদার্স অব ইতালি। দলটি একটি ডানপন্থি ব্লকের নেতৃত্ব দেয়-যার মধ্যে মাত্তেও সালভিনি এবং বার্লুসকোনির দলও রয়েছে। জরিপে তারাও সম্ভাব্য বিজয়ীর তালিকায় রয়েছে।

সেই নিরিখে মাত্তেও সালভিনির লিগ এবং সিলভিও বার্লুসকোনির ফোরজা ইতালিয়াকে নিয়ে ডানপন্থি সরকার গঠন করতে পারে তার দল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত ইতালিতে ৬৭টি সরকার এসেছে। আর সম্ভাব্যভাবে এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মহিলা নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে দেশটি।ইউরোনিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মেলোনি বলেন, ‘অবশ্যই এটি হবে একটি মাইলফলক। শুধু ইতালিতে নয়, পশ্চিমা সমাজে নারীদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক ভূমিকা পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। এ কারণে আমি এটিকে টিকে ‘গ্লাস সিলিং’ ভাঙা বলতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার দেশে প্রথম এই অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা পারাটা আমার জন্য হবে সম্মানের।প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কারা : এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন-মধ্য-ডানপন্থি লিগার মাত্তেও সালভেনি, ফাইভস্টার মুভমেন্টের গুসেপ্পি কন্তে, মধ্য-বামপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টির এনরিকো লেট্টা, মধ্য-ডানপন্থি ফোরজা ইতালিয়ার সিলভিও বার্লুসকোনি, মধ্য-বামপন্থি সিভিক কমিটমেন্টের লুইজি ডি মালো, অ্যাকশন ইতালিয়া ভিভার কার্লো ক্যালেন্ডা, মধ্য-ডানপন্থি ব্রাদার্স অব ইতালির জর্জিয়া মেলোনি, মধ্য-ডানপন্থি ইউএস মডারেটস-এর মরিজিও লুপি, মধ্য-বামপন্থি গ্রিনস অ্যান্ড লেফট অ্যালায়েন্সের অ্যাঞ্জেলো বনেলি প্রমুখ।

কে এই জর্জিয়া মেলোনি : জন্মগতভাবে রোমান ক্যাথলিক মেলোনি বেড়ে উঠেছেন মায়ের সঙ্গে। তারুণ্যের সময় থেকেই তিনি গভীরভাবে এমনকি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জাতীয় রক্ষণশীল। বেড়ে উঠেছেন রোমের বামপন্থি ঐতিহ্যের শ্রমজীবীপাড়া বলে খ্যাত গারবাটেল্লায়।১৯৯২ সালে একটি সতেজ মুখের মেলোনি ১৫ বছর বয়সে অধুনালুপ্ত জাতীয়তাবাদী সোশ্যাল ইতালীয় আন্দোলনে (মুভিমেন্টো সোশ্যাল ইতালিয়ানো, এমএসআই) যোগ দেন এবং বছরের পর বছর আবেগপ্রবণ কার্যকলাপ প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজস্ব রাজনৈতিক অঙ্গন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে এমএসআই-এর পরোক্ষ উত্তরাধিকারী হিসাবে জন্ম হয়েছিল ব্রাদার্স অব ইতালির। মেলোনি অল্প সময়ের মধ্যেই এর প্রেসিডেন্ট হন এবং এটিকে ডানপন্থি ব্লকের সবচেয়ে বড় শক্তিতে রূপান্তরিত করেন।ইউরোপে মেলোনির অবস্থান : মেলোনি এবং তার জোট সহকর্মী নর্দান লিগের সালভিনিকে প্রায়ই ইউরোপের বিদ্রোহী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তারা ইউরোর সমালোচনা করেছেন, ব্রিটেনের প্রো-ব্রেক্সিট টোরির সমর্থক।এমনকি আরও কয়েকটি নীতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ব্লকটি। তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বামনেতা লেটা অভিযোগ করেছেন, ইইউ ভেঙে ফেলার প্রথম সত্যিকার প্রচেষ্টার অংশ ছিলেন মেলোনি।

Advertisement