ফিরে দেখা ঈদ এবং গাইল ছিয়া…

।। মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম রাজু ।।

ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ…
দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনা শেষে আসে খুশির ঈদ।
এ এক মহা আনন্দের দিন। বেশ আগে থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে স্বাধ আর সাধ্যানুযায়ী চলে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি।
যথাক্রমে নতুন জামা কাপড় কেনাকাটা আরও অনেক কিছু।
এর পাশাপাশি ঈদের সময়ে বিভিন্ন রকম পিঠাপুলি তৈরি করা, নিজে খাওয়া এবং একে অপরকে উপহার দেওয়া, ঘরে ঘরে পিঠা খাওয়ার দাওয়াতের রীতি সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে।

এসব পিঠা বানানো হয়ে থাকে আতপ চালের গুড়ি দিয়ে, আগের দিন যার যার প্রয়োজন মোতাবেক চাল জলে ভিজিয়ে রাখা হল। পরের দিন শুরু হল গুড়ি কুটার কাজ, আর তা করা হয় কাঠের তৈরি গাইল ও ছিয়া’দ্বারা, আঞ্চল বেধে অনেকে আবার ছিহাটও বলেন।
পরের মাথা নাগেস্বরের ছিয়া, আমাদের এলাকার একটা প্রবাদ।

এই যন্ত্রগুলি কম বেশি সব ঘরে এবং স্বযত্নেই ছিল, সব সময়েই এদিকে খেয়াল থাকতো। যাকগে এক ঘরের গাইল ছিয়া আরেক ঘরে আসতো, গুড়ি কুটার কাজটি করতেন মহিলারা, গাইল ছিয়ার পাশাপাশি নিজেরাও আসতেন, পড়লো গুড়ি কুটার ধুম আর গাইল ছিয়া উঠা নামার শব্দ।
খুবি কষ্ট সাধ্য এই কাজ, হাতের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়,তবুও তারা হাঁসি মুখেই করে চলেছে,এই ঘরেরটা শেষ হলে ঐঘরে, যেন না আছে ক্লান্তি না হয়রানি।

এর পর শুরু হল পিঠা তৈরির কাজ। প্রতিটি রান্না ঘর থেকে সন্দেশ পিঠার সুগ্রাণ আসছে, সাথে আরও অনেক কিছু। বাচ্চারা তো মেশিনটা চালিয়ে দিলো সাথে সাথেই, আর তাদের মাধ্যমেই থালা ভরে পাঠানো শুরু হল ঘরে ঘরে, আবার দেখা যায় যে সেই থালা ভরে ঐঘর থেকেও এসেছে, অথবা ঐঘরের পিচ্চিটা নিয়ে এসেছে, শেষ রোজার ইফতারও এগুলিই।  কেমন আনন্দ আর কি যে মজা এসব পিঠা,
আলাদা সুগন্ধ ছিল হাতে কুটা চালের গুড়ির পিঠায়,
থাকতো নরম।

শুধু ঈদেই নয় অন্যান্য সময়েও গাইল ছিয়ার প্রয়োজন ছিল, আর শুধুই গুড়ি কুটার জন্যে নয়, ধানও কুটা হত এটা দিয়ে। এযেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, বাজারে বেচাবিক্রি চলতো, বর্ষাকালে কাঠের তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে বেপারিরা আসতো, সেখানেও গাইল থাকতো।

সময় বদলেছে বিজ্ঞান এগিয়েছে, সর্বত্র পৌঁছে গিয়েছে হরেক রকম যান্ত্রিক মেশিন, পাশাপাশি মানুষের রুচিও পালটেছে, কেউই হাতে কিছু করতে চায়না, চালও ভিজাতে হয় না।
যখনি প্রয়োজন শুকনো চাল নিয়ে মেশিনের হালারে দিয়ে দেয়, পলকেই গুড়ি হয়ে বেড়িয়ে যায়।
পিঠা তো হয় তবে আগের সেই সুগন্ধ আর কই।

পৃথিবীটাই পরিবর্তনশীল, এরই ধারাবাহিকতায় মানুষ বদলেছে, পাশাপাশি তার রীতিনীতিও, এর অংশ হিসেবেই যান্ত্রিক মেশিনের কাছে হেরে গেছে সনাতনি গাইল ছিয়া, এখন আর তেমন চোখে পড়েনা, শব্দও শোনা যায়না।
অগ্রজগন গল্প করতেন, কি দেখলাম আর আজ কি দেখছি।

আজ তো চোখে দেখা গাইল ছিয়াটাই গল্প মনে হয়।

লেখক : সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী।

Advertisement