বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি, দ্বায় কার আওয়ামীলীগ না বিএনপির

:ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সময়কাল বলা হয় সৌহার্দ রাজনীতির স্বর্ণযুগ। শেখ মুজিবুর রহমানের সময়কালের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চট্টগ্রামের মুসলিমলীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন চরম ভাবে আওয়ামীলীগ বিরুধী এবং পাকিস্তানের ভাবধারার রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ফজলুল কাদের চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ উত্থাপিত ছয় দফার বিরোধী ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ কালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের বিপক্ষে এবং ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তারপর ও বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগের সভায় ফজলুল কাদেরের আদর্শের বিরুদ্বে বক্তব্য দিয়ে ফকা চৌধুরীর বাসায় বেড়াতে যেতে ভুলেননি।

তাছাড়া ন্যাপের মৌলানা ভাসানীর সাথে রাজনৈতিক দূরত্ব থাকলেও কখনো ভাসানী সাহেবের বিরুদ্বে কটাক্ষ করে কোন বক্তব্য দেননি। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকাকালে মৌলানা ভাসানীর প্রতিমাসের পারিবারিক খরচ পরিচালনার দ্বায়িত্ব ও বঙ্গবন্ধুকে নিতে দেখা যায়। শাহ আজিজ পাকিস্তানের দালালির অভিযোগে বঙ্গবন্ধু ফেরার আগেই জেলে গিয়েছেন। গণহত্যার দায়ে ফরিদ আহমদ ছিলেন জনতার রোষের শিকার। দেশে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব তাঁর এই জেলবন্দী পুরোনো বন্ধুর পরিবারকে দেখভাল করেছেন।

ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে চিরকালের রাজনৈতিক মতদ্বৈধতা ছিল, ব্যক্তিগত বৈরিতা ছিল না, শত্রুতা ছিল না। ১৯৭৩ সালে জেলে তাঁর মৃত্যুতে ব্যথিত বঙ্গবন্ধু তাঁর শোকার্ত ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।অর্থাৎ তখন বিরুধ ছিলো আদর্শগত।

ভিন্ন মেরুর রাজনীতি করলেও ব্যক্তগত সম্পকর্কের অবনতি কখনো হয়নি। একথাও শোনাযায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবদ্বশায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ঝগড়া করে যখন সংসার ভাঙার উপক্রম। তখন বঙ্গবন্ধু জিয়াউর রহমানকে ডেকে এনে বেগম খালেদা জিয়াকে মেয়ের মর্যাদা দেন এবং খালেদা জিয়াকে ঘরে তুলে নিতে জিয়াউর রহমানকে আদেশ দেন।
এখন প্রশ্ন হলো রাজনীতির এই পরমত সহিষ্ণুতা, শ্রদ্বাবোধ এবং শালীনতা কিভাবে বিলীন হলো? আদর্শগত মত পার্থক্য কখন এবং কিভাবে রাজনীতি থেকে বিদায় নিলো? বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায়ই বলতে শুনা যায় বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্বে এই অভিযোগ খুবই পুরোনো। বিষয়টি রাজনীতিতে খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। যেদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি বিদ্যমান থাকে সেখানে সঠিক রাজনীতি হয়না। নেতা এবং নেতৃত্বের মধ্যে ব্যক্তিগত দন্দ্ব পুরো দেশ ও জাতিকে মাশুল দিতে হয়। আমার এই লেখার সকল পাঠকদের মতো আমার ও জানার ইচ্ছা ছিলো এই প্রতিহিংসার রাজনীতির শুরুটা ঠিক কখন হয়েছিলো। আমি জানার চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের শুরু থেকে কিভাবে ধীরে ধীরে এই প্রতিহিংসার বিষবাস্প তৈরী হয়েছিল?
রাজনীতির এই পরমত সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্বাবোধ এবং শালীনতাবোধ একদিনে বিলীন হয়নি। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ধারাবাহিক অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা ধীরে ধীরে গ্রাস করেছে রাজনীতিবিদদের, আর যার ফলে আমরা আজকে এই জায়গায় এসে পৌঁছতে সক্ষম চেয়েছি। এই অবিশ্বাস এবং আস্থাহীনতার শুরু ১৯৭৫ সালে। আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে একে অন্যের বিরুদ্বে উত্তাপন করেছেন। আমি ধারাবাহিক ভাবে উত্তাপিত অভিযোগ গুলো লিখার চেষ্টা করেছি।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (১৯৭৭ – ১৯৮১):
১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাবাহিনীর উপ প্রধান। বঙ্গবন্ধুর খুব আস্থাবাজন ছিলেন। আর সেকারণে বঙ্গবন্ধু উনাকে এই পদে বসাতে দ্বিধা বোধ করেননি। দুর্ভাগ্য জনক হলে ও সত্য, বাংলাদেশে বহুল আলোচিত যা সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে উঠে এসেছে – যখন সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার (অভিযুক্ত খুনিরা) ঘটনার আগে জিয়াউর রহমানের সাথে দেখা করে তাদের পরিকল্পনার কথা জানায়। তখন তিনি বলেছিলেন আমাকে বিরক্ত করোনা। যদি কিছু করতে পারো তাহলে করো, আমি এসবের মধ্যে নাই। এই জবাব কি সেনাবাহিনীর একজন উপ প্রধানের হওয়ার কথা ছিলো? তিনি ছিলেন তখন রাষ্ট্র এবং সরকারের রক্ষক, তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর একজন আস্থাবাজন অফিসার। বিপথগামীদের আইনের আওতায় না এনে এবং আইনানুগ ব্যবস্তা না গ্রহণ করে বরং তিনি হত্যাকারীদের উৎসাহ দিয়েছিলেন।
১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর ২৬/০৯/১৯৭৫ খন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়। যা ইতিহাসে কালো আইন হিসাবে পরিচিত। তার ঠিক কিছুদিন পরে ২১/০৪/১৯৭৭ ক্ষমতায় গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। খন্দকার মোস্তাকের প্রণীত প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডিন্যান্স সংবিধানে সংযোজনের জন্য প্রয়োজন ছিলো সংসদের অনুমোদন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আইনটিকে সংবিধানে সংযোজনের জন্য ০৯/০৭/১৯৭৯ তারিখে প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডিনান্সকে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে স্থায়ী আইনে পরিণত করেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রক্ষা করার তার প্রচেষ্টা পরিষ্কার ভাবে দৃশ্যমান।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্বে আরো অভিযোগ, উনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের সংবিধানের ৫ম সংশোধনের মাধ্যমে শুধু রক্ষার চেষ্টাই করেননি, তিনি ফারুক, রশিদ, ডালিমদের পদোন্নতি দিয়ে লিবিয়া সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বানিয়ে ছিলেন।
১৭ই মে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা প্রথম বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ঢুকতে চাইলে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে অনুমতি দেননি, এমনকি মিলাদ পড়তে চাইলে জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে অনুমতি না পেয়ে ৩২ নম্বরের সামনে রাস্তায় পড়তে হয়। ৩০ই মে ১৯৮১ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আততায়ীর গুলিতে চট্টগ্রামে নিহত হন। আর তার ঠিক পরে ১২ই জুন ১৯৮১ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের চাবি তৎকালীন সরকারের কাছ থেকে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা গ্রহণ করেন।
স্বভাবত এই বিষয়গুলো শেখ হাসিনার মনে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে একধরণের ঘৃণা কিংবা ক্রোধের সঞ্চার হয়। কিন্তু তারপরে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ এরশাদ পতনের আন্দোলনে শেখ হাসিনা সব কিছু ভুলে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে একই মঞ্চে বসেন। হাতে হাত ধরে দেশ ও জাতির স্বার্থে একসাথে আন্দোলন করেন। তখন অনেকে মনে করেছিলেন হয়তো এখানে শেখ হাসিনা সব কিছু ভুলে যাবেন এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে এক হয়ে কাজ করবেন।
বেগম খালেদা জিয়া: (১৯৯১ – ১৯৯৬)
১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করে। আর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের অবাধ বিচরণ এবং তৎকালীন সরকারের সাথে সুসম্পর্ক আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব এবং শেখ হাসিনাকে বিষিয়ে তুলে। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি একদলীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল রশিদকে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন এবং তার নাম সর্বস্ব দল ফ্রীডম পার্টিকে প্রধান বিরুধীদল হিসাবে নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদে বসানো কার্যত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগ নেতৃত্বকে আবার পেছনে ফিরে থাকানোর সুযোগ তৈরী করে।
১৯৯৬ সাল থেকে প্রথম বারের মতো ১৫ই আগস্ট বেগম খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী পালন করেন। যদিও এর আগ পর্যন্ত কোনদিন বেগম জিয়া এই দিবসটিকে উনার জন্মদিন হিসাবে পালন করেননি। মূলত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণই ছিলো এই জন্মদিন পালনের মূল উদ্দেশ্য। এই অনুষ্টান উদযাপন রাজনীতির সর্বনিম্ন শিষ্টাচারকেও হার মানায়।
শেখ হাসিনা: (১৯৯৬ – ২০০১)
১৯৯৬ সালে প্রথম বারের মতো ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার করে। তবে বিচারের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরের মতো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান ছিলো। যা আওয়ামীলীগ বা শেখ হাসিনার জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছিলো। বেগম খালেদা জিয়া সেনানিবাস এবং গুলশানে সরকার কর্তৃক নিয়ম বহির্ভুত ভাবে ২ টি বাড়ি দখলে রাখলেও, শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে এই বাড়ী গুলো থেকে উচ্ছেদ করার কোন পরিকল্পনা করেননি। তবে তৎকালীন সরকার শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার নামে দুটি পৃথক বাড়ি বরাদ্ব করে। এছাড়া বিশেষ আইনকরে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার নিরাপত্তার জন্য বিশেষ এসএসএফ সুবিধার ব্যবস্থা করে।
বেগম খালেদা জিয়া: (২০০১ – ২০০৬)
২০০১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার নামে সরকার কর্তৃক বরাদ্বকৃত বাড়ি সংসদে শুধু বাতিলই করলেননা বরং এই বরাদ্ব নিয়ে চরম ভাবে শেখ হাসিনা এবং রেহানাকে অপমান করলেন। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার নিরাপত্তার জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত বিশেষ এসএসএফ সুবিধা বাতিল করলেন।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নাম পরিবর্তন করে রাখলেন যমুনা সেতু। শুধু তাই নয় বঙ্গবন্ধুর নামে করা প্রায় ২০০ প্রতিষ্টানের নাম একসাথে একই দিনে পরিবর্তন করলেন।
২১ শে আগস্ট ২০০৪, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ন্যাক্কার জনক আক্রমণ, যেখানে শেখ হাসিনা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। আওয়ামীলীগ এবং শেখ হাসিনা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন এই হামলা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের যোগসাজশে সংগঠিত হয়েছিল। ঘটনাস্থলে ২৪ জন মানুষ মারাগেলেও ঘটনাকে আড়াল করতে সকল আলামত নষ্ট করা, ঘটনার সাথে জড়িতদের পালানোর সুযোগ তৈরী করা, বিচারের নাম জজ মিয়া নামক নিরীহ ব্যক্তিকে বেতন দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে স্বীকারোক্তি করা এই সব কিছু বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিশ্বাস এবং আস্থাহীনতার মাত্রা চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়।
শেখ হাসিনা (২০০৮ – ২০১৮):
২০০৯ সালে ১৩ই মে ডঃওয়াজেদ মিয়া মৃত্যু বরণ করলে বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে দেখতে যান এবং শোক প্রকাশ করেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান মৃত্যু বরন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান শান্তনা দিতে। কিন্তু বাসার ভিতরে প্রবেশের সুযোগ না দিয়ে দারোয়ান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে রাস্তা থেকে বিদায় করে দেয়া হয়।
আর শেখ হাসিনার বর্তমান শাসনামলে প্রতিহিংসার রাজনীতির সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় হলো – বেগম জিয়াকে সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বদল করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা এবং বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এখানে বলা দরকার সরকারের বিধি মোতাবেক বেগম জিয়া দুটি নয় বরং একটি বাড়ি পাবার যোগ্য ছিলেন। তাছাড়া উনি হলেন একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। সুতরাং সেনানিবাসের মতো একটি সংরক্ষিত এলাকায় থেকে, বেআইনি ভাবে বাড়ি দখল করে থাকা বরং উনার জন্য ও সমীচীন ছিলো না। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা ছিলো বাংলাদেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়জুড়ে চলা একটি মামলা। মামলার শুরু ২০০৮ সালে আর রায় হলো ২০১৮ সালে। দীর্ঘ এই ১০ বছর বেগম জিয়া আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করার সুযোগ ও পেয়েছেন। ৫ বার বিচারক পরিবর্তন এবং ১০৯ বার সময় নিয়েছিলেন। সুতরাং কোর্ট কর্তৃক দেয়া সাজার জন্য শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত ভাবে দায়ী করা কতটুকু সমীচিন? এছাড়া বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা, হয়তো এই লেখা যখন প্রকাশ হবে তখন এই মামলার রায় ও চলে আসবে। আদালত কর্তৃক দেয়া কোন রায়ের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার রাজনীতিকে দায়ী করা আমার মতে অন্যায় হবে।
তারেক রহমান:
বর্তমান সময় রাজনীতিতে বিষবাষ্প আমদানিতে অগ্রভাবে আছেন বেগম খালেদা জিয়ার বড়ো ছেলে তারেক রহমান। রাজনীতির সকল শিষ্টাচার পরিত্যাগ করে কখনো বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলছেন, কখনো নিজের পিতাকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলছেন। তাছাড়া অত্যন্ত নোংরা ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলছেন। কিছুদিন আগে ইউটিউবে একটি ভিডিওতে তিনি যে ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে সম্ভোধন করতে শোনলাম আমার মনে হয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেঁচে থাকলে উনার ঐ ভাষা শুনে লজ্জা পেতেন।
পরিশেষে বলি রাজনীতিতে হিংসা থাকা স্বাভাবিক কিন্তু প্রতিহিংসা কখনোই কাম্য নয়। এটা দেশ জাতির জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনে। অতীত ইতিহাস ও তাই বলে। তবে একবার যখন শুরু হয় তখন এটা থামানো খুবই কঠিন। যে প্রতিহিংসার বীজ ১৯৭৫ সালে বপন করা হয়েছিলো তা আজ ধীরে ধীরে বট বৃক্ষে পরিণত। এটা সমূলে উৎপাটন শুধু তারাই করতে পারে যারা এর বীজ বপন করেছিলো। সুতরাং রাজনীতিতে সুবাতাস নিয়ে আসতে হলে, বিএনপি নেতৃত্বকেই সেই দ্বায় নিয়ে এখন এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
কন্টিবিউটর ব্রিটবাংলা,

প্রিন্সিপাল সলিসিটার,কেসি সলিসিটর্স,ইউকে,পরিচালক,

সেন্টার ফর ব্রিটিশ বাংলাদেশীপলিসি ডায়ালগ,

সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতি দি সোসাইটি অব ব্রিটিশ-বাংলাদেশী সলিসিটর্স

Advertisement