বাংলা-প্রেমিক ফাদার মারিনোকে শেষ সম্মানটুকু দেয়নি বাংলাদেশ

এমডি রিয়াজ হোসেন, ইতালী :  ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহযোগী, লেখক, অনুবাদক মারিনো রিগনের শেষ ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশেই তার শেষকৃত্য হোক। কিন্তু তার সেই ইচ্ছা পুরন হয়নি। এমন কি তার শেষকৃত্যে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিও যাননি। একটি বাণীও পাঠ করা হয়নি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। অথচ তিনি আজীবন বাংলা এবং বাংলাদেশের বন্ধু ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা এবং নাগরিকত্বও দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।

তিনি নিজের ইতালিয় পরিচয় রেখে বাংলাদেশি পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করতেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে মিলানে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয় বলেও জানা গেছে। কিন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কিছু করা না হলেও একদল সচেতন প্রবাসী দেশের পক্ষ থেকে তাদের কর্তব্য পালন করেছেন। ফাদার মারিনোর কফিনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় ঢেকে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন।

গত ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার জন্মস্থান ইতালির ভিসেনসার ভিল্লাভেরলা গ্রামের একটি ক্যাথলিক গীর্জায় ফাদার মারিনোর শেষকৃত্যানুষ্ঠান হয়।  এতে স্থানীয় মেয়র রুজ্জেরো গনযোসহ প্রায় অর্ধশত ক্যাথলিক ধর্মগুরু যোগ দেন। ঢাকা থেকে বানী পাঠান ইতালিয় রাষ্ট্রদূত। মারিনো রিগনের আত্মীয় স্বজন এবং ধর্মীয় সহকর্মীসহ প্রায় দুই শতাধিক শুভানুধ্যায়ীর উপস্থিতিতে ক্যাথলিক মিশনের পক্ষ থেকে তার নানামুখী কর্মজীবন পাঠ করা হয়, যার প্রায় ৯০ ভাগ জুড়ে ছিল বাংলাদেশ।
মারিনো রিগনের শেষ ইচ্ছা ছিল খুলনার শেলাবুনিয়ায় সমাহিত হবেন। জীবিত অবস্থায় তিনি বহুবার এ কথা বলেছেন, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তবে শেষ বেলায় তার কফিন ঢেকে দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশের লাল সবুজের পাতাকায়। মারিনো রবীন্দ্রনাথসহ বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখক কবিদের প্রায় ৭০টি বই ইতালিয় ভাষায় অনুবাদ করেছেন। লিখেছেন বেশ কটি মৌলিক বই। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা এবং নাগরিকত্ব দেয়া হয়। তিনি নিজের ইতালিয় পরিচয় রেখে বাংলাদেশি পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করতেন।
বাংলা প্রেমিক মারিনো রিগনের শেষকৃত্যে দুর-দুরন্ত থেকে অনেকেই যোগ দিলেও বাংলাদেশের কোনো সরকারী প্রতিনিধি যোগ দেয়নি। একটা বানীও কেউ পাঠায়নি। অথচ মারিনোর পরিপারের পক্ষ থেকে মিলানোস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল রোজিনা ইসলামকে টেলিফোনে জানানো হয়েছিল।তবে সেখানে কেউ উপস্থিত হয়নি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান সিকদার বলেন, এ ব্যাপারে মিলান থেকে কিছুই জানানো হয়নি। তিনি  খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান। দেশ বিদেশের বহু পত্রপত্রিকায় এই খবর ছাপা হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ২০ অক্টোবার সন্ধ্যায় তিনি ইতালির ভিল্লাভেরলায় দেহত্যাগ করেন। শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে উপস্থিত হন ভেনিস বাংলা স্কুলের সভাপতি সৈয়দ কামরুল সারোয়ার, সাংবাদিক পলাশ রহমান,পুথি পাঠক কাব্য কামরুল সহ আরো অনেকে।

Advertisement