বিপাকে বাংলা টিভি : ঢাকা-লন্ডন অফিসে তালা। নেই স্কাই স্ক্রীনে

ব্রিটবাংলা রিপোর্ট : বেশ বিপাকে আছে ইউকের বাংলা টিভি! লন্ডনে স্টাফদের বকেয়া বেতনের সঙ্গে এবার অফিসের ভাড়া পরিশোধ না করায় পিছু নিয়েছে ব্যালিফ। ব্যালিফের ভয়ে মালিক পক্ষ অফিসের সব মালামাল সরিয়ে, যে দু’একজন কাজ করতো তাদেরকে বের করে লন্ডনের অফিসে তালা ঝুলিয়েছেন বলেও জানা গেছে। এদিকে স্কাই স্ক্রীন থেকেও চলে গেছে বাংলা টিভি। এতো গেল লন্ডনের কথা। অন্যদিকে বাংলাদেশে স্টাফের বেতন পরিশোধ না করার অভিযোগে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বাংলা টিভি। বেতনের দাবীতে বাংলা টিভির ঢাকা অফিসে তালা ঝুলিয়েছেন স্টাফরা। স্টাফদের বেতন পরিশোধ না করার অভিযোগ আছে বাংলা টিভির লন্ডন অফিসেও। লন্ডন অফিসে স্টাফদের প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড বেতন বকেয়া পড়ে আছে বলে দাবী করেছেন বাংলা টিভির সাবেক কর্মকর্তারা। বাংলা টিভির কর্ণধার সৈয়দ সামাদুল হককে বারবার অনুনয়-বিনয় করেও তারা বকেয়া বেতন পাননি বলে অভিযোগ তাদের।
লন্ডন অফিসে ব্যালিফ :
বেতনের দাবীতে ঢাকা অফিসে তালা ঝুলার খবরটি প্রকাশ করে পরিবর্তন ডট কম নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সামাজিক মাধ্যমে এই খবরটি লন্ডনে প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লন্ডন অফিসে ব্যালিফের খবরটিও চাউর হতে থাকে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলা টিভি ইউকের একজন স্বত্ত্বাধিকারী মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অফিসের যে দু’একজন স্টাফ কাজ করতেন তাদের বের করে দিয়ে অফিসের সব মালালমাল নিয়ে যান। যাবার সময় অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন তিনি। এ বিষয়ে বাংলা টিভি ইউকের আরেক স্বত্ত্বাধিকারী সাজ্জাদ আজিজ মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অফিসের ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি। অফিসের ল্যান্ডলর্ড  ব্যালিফে পাঠিয়েছে। ব্যালিফ আসতে পারে শুনে বরং অফিসের জিনিসপত্র সরানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, ঢাকায় বেতনের দাবীতে তালা ঝুলানোর বিষয়টি তাকে অত্যন্ত মর্মাহত করেছে। তাতে বাংলা টিভি ইউকের সুনামের ক্ষতিও হয়েছে। তাই তিনি নিজে বাংলা টিভি থেকে সরে যাবেন বলেও ভাবছেন।
এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা অফিসে তালা ঝুলিয়েছেন স্টাফরা। এনিয়ে সংবাদ শিরোনামোর পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সমালোচনা হচ্ছে।
ঢাকার একটি অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদটি এখানে ব্রিটবাংলার পাঠকদের জন্যে হুবুহু তুলে ধরা হল।

বেতন দাবিতে বাংলা টিভির অফিসে স্টাফদের তালা

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা টিভির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে বকেয়া বেতন দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বাংলা টিভির এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবর্তন ডটকমকে জানান, তিন মাসের বেতন না পেয়ে কর্মীরা এই বিক্ষোভ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির প্রায় শতাধিক সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বিগত ৩ মাস বেতন পাচ্ছেন না। কর্তৃপক্ষ বেতন দিচ্ছি, দেব করে তালবাহানা করছে।’

বৃহস্পতিবার বেতন বঞ্চিত কর্মীরা একযোগে আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন।

ওই সাংবাদিক আরও জানান, সর্বশেষ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সামাদুল হক।

এ বিষয়ে সৈয়দ সামাদুল হক পরিবর্তন ডটকমকে জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে তিনি এখন বৈঠকে আছেন। পরে কথা বলবেন।

বকেয়া বেতনের দাবীতে লন্ডনেও নিরব ক্ষোভ

শুধু ঢাকাতে নয়, বকেয় বেতনের দাবীতে লন্ডনেও বাংলা টিভির অনেক পুরনো স্টাফের মধ্যে ক্ষোভ আছে। ২০১৪ সালে সাজ্জাদ আজিজ মালিক বাংলা টিভিতে জড়ানোর আগে এবং পরে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড বেতন আটকে আছে। বকেয় বেতন উদ্ধারের জন্যে স্টাফরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। লন্ডনের অন্য একটি টিভি চ্যানেলে কর্মরত বাংলা টিভির সাবেক এক স্টাফ জানান, বকেয়া বেতনের দাবীতে সাবেক স্টাফরা বিভিন্ন সময় সৈয়দ সামাদুল হক এবং সাজ্জাদ আজিজ মালিকের কাছে অনুরোধ করেছেন। এই দেবো-দিচ্ছি বলেই তারা দিন গড়াচ্ছেন বলে ব্রিটবাংলার কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলা টিভির সাবেক এই স্টাফ। বাংলা টিভি ইউকেতে যাদের বেতন বকেয় আছে, তাদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী। ঘাম ঝড়ানো কাজের পর প্রাপ্য বেতন না পাওয়ার কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে বসে আছেন। নানান কারনে তারা আইনি প্রক্রিয়ায়ও যেতে পারছেন না। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবও তাদের অভিযোগটি আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে কারো কারো। একজন ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, ক্লাবের গত নির্বাচনের সময় বিষয়টি উত্থাপন করা হলেও নেতৃস্থানীয় কেউ সৌজন্যবোধের খাতিরেও ইস্যুটি নিয়ে কথা বলেননি। ভুক্তভোগিরা  আশা করছেন, ক্লাবের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অন্তত ঘরোয়া পরিবেশে তাদের বকেয়া বেতনের ইস্যুটি নিয়ে বাংলা টিভি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।

এদিকে এ বিষয়েও সাজ্জাদ আজিজ মালিক ব্রিটবাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি বাংলা টিভিতে যোগ দেওয়ার পর তার অধিনে যারা কাজ করেছেন, এমন কিছু স্টাফের বেতন বকেয় আছে। তবে তিনি তা ধীরে ধীরে ফেরত দেবেন বলে তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি যোগ দেওয়ার আগে কোনো স্টাফের বকেয় বেতনের দায় তিনি নেবেন না বলেও জানান।

স্ক্রীনে নেই বাংলা টিভি!

এদিকে বেতন নিয়ে দিনভর এতো আলোচনার মাঝেও লন্ডনে স্ক্রীনেও বাংলা টিভি দেখা যায়নি। স্কাই ৮২১ চ্যানেলে গেলে স্ক্রীনে চ্যানেল  এভোয়েলেবল নয় বলে দেখায়। গত কয়েক দিন আগেও স্ক্রীন থেকে বাংলা টিভি উদাও ছিল। অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে সার্ভিস বন্ধ করে দেয় স্কাই। এমনটি হয়েছে কি না নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলা যাচ্ছে লা। অর্থ পরিশোধ করলে হয়তো আবার স্ক্রীনে টিভি ফিরে আসবে। কিন্তু যাদের শ্রমে ভেজা অর্থ বাংলা টিভির মালিকদের পকেটে আটকে আছে তারা আদৌ তাদের ন্যায্য হক্ক পাবেন কি না, তা একমাত্র বাংলা টিভি কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে।

 

Advertisement