ভালোবাসার দ্বীপে

পরীমনি :

‘বালুর বুকে পায়ের ছাপ পড়েছে কতবার- হিসাব রাখা কঠিন। গুনে নেওয়ার সুযোগও দেয়নি নোনাজলের ঢেউ। খালি পায়ে কতটা পথ হেঁটেছি, সেই চিহ্নও মুছে দিয়েছে উত্তাল সাগর। গর্জন তুলে ছুটে আসা তার ঢেউগুলো পাড়ে আছড়ে পড়ে নিমিষেই নিস্তেজ হয়ে যায়। তবু এই ঢেউয়ের আসা-যাওয়ায় বিরাম নেই। তাই সৈকতে বালুতে যত চিন্তাই আঁকি- তা স্থায়ী হয় না বেশিক্ষণ। এ জন্য বলতেও পারব না ঠিক কতটা পথ পাড়ি দিয়েছি।’ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ঠিক এভাবেই গুছিয়ে বলেছিলাম কথাগুলো। যখন বিশেষ কেউ একজন প্রশ্ন করেছিল, সৈকতে কতটা পথ হেঁটেছি? অবশ্য এই হিসাব-নিকাশ নিয়ে আমরা কেউ খুব একটা মাথা ঘামাই না। ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটা যেখানে বড়, সেখানে এমন ছোটখাটো প্রশ্নের উত্তর সঠিক না বেঠিক- সেটাও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় না। যা হোক বেড়ানোর প্রসঙ্গে যখন বলা শুরু করেছি, তখন সে কথাতেই ফিরে যাই। বালুর বুকে পায়ের ছাপ আঁকার যে ছেলেমানুষিতে মেতে উঠেছিলাম, সেটা বালি দ্বীপের একটি ঘটনা। এই তো ক’দিন আগেই ঘুরে এলাম সেখান থেকে। যাকে অনেকেই বলে শান্তি ও ভালোবাসার দ্বীপ- সেই বালি দ্বীপের অপার সৌন্দর্য আমাকে বহুবার মুগ্ধ করেছে। ডেকেছে হাতছানি দিয়ে। সেই ডাক উপেক্ষা করা সহজ নয়; অন্তত আমার মতো ভ্রমণপাগল যারা, তারা সুযোগ পেলেই সেখানে ছুটে যেতে চাইবেন। আমিও তাই ভালোবাসার সেই দ্বীপের হাতছানিতে ঘরে বসে থাকতে পারিনি।

উড়ান পাখির ডানায় বসে পাড়ি দিয়েছি ভারত মহাসাগরের অনেকটা পথ। এর পর এই মহাসাগরের পশ্চিমের দেশ ইন্দোনেশিয়ার বুকে পা রাখতে পেরেছিলাম। ভ্রমণের পথ যত দীর্ঘ হোক না কেন, ক্লান্তি আসে না। বরং মনের পর্দায় ভেসে বেড়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা কিছু স্থান, যেখানে যাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে থাকে। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ তেমনই এক জায়গা। বেড়ানোর জন্য আদর্শ এই দ্বীপ যাকে স্থানীয় লোকজন পুলাউ বালি বলে থাকে। এখানকার সবই ছবির মতো করে সাজানো-গোছানো। শুধুই অপলক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের অনেকটাই বিলিয়ে দিয়েছে এই দ্বীপকে। চোখ ধাঁধানো আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলো অদ্ভুত না উদ্ভট- তা নিয়েও তর্কবির্তক হতে পারে। তবে তা ভ্রমণপিপাসুদের আনন্দই দেবে। যেমন- ‘আপসাইড ডাউন ওয়ার্ল্ড বালি’। এটি হলো অদ্ভুত ছবি তোলার স্টুডিও। এখানে ঢুকলেই চোখ হয়ে যায় চড়কগাছ! এই ঘরের সব আসবাব মনে হবে সিলিংয়ে ঝুলিয়ে রাখা! চেয়ার, টেবিল, সোফা, খাট, বুকসেলফ, রান্নাঘর সবই যেন উল্টো হয়ে আছে। শুরুতে আমিও তা দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গিয়েছিলাম। আমিই, নাকি পৃথিবীই উল্টে গেছে- ঠিক বুঝে পারছিলাম না। যখন বিস্ময়ের ভাব কিছুটা কেটেছে, তখনই আসল মজাটা টের পেয়েছি। তাই ক্যামেরায় উল্টোপাল্টা সেই দৃশ্যগুলো তুলে রাখতে ভুল করিনি। ইন্দোনেশিয়ার মানুষ বেশ বন্ধুবৎসল। বিশেষ করে বালি দ্বীপের স্থানীয়রা। পর্যটন তাদের বড় একটা আয়ের উৎস বলেই হয়তো বেড়াতে আসা মানুষদের স্থানীয়রা আপন অতিথি বলে মনে করে। যে জন্য মনের আনন্দে যেখানে-সেখানে ছুটে যাওয়া যায়। কোরাল ট্রায়াঙ্গলের এই দ্বীপের আরেক আকর্ষণ নানা ধরনের প্রাণী। জেনেছি, পাঁচশ’র বেশি প্রজাতির প্রাণীর তৈরি করা প্রবাল প্রাচীর আছে এখানে।

বালির পাশে আছে লম্বক দ্বীপপুঞ্জ। যেখানে সৌন্দর্যের আরেক নিদর্শন গিলি আইল্যান্ড। এই আইল্যান্ড তিনটি ছোট ছোট সুন্দর দ্বীপে তৈরি। প্রতিটি দ্বীপেই চারপাশে দেখা যায় নীল জলরাশি। এই জলে মৎস্যকুমারী হয়ে সাঁতার কাটার বাসনা জাগে। সাগরের ঢেউ চিরে স্পিডবোর্টে ছুটে বেড়ানোও দারুণ রোমাঞ্চকর। সব মিলিয়ে বালির তুলনা চলে শুধু বালির সঙ্গেই। পৃথিবীর অনেক দেশে গিয়েছি। দেখেছি একেক দেশের একেক রকম সৌন্দর্য। কিন্তু বালির সঙ্গে মিল আছে, এমন জায়গা দ্বিতীয়টি চোখে পড়েনি।

Advertisement