মাদক আইন সংশোধন হচ্ছে: ট্রাইব্যুনালে নয় আলাদা আদালতে বিচার হবে

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বন্ধ থাকা মাদক মামলার বিচারে অবশেষে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের কথা উল্লেখ থাকলেও সংশোধিত আইনে তা থাকছে না। এতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে দিয়ে আলাদা আদালত গঠন করা হবে।

যেসব মামলায় পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে সাজার কথা উল্লেখ আছে সেগুলোর বিচার এ আদালতে হবে। চলতি মাসের মধ্যে আইনটি সংশোধনের লক্ষ্যে কাজ করছে আইন মন্ত্রণালয়।

আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, আইনটি সংশোধন করার কাজ চলছে। অসুবিধাগুলো দূর করে আমরা একটা খসড়া তৈরি করেছি। এ মাসের (সেপ্টেম্বর) মধ্যে সেটি চূড়ান্ত করা হবে। ট্রাইব্যুনাল না অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনাল হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল করলে অনেক জটিলতা থাকে। ট্রাইব্যুনাল তো স্থায়ী সমাধান নয়। আমরা একটা স্থায়ী সমাধান দিতে চাচ্ছি। বড় মামলাগুলোর বিচারে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিয়ে জেলা পর্যায়ে আদালত করা হবে। এটা হবে আলাদা আদালত। খসড়ায় এমন প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে।

সচিব সারওয়ার আরও বলেন, ট্রাইব্যুনাল করলে জটিলতা আছে। যেমন- ট্রাইব্যুনালে একজনের ছয় মাসের সাজা হলে এর জন্য তাকে পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় হাইকোর্টে আসতে হবে। এতে বাদী-বিবাদী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমন ছোট মামলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে; যাতে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিলের সুযোগ পায়।

১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংশোধন করা হয়। সংশোধিত আইনে বলা হয়- সরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করতে পারবে। তবে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোনো অতিরিক্ত জেলা জজ বা দায়রা জজকে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব দিতে পারবে।

কিন্তু সরকার এ পর্যন্ত কোনো ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেনি এবং অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বও কোনো আদালতকে দেয়া হয়নি। তাই বর্তমানে দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে করা মামলার বিচারে কোনো ফোরাম নেই। মূলত এ কারণে এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া প্রায় এক লাখ মামলার কার্যক্রম আটকে গেছে। নতুন আইন পাস হওয়ার পর আট মাস কেটে গেলেও আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়ায় কাজ চলছিল পুরনো আইনে। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এলে আটকে যায় মামলার কার্যক্রম। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-তে দায়ের হওয়া মামলায় মাসুদুল হক মাসুদ আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন।

১২ গ্রাম হেরোইন ও ১০টি ইয়াবাসহ মাসুদকে আটকের পর পুলিশ বংশাল থানায় মামলা করে। এ মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দেয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারের জন্য যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত-৩-এ পাঠিয়ে দেন। মাসুদের জামিন আবেদন নিু আদালতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তিনি আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে যান। সেখানে যাওয়ার পর ধরা পড়ে আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন না করে বিচার চলছিল।

মাদকের মামলার বিচারের জন্য মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন এবং জেলা জজ বা দায়রা জজকে দায়িত্ব দিয়ে গেজেট প্রকাশ না করায় ২৫ আগস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, গেজেট না হওয়া দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। রাষ্ট্রপক্ষকে আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

Advertisement