মিগ ২৯ : নাটকীয় কায়দায় আটক বেলারুশের সাংবাদিক

।। হিমিকা আযাদ ।।

আবারো সাংবাদিক আটকের নেক্কারজনক ঘটনা ঘটলো বেলারুশে। বিশ্বজুড়ে আলোড়ন। চটেছে ইইউ’ও। নিজ দেশের সরকারের সমালোচনা করাতেই এমন বিপাকে পড়েছেন বেলারুশের সাংবাদিক রোমান প্রোতেসেভিচ ।

সরকারের সমালোচনাকারী সাংবাদিককে আটকের জন্য মিগ ২৯ ব্যবহার করে পুরো ফিল্মী স্টাইলে বিমান ছিনতাই করার অপরাধে বেলারুশের এয়ারলাইন্সগুলোকে ইউরোপের আকাশে নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংক্ষেপন ইইউ।
ব্রাসেলসে এক বৈঠকে ইইউ এয়ারলাইন্সগুলোকে বেলারুশের আকাশসীমা ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছে ২৭ দেশের জোটটি। একই সঙ্গে বেলারুশের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে ইইউ।

বিবিসি জানিয়েছে, ইউরোপের বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সগুলো ইতিমধ্যে বেলারুশের আকাশসীমা বাদ রেখেই নিজেদের রুট পুনর্নির্ধারণ করে ফেলেছে।
এছাড়া বেলারুশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এয়ারলাইন্স বেলাভিয়ার অপারেটিং পারমিট বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য। ইইউ নেতারা সদস্য দেশগুলোকে একই পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
বিমানে বোমা আছে, এমন তথ্য দিয়ে গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়াগামী একটি বিমানকে রোববার জরুরি অবতরণে বাধ্য করে বেলারুশ। পরে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয় তাকে ।যাত্রীরাও ছিল আতংকিত।
আটকের পর রোমান প্রোতেসেভিচের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে বেলারুশ। বিদ্ধস্ত চেহারা নিয়ে ভিডিওতে হাজির হয়েছেন এই সাংবাদিক। তাকে বলতে শোনা গেছে তিনি ভালো আছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা বেলারুশ সরকারের অভিযোগগুলো সত্য।
কতোটা হুমকি আর অসহায়ত্বের মুখে পরে একজন বন্দী এভাবে নিজেকে সমর্পন করতে পারেন সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। গতবছর নিভালনীকেও বন্দী করে রুশ সরকার। বিষ দিয়ে হত্যা চেষ্টাও চলেছে ।
প্রোতেসেভিচের বাবা অভিযোগ করেছেন তার ছেলের ওপর নির্যাতন চলছে। এদিকে রাষ্ট্রীয় আইনজীবী বলছেন, অপরাধ প্রমাণ হলে তার মৃত্যুদণ্ড অথবা ১৫ বছরের জেল হতে পারে।
প্রোতেসেভিচের ওপর বেলারুশ প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কা এতোটা ক্ষুব্ধ কারণ ইউরোপের শেষ স্বৈরশাসক লুকাশেঙ্কো গেলো ২৬ বছর ধরে কঠোর ভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। তাঁর শক্তি মূলত রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। গেলো আগষ্টের নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে ব্যপক দমন নীপিড়ন চলেছে। ফেসবুক টুইটার ইউটিউবের মতো সব সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করা হয়েছিল এমন কি কারফিউ জারী করা হয়েছিল দেশটিতে ।বিরোধীদের গণহারে আটক করা হয়েছিল ।রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ছাড়া কাউকে কোন খবর প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি।
কিন্তু পোল্যান্ডে বসে বিকল্প গণমাধ্যম দিয়ে সেই খবর প্রকাশ করেছেন প্রোতেসেভিচ। টেলিগ্রাম নামের জনপ্রিয় আ্যপটিতে তিনি খুলেছেন নেকস্টা নামের একটি প্লাটফর্ম। যার সাবস্ক্রাইবার ২০ লাখ। বেলারুশের মানুষ পকেটের টাকা খরচ করে সেই নেকস্টার সংবাদ দেখেছেন। জেনেছেন লুকাশেঙ্কার ভোটের আসল তথ্য। সে সময় মিনস্কে লুকাশেঙ্কা বিরোধী সবচে বড় বিক্ষোভটি লাইভ করেছিলো নেকস্টা।
প্রযুক্তির এই যুগে সত্য হলো স্পার্কের মতো। যা গণমাধ্যমকে বন্ধ করে বা নিয়ন্ত্রণ করে থামানো সম্ভব না ।নেকস্টার মতো এমন হাজারো প্লাটফর্মের গা বেয়েই এই যুগে বেরিয়ে আসে তথ্যের স্রোত। কিন্তু ক্ষমতা বা রাজনিতীর ব্যবহার করে সমস্ত সত্য মানুষ অস্বীকার করে নিজেদের এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং নিজেদের গদী বহাল রাখতে সক্ষম হয় ।
তবে এর থেকে অনেকে অনেক শিক্ষাও নিয়েছেন । যেমন হার মেনে নিতে হয়েছে ট্রাম সরকারকে । সেই একই পথ ধরে হয়তো লুকাশেঙ্কা তার ক্ষমতাকালের সবচে বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছেন।

হিমিকা আযাদ : ব্রডকাষ্ট জার্নালিষ্ট ইউকে।

Advertisement