মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ফান্ড স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য : ব্যাপক চাপে সুচি

ব্রিটবাংলা রিপোর্ট : মিয়ানমার নেত্রী অং সান সুচিকে দেওয়া সব সম্মাননা পদ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংগঠন। এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দেওয়া ফান্ড বাতিল করেছে বৃটিশ সরকার। মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষনের জন্য বছরে ৩শ হাজার পাউন্ড ফান্ড দিয়ে থাকে বৃটেন। ২০১২-১৩ সালে এই ফান্ডের পরিমান ছিল ৮৬ হাজার পাউন্ড। গত বছর থেকে তা বাড়িয়ে ৩শ হাজার পাউন্ডের বেশি করা হয়।

গত ২৫শে আগষ্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের হামলার মুখে জীবন নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার হিন্দু ছাড়া বাকী সবাই মুসলিম। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া পাশাপাশি তাদের উপর এই অমানবিক ভয়াবহ হামলার তীব্র প্রতিবাদ উঠে বিশ্বব্যাপি। বৃটিশ সরকারও এর প্রতিবাদ করেছে। বৃটেনের প্রায় ১৫৭ জন এমপি এক চিঠিতে মিয়ানমার সেনাবিহনীকে ফান্ডিং বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এছাড়া অন্যান্য ক্যাম্পেইনগ্রুপই এইক দাবী জানিয়ে আসছিল বৃটিশ সরকারের প্রতি। অবশেষে বৃটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষনের জন্য দেওয়া বৃটিশ ফান্ডিং বাতিল করা হয়েছে। বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে বছরে প্রায় ৩শ হাজার পাউন্ড ফান্ড পেত মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

সুচিকে দেওয়া বিভিন্ন সম্মাননা পদ ফিরিয়ে নিচ্ছে  ইউকের বিভিন্ন সংগঠন :

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চিকে দেওয়া সম্মাননা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসন। দেশটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম অত্যাচারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার পরও তাদের রক্ষায় সু চি উদ্যোগ না নেওয়ায় ইউনিসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের প্রচারাভিযানের সময় অং সান সু চি কারাবন্দী থাকাকালে ২০১০ সালে তাঁকে এ সম্মাননা দিয়েছিল ইউনিসন। ইউনিসন বলছে, তারা সু চিকে দেওয়া সম্মাননাসূচক সদস্যপদ স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবের জন্য ব্যবস্থা নিতে সু চির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

ইউনিসনের সভাপতি মার্গারেট ম্যাককি ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবস্থা খুবই হতাশাজনক। এ অবস্থায় অং সান সু চির ইউনিসনের সম্মানিত সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক চাপের প্রতি তিনি সাড়া দেবেন।’

দেশটির ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটিও সু চিকে দেওয়া সম্মাননা স্থগিত করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। তাঁকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির একজন মুখপাত্র বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে “জাতিগত শুদ্ধি”র অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ। এ অবস্থায় মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

মুখপাত্র আরও বলেন, ‘১৯৯৮ সালে আমরা অং সান সু চিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছিলাম। তখন তিনি মিয়ানমারে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিগ্রির বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করব।’

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের স্টুডেন্টস ইউনিয়নও জানিয়েছে যে তারা সু চির সম্মানিত প্রেসিডেন্ট পদ প্রত্যাহার করে নেবে। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতির পাশা বলেন, ‘রোহিঙ্গা নির্যাতনে অং সান সু চির বর্তমান অবস্থান ও গণহত্যার পরও নিষ্ক্রিয় থাকায় আমরা তাঁর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট পদ ফিরিয়ে নেব।’

৩০ বছর ধরে অং সান সু চি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো, বাথ, কেমব্রিজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শহর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও তাঁকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement