মুক্তিযুদ্ধের গল্প : খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন

আন্দালিব রাশদী :: এই গল্পটি একা আমার পক্ষে লেখা সম্ভব ছিল না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাইচরণকে সঙ্গে নিয়েছি।

একবার ঝপ করিয়া একটা শব্দ হইল, কিন্তু বর্ষার পদ্মাতীরে এমন কত শব্দ শোনা যায়। রাইচরণ আঁচল ভরিয়া কদম্বফুল তুলিল। গাছ হইতে নামিয়া সহাস্যমুখে গাড়ির কাছে আসিয়া দেখিল, কেহ নাই। চারিদিকে চাহিয়া দেখিল কোথাও কাহারও কোনো চিহ্ন নাই।

মুহূর্তে রাইচরণের শরীরের রক্ত হিম হইয়া গেল। সমস্ত জগৎসংসার বিবর্ণ ধোঁয়ার মতো হইয়া আসিল। ভাঙ্গা বুকের মধ্য হইতে একবার প্রাণপণ চীৎকার করিয়া ডাকিয়া উঠিল, ‘বাবু, খোকাবাবু, লক্ষ্মী দাদাবাবু আমার।’

১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারিতে আমার বাবা হোসেন আলী হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরির ফোরম্যান হিসেবে পদোন্নতি পেলে মাহিনা দাঁড়াল ১৯৫ টাকা। বাবার প্রতিজ্ঞা, বেতন ২০০ টাকা না ডিঙানো পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না। কিন্তু খোকাবাবুকে দেখার পর বাবা ঘোরের মধ্যে পড়লেন, আর মাত্র পাঁচ-ছয়টি টাকার জন্য এমন পাত্র হাতছাড়া করা বোকামি হবে। বাবার এক সহকর্মী পাত্র নিয়ে এসেছিলেন, বিদঘুটে চেহারা দেখে কেউই সম্মতি দেয়নি। মা বলেছেন, পুরুষের আবার চেহারা কী? হোসেন আলীর চেয়ে দেখতে ভালো।

সত্তরের ডিসেম্বরে ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্টের দিনই মনিজা রহমান গার্লস হাইস্কুলের গেটে টিয়ার ওপর খোকাবাবুর চোখ পড়ে। টিয়া কলা বিভাগে ক্লাস টেনে উত্তীর্ণ হয়েছে, হাজারে নম্বর উঠিয়েছে ৫৮৫।

ক্লাসটিচার বলেছেন, পড়ায় মন লাগাও। ফার্স্ট ডিভিশন পাবে।

আমিও পাস, ৩৫১ নম্বরে সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছি। আমি বাবার মায়ের মাথা পেয়েছি; সাত আর পাঁচ যোগ করলে কত হয় বের করতে আমার দাদির দুদিন লাগত, বলতেন কমপক্ষে ১০ হবে কিছু বেশিও হতে পারে।

টিয়ার গায়ের রং ঠিক ফরসা নয়, মিষ্টি শ্যামলা; গোড়ালি থেকে মাথার তালু পর্যন্ত মাপলে সাড়ে পাঁচ ফুটের এক চুলও কম হবে না।

আমার রংটা ফরসা, চেহারা পুরোটাই বাবার, বিদঘুটে, কোনো পাত্রকে সাইকেল, রেডিও, সিটিজেন ঘড়ি, নগদ ৫০ হাজার টাকা দিলেও বিয়ে করতে রাজি হবে না। মা নিশ্চিত আল্লাহ আগে স্বামীকেই সৃষ্টি করেন, তার বুকের হাড় দিয়ে স্ত্রী। আমার স্বামীও কোথাও ঘাপটি মেরে আছে, সময়মতো দেখা দেবে।

একাত্তরের ৩১ জানুয়ারি রোববার নসিমন বেওয়া এবং তাঁর শাশুড়ি হীরামন বেওয়া রসগোল্লা এবং কালোজামসহ টিয়াবিবির জন্য প্রস্তাব নিয়ে এলেন। পাত্র সিনেমার নায়কের মতো। পড়াশোনা কদ্দুর জিজ্ঞেস করলে হীরামন বেওয়া বললেন, পুরুষের যতটুকু পড়াশোনা দরকার, সবটাই করেছে।

নসিমন বেওয়া বললেন, পেটের ছেলে নিয়ে মিথ্যে বলতে পারবেন না। আইএ পরীক্ষায় ডাব্বা মেরেছে। এখন ব্যবসায় নেমে গেছে।

ছেলে পাত্রী এবং পাত্রীর পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছে, রোববার সকাল সকাল না এলে হোসেন আলীকে পাওয়া যাবে না। কামাই ভালো, বাড়িভাড়া লাগে না, তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে পাঁচ কাঠার প্লটে টিনশেড বাড়ি। ছেলের ছবি দেখুন (স্টুডিওতে তোলা, প্রেক্ষাপটে ফুলের বাগান), নিন ঠিকানা, দেখেশুনে অনপযুক্ত মনে হলে প্রস্তাব খারিজ করে দেবেন।

বাবা বললেন, আমি মেয়ে বিয়ে দেব না।

হীরামন বেওয়া বললেন, ছেলেটাকে একবার দেখার পর খারিজ করে দিন।

কাজটা সহজ করার জন্য তিনি বললেন, বেগুনবাড়ি যাওয়ার আগে খোকাবাবুকে এখনই দেখে নিন, বেগুনবাড়ি গিয়ে বাকিটা পরীক্ষা করবেন। আমরা রিকশায় এসেছি, খোকাবাবু মোটরসাইকেলে পথ দেখিয়েছে।

হীরামন বেওয়া আর কোনো কথা না শুনে দ্রুত নাতিকে ডাকতে চলে গেলেন। মিনিট দশেকের মধ্যে আমাদের ভাড়া বাড়ির উঠানে এটলাস মোটরসাইকেল থেকে পাত্র নামল। তার দাদি বললেন, সালাম কর। অমনি উপুড় হয়ে আমার বাবাকে ও মাকে সালাম করল।

বিব্রত বাবা বললেন, মেয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত হলে অন্যান্য প্রস্তাবের সঙ্গে এটাও বিবেচনা করা হবে।

পাত্র আসার পর টিয়া বাথরুমে ঢুকল, বাসা খালি না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই।

ততক্ষণে যা জেনেছি: বাবা ছেলেকে ডাকতেন খোকা, মা ডাকতেন বাবু। দুটো মিলেই খোকাবাবু। বাবা ১৯৬৯ সালে জয়দেবপুরে গাড়িচাপায় নিহত, একটিই বোন আয়মন, আমার বয়সী।

১৯৩৭ সালে বাংলায় হক সাহেবের সরকার হলে খোকাবাবুর দাদা কলকাতা ছেড়ে ঢাকার তেজগাঁওয়ে বসতি স্থাপন করেন। দাদার মা বিহারের সুন্দরী মহিলা, সেই সুন্দরের ভাগই খোকাবাবু পেয়েছে।

বাবার বেতন ২০০ স্পর্শ করার সম্ভাবনাই নেই, দেশে কিছু একটা শুরু হলে হরদেও ছাঁটাই শুরু করবে, বাবার চাকরি যাবে প্রথম দফায়। শেখ সাহেবের নাম নিয়ে বাবা অবাঙালি সহকর্মীদের বলেছেন, শালাদের এবার পোঁদে বাঁশ। বাবার মুখ খারাপ।

আমরা ভেবেছি বাবা টলবেন না। কিন্তু মেয়ের বাবার খরচ নেই, ছেলেই কন্যা সাজিয়ে নেবে এর চেয়ে লোভনীয় প্রস্তাবও আছে নাকি? ২৮ ফেব্রুয়ারির রোববার টাঙ্গাইলের চমচম নিয়ে একাই বেগুনবাড়িতে হাজির। খোকাবাবু ছিল না। দাদির সঙ্গে কথা বলে বিয়ের দিন চূড়ান্ত করে বাড়ি ফিরে বললেন, তারিখ ২১ মার্চ রোববার।

মা বললেন, সে কী! ওরা মেয়ে দেখবে না?

বাবা ধমকে উঠলেন, কবার দেখবে? দেখেই তো প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।

মার্চের এক তারিখেই স্বাধীনতার আগুন। পাত্রপক্ষই বলল দু–এক সপ্তাহ দেরি করলে যদি অবস্থাটা ভালো হয়।

বাবা বললেন, অসম্ভব। মেয়ে নিতে হলে ২৩ তারিখেই, নতুবা নয়।

ঘরোয়াভাবে পোলাও, রোস্ট ও রেজালা করে সবসুদ্ধ একুশজনকে খাইয়ে, আমার বাবার চাওয়ার আড়াই গুণ বেশি টাকার কাবিনে (বাবার কুড়ি হাজার খোকাবাবু বলল, পঞ্চাশ) আমরা টিয়াকে তুলে দিলাম। খোকাবাবু ভক্সহল নিয়ে এসেছে, সাজায়নি, পাগড়িও পরেনি। সময় খারাপ।

২৫ মার্চ রাতে হরদেও ফ্যাক্টরিতে আগুন পোড়া লাশের গন্ধ ছড়ায়। ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল হলে মোটরসাইকেলে খোকাবাবু হাজির। আমরা ঢাকা ছেডে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

খোকাবাবু অবিশ্বাস্য এক অধিকার নিয়ে আমাকে বলল, তুমি যাবে না, আমার মোটরসাইকেলের পেছনে ওঠো, আমাদের ওদিকটাতে আর্মি যায়নি।

বাবার চোখের দিকে একবার চেয়ে দুই জোড়া জামা-সালোয়ার নিয়ে খোকাবাবুর আদেশে মোটরসাইকেলের পেছনে উঠি।

আমরা বাবা–মা ও যমজ দুই ভাই অপু-তপুর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। এপ্রিলে প্রথম দিকে খোকাবাবু হরদেও ঘুরে এসে বলল, কেউ নেই, কোথায় গেছে কাকে জিজ্ঞেস করব মানুষও নেই। জুনে বাবার চিঠি পেয়ে নিশ্চিত হই, সবাই বেঁচে আছে, মেঘনার ওপারে মরিচাকান্দিতে।

জুনের শেষ দিকে আর্মি আসতে শুরু করে, খোকাবাবু আমাদের কাপাসিয়ার টোক নামক জায়গায় বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে আসে। সেদিনই টোক বাজারে আর্মি নামে। পালাও পালাও রব উঠলে আমরা আশপাশের পুকুর ও ডোবাতে আশ্রয় নিই। কে কার সঙ্গে গিয়েছে এটা কেউ বিবেচনায় আনেনি।

কচুরিপানা ঢাকা পুকুরে আমি শীতে ও ভয়ে কাঁপছিলাম। আধো অন্ধকারে আঁকড়ে রেখে যে মানুষটি আমার কাঁপন থামায় তার নাম খোকাবাবু।

কিছুক্ষণ পর বলল, চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকো, দেখি টিয়া কোনদিকে।

আমি কঠিনভাবে তাকে জাপটে ধরে বলি, না আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না। ভেজা কাপড়ের ভেতর হাত ঢুকিয়ে তার শরীর খুঁজতে থাকি, নিজেকে লেপ্টে রাখি খোকাবাবুর সঙ্গেÑআমার শরীরের ভেতর তখন অদ্ভুত সব শিহরণ। আমি চিৎকার করে বলতে চাচ্ছি, খোকাবাবু তুমি অন্য কারও নও।

ভোরে কেউ একজন চেঁচিয়ে বলছে, আর্মি চলে গেছে, উঠে পড়ো।

আমাকে পুকুরের এক পাড়ে বসিয়ে অন্যদিক থেকে তুলে আনে টিয়া ও আয়মনকে, তার মাকেও। দাদি ঘরেই ছিলেন, বলেছেন মারতে চাইলে এখানেই মেরে ফেলুক।

বেশ কবার আমাদের অবস্থান বদলাতে হয়। কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই একদিন হীরামন বেওয়ার মৃত্যু হয়।

ঢাকায় লুটপাট ও জবরদখল চলছে খবর পেয়েই খোকাবাবু ২২ আগস্ট বাড়ি রক্ষা করতে চলে আসে। সেপ্টেম্বরে টিয়ার বমি শুরু হয়। আয়মন বলে, ভাবির বাচ্চা হবে।

টিয়ার হাতের টাকা শেষ হয়ে আসছে, খোকাবাবুর কোনো খবর নেই। টিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি বেগুনবাড়ি যাব।

শাশুড়ির নিষেধ অগ্রাহ্য করে সত্যিই রওনা হলে, আমরাও তাকে অনুসরণ করতে বাধ্য হলাম।

দরজায় নতুন চায়নিজ টিপতালা, কিন্তু চাবি কোথায়?

সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও খোকাবাবুর দেখা মেলেনি, তালা ভাঙা হয়। ঘরে সব ঠিকঠাকই আছে, লুটপাট হয়নি।

মাস পেরিয়ে গেল। খোকাবাবু ফিরল না। ঘরের জিনিস বেঁচে চালডাল কেনা হচ্ছে। স্বর্ণের দাম পড়ে গেছে। হাত গড়িয়ে পড়া একটি আধুলি খাটের তলায় চলে গেলে নসিমন বেওয়া হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকে পয়সাটি পেলেন, একটি ছোট বস্তাও টেনে বের করলেন। এর ভেতরের চারটি অদ্ভুত জিনিস। টিয়া হাতে তুলে লেখাটা পড়ে: এম ৬৭ গ্রেনেড। বলে, মা সর্বনাশ, এগুলো বোম, কুয়াটার ভেতর ফেলে দিন।

ডিসেম্বরে যুদ্ধ শুরু, সাইরেন বাজছে। গুলি চলছে বোমা পড়ছে। টিয়া একদিন বলল, দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, খোকাবাবু এখন ফিরবে। কিন্তু কোথায় গিয়েছে? ডিসেম্বরের কুড়ি তারিখে বাবা মুখভর্তি পাকা দাড়ি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, তোরা বেঁচে আছিস! আমরা তপুটাকে খুঁজে পাচ্ছি না। অপু আছে।

কবে থেকে বাবা?

২১ সেপ্টেম্বর মিলিটারি এসেছিল, আমরা পালাচ্ছিলাম, আমার হাত থেকেই ছিটকে কোনদিকে চলে গেল। টিয়া ঠান্ডা মাথায় বলল, আসবে।

বাবা জিজ্ঞেস করে জামাই কোথায়?

টিয়া বলল, আসবে।

বাহাত্তরের ২৯ মে টিয়ার মেয়ে বাচ্চা হলো, নাম রাখল শুশুক। টিয়া বলল, এবার খোকাবাবুকে আসতেই হবে।

আমি টিয়ার বাড়িতেই পড়াশোনা শুরু করেছি। টিয়া বলল খোকাবাবু আসুক, তোকে দিয়ে আসবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক পাঁচ দিন পর ২১ ডিসেম্বর আমার বয়স পনেরো হলো। আরও পাঁচ বছর পর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলামের সঙ্গে আমার বিয়ে হলো, সবাই ডাকে রবি, আমি মনে মনে তাকে ডাকি খোকাবাবু।

একদিন খুব ইচ্ছে হলো রবিউলকে টিয়া আপুর কাছে দিয়ে বলে আসি, সরি আপু এদ্দিন আমিই লুকিয়ে রেখেছিলাম। খোকাবাবুকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।

কথাটা মিথ্যে নয় কিছু সময়ের জন্য হলেও আমি তো খোকাবাবুকে আমারই করে নিয়েছিলাম। আমার বয়স তখন চৌদ্দ। কতটাই আর বুঝে করেছি।

২৯ মে শুশুক ৪৮ হবে। টিয়া আপুর ৬৪ কি ৬৫। আমরা সবাই বেঁচে আছি এবং ভালো আছি, নসিমন বেওয়া ৮০ ছাড়িয়েছেন অনেক আগে। তাঁদের বেগুনবাড়ির ৫ কাঠাতে দুই ইউনিটের ১০ তলা বাড়ি।

আমি বেসরকারি কলেজে বাংলা পড়াই, রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প নিয়ে পিএইচডি শুরু করেছিলাম, শেষ করিনি। শুশুক বৃত্তি পেয়ে ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানেই ব্রুনাইর ছাত্র নুরুল হাসান বলখিয়াকে বিয়ে করেছে। শুশুকের তিনটি ছেলে। টিয়া বাড়ি ছেড়ে বেরোয় না, পাছে খোকাবাবু এসে তাকে না পেয়ে ফিরে যায়।

দুই.

ফোনটা ব্রুনাই থেকেই আসে, বহু বছর পর টিয়া মেয়ের কাছে। টিয়া বলল, ময়না, তুই কি জানিস ৪৬৭ দিন পর ওই লোকটা ফিরে এসেছে।

কোন লোকটা?

ওই যে রাষ্ট্রদূত, মেয়েকে এয়ারপোর্টে থেকে আনতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিল। তুই এক্ষণ বেগুনবাড়িতে চলে যা, খোকাবাবু যেকোনো সময় এসে পড়বে। আমিও ফিরছি।

আমি বলি, তুমি পাগল হয়েছ, একাত্তরের ২২ আগস্টের পর প্রায় ৪৮ বছর বেরিয়ে গেছে।

টিয়া বলল, হোক না, কত আর বয়স হয়েছে। মানুষ তো এক শ বছরও বাঁচে। তুই যা, তোকে পেলে খোকাবাবু আরও বেশি খুশি হবে, আমি জানি। শোন আমি না পৌঁছা পর্যন্ত যেমন করেই হোক আটকে রাখবি, ভালো করে আঁকড়ে ধরবি, যেন ফসকাতে না পারে। তপুও একদিন ফিরবে।

খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন ঘটবে, টিয়া জানে। ২৭ মার্চ ১৯৭১ মোটরসাইকেলের পেছন দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলেছিল, আমাকে শক্ত করে ধরো, না হলে পড়ে যাবে।

আমি যে খোকাবাবুকে কেন আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম না।

Advertisement