মুখোশকাহন

খসরু নোমান :: অনেক দেবতার তখনো জন্ম হয়নি। তেমনি এক সময়ের কোনো একদিন আমি গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলাম-আমার সবগুলো মুখোশ চুরি হয়ে গেছে। সাত জীবনে আমি সাতটি মুখোশ পড়েছি। আমি মুখোশ ছাড়াই জনারণ্যে ছুটে গেলাম। চিৎকার করে বললাম, ‘চোর, চোর, অভিশপ্ত চোর।’

নারী-পুরুষেরা আমাকে দেখে হাসতে লাগল। কেউ-কেউ আমাকে দেখে ভীত হয়ে ঘরমুখী ছুটে পালালো। দৌঁড়াতে-দৌঁড়াতে যখন আমি বাজারে পৌঁছালাম, বাড়ির ছাদে দাড়িয়ে এক যুবক চিৎকার করে বলল, ‘ওই যে একটা পাগল!’

আমি ওপরে তার দিকে তাকাতেই আমার খোলামুখে প্রথমবারের মতো সূর্যকিরণ চুমু দিল! আমার আত্মা ভালোবাসার আগুনে জ্বলে উঠল। আমি আমার হারানো মুখোশ আর ফেরত চাইলাম না; যেন অন্য এক জগতে ঢুকে পড়লাম আমি। চিৎকার করে বললাম, ‘মুখোশ চোরদের ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক (তারা সুখী হোক)।’

এটাই আমার পাগল হবার বৃত্তান্ত কিংবা বলতে পারো এভাবেই আমি পাগল হয়ে গেলাম। আমি আমার উন্মাদনার মধ্যেই স্বাধীনতা আর নিরাপত্তা খুঁজে পেলাম। বোধোদয় হলো আমার। কিন্তু আমি যেন আমার এ নিরাপত্তাবোধে খুব গর্বিত না হই। কারণ কারাগারে থাকা একজন চোরও অন্য চোর থেকে নিরাপদ।

কাহলিল জিবরানের ‘দ্য ম্যাডম্যান’ অবলম্বনে

Advertisement