যাপিত জীবনের বাইরে সমুদ্র বিলাসে ব্রিটেনের সাংবাদিকরা

জুয়েল রাজ : ঘড়ির কাটার আগে ছুটে চলে ব্রিটেনের যাপিত জীবন। আর সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে আরেকটু দ্রুত চলে সেই কাটা। একটু অবসর কিংবা দল বেঁধে বেড়াতে যাওয়া প্রায় বিলাসিতার পর্যায়েই পড়ে। লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব, সদস্যদের সেই বিলাসী সময়টা প্রতিবছর একদিন উপহার দেয়ার চেস্টা করেন। ২০ আগস্ট রবিবার প্রতিবছরের মতো, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সামার ট্রিপ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। শুধু ক্লাব মেম্বার নয়, পরিবার পরিজন নিয়ে তিনটি কোচের বিশাল বহর মার্গেটের নীল দরিয়াতে গিয়ে নোঙর ফেলেছিল। দিনভর মেতেছিলেন হাসি আনন্দে। ক্লাবের নির্বাচিত কমিটি মাসাধিক কাল ধরে নেপথ্যে কাজ করেছেন, সুন্দর একটা দিন উপহার দিতে। শুরুতে খুব বেশী সাড়া না পাওয়া গেলেও শেষের দিকে অনেককেই আর সঙ্গি করা যায়নি, স্থান সংকুলানের জন্য। যাত্রী তালিকা ১৫০ পেরিয়ে ২০০-র কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। তাই কাটাছেড়া করে ১৫০ জনের বহর নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়। কারণ শেষ সময়ে এসে আলাদা বাস সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না।

সকাল ১০ টায় ইস্ট লন্ডন মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয় যাত্রা। তিনটি বাসেই সমান তালে চলে, গান, কৌতুক, কবিতা ছড়া। ফেইসবুক লাইভে সেগুলো শেয়ার হচ্ছিল বাস থেকে বাসে। তাইছির মুহামুদ, রেজোয়ান মারুফ, আব্দুল কাদির মুরাদ, আকরাম হোসেন,ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী, রেজাউল করিম মৃধা, রুপি আমীন, মুনিরা পারভীন, তবারকুল ইসলামসহ অনেকেই যাত্রাপথে মাতিয়ে রেখেছিলেন তাদের বহুমুখি প্রতিভা দিয়ে । এই আনন্দ আয়োজনে মনে হচ্ছিল বাসের আয়োজনেই সীমবদ্ধ থাকুক আমাদের ট্রিপ! মনে হচ্ছিলো এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো.. তবু পথের শেষ হয়।

মধ্যপথে যাত্রা বিরতিতে সকালের নাস্তা শেষ করে মার্গেট সমুদ্র তীরে গিয়ে থামে বাস। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকতের দেশের মানুষ, শান বাঁধানো ঘাট আর ছোট সৈকতে কি মন ভরে আমাদের! তবুও ঝলমলে দিন চিকমিক বালি আর আদিগন্ত নীল দরিয়া ডাক দেয়।

হু হু করা বাতাসে যেন সুর ভাসে ওরে নীল দরিয়া,আমায় দে রে দে ছাড়িয়া…

বন্দী মনুয়া পাখির বিরহ খুব বেশীক্ষণ আর স্থায়ী হয়নি। ভাটির দেশের মানুষ, পানি দেখলেই মন উতলা হয়ে উঠে, সে সাগর বা নদী, টেমস কি সুরমা সে আর বিবেচনায় থাকেনা। অনেকেই নেমে পড়েন নীল সমুদ্রে। শুরু হয়ে যায় ধাপাধাপি। টেনে হিচড়ে নামানো হয় ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, সেক্রেটারি মোহাম্মদ জোবায়ের, তাইসির মোহাম্মদসহ অনেককেই। কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও কোষাধ্যক্ষ আ স ম মাসুমকে নামানো যায়নি পানিতে!

কোন খেলায় অংশ না নিলেও বয়োজ্যাষ্ট সাংবাদিক ইসহাক কাজল আর গবেষক, সাংবাদিক ফারুক আহমদ যেভাবে রোদ পোহাচ্ছিলেন, দেখে বাংলাদেশের শীতের সময়ের কথা মনে হচ্ছিলো বারবার। সিনিয়র জুনিয়র ভেদাভেদ ভুলে মেতে উঠেন প্রাণখোলা আনন্দে। সৈকত জুড়ে শিশুরাও মেতে উঠে বালি খেলায়। কেউ কেউ অভিভাবকদের সাথে নেমে পড়ে সমুদ্রে। একদল মেতে উঠেন হাডুডুডু খেলায়, সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকগণ অবাক হয়ে দেখেন সেই খেলা। পাতিল ভাঙা খেলায় অনেক ভিনদেশি পর্যটকও অংশ নিয়েছিলেন। দুপুরের খাবারের দৃশ্যটা ছিল বড়ই অপূর্ব, সারি বেঁধে মাটিতে বসে সবাই দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন যেন গ্রামের কোন বিয়ে বাড়ি কিংবা শিন্নি বাড়ির দৃশ্য! নারী পুরুষ শিশুসহ দেড় শতাধিক মানুষের জন্য আয়োজন, কিন্তু এতো গুছানো পরিপাটি ছিল যার জন্য কমিটির একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য। কোথাও বিন্দুমাত্র কোন বিশৃংখলা ছিলনা। যাত্রাপথে যারা মাতিয়ে রেখেছিলেন তাদের জন্য ছিল পুরস্কার। পুরস্কার হিসাবে ছিল লাউ,আলু,বেগুন, কাঁচামরিচ এইসব। যা কেউ কল্পনা করেনি। এই পর্বটা ছিল সবচেয়ে আনন্দদায়ক।

র‌্যাফেল ড্র এর প্রথম পুরুস্কার উঠে চ্যানেল এস এর নিউজ প্রেজেন্টার, আবৃত্তিকার মুনীরা পারভীন এর হাতে। ২য় পুরুস্কার উঠে ওয়ান বাংলার রিপোর্টার আবুল কালামের ছেলের হাতে আর ৩য় পুরুস্কার উঠে সুরমা সম্পাদক, কবি আহমদ ময়েজের ছেলের হাতে।

দিন গড়িয়ে বিকেল হয়, আনন্দ মেলা ভেঙে ফেরার পথে ছুটে চলে বাস। রাত পোহালেই আবার কর্মব্যস্ত দিন। আবার যান্ত্রিক জীবন। ফেরার পথে গাড়ীর পিছনের সিটে, সুরমা সম্পাদক আহমেদ ময়েজ , সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়ের, প্রথম আলোর পারভেজ ছুটিয়ে গল্প করছিলেন, ময়েজ ভাই কে বললাম, আবার যেদিন তুমি সমুদ্র স্নানে যাবে আমাকেও সাথে নিও, নেবে তো আমায়… এই গানের লাইনটা মনে আসছে এখন, বেশ কয়েক সারি আগে বসা,ট্রেজারার আ স ম মাসুম হঠাৎ শুনি এই গানটাই মোবাইলে বাজাচ্ছেন। মনে হল আবার সমুদ্রে যাবার বাসনা, শুধু আমার নয়, অনেকেই বুকে নিয়ে ফিরছেন।

 

Advertisement