যুক্তরাজ্যে নারীদের যৌন হয়রানির প্রতিবাদে গঠিত পার্লামেন্টারি কমিটিতে টিউলিপ

ব্রিটবাংলা রিপোর্ট : যুক্তরাজ্যে জনসমাগমস্থলে নারী ও মেয়েদের ওপর যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো সর্বদলীয় এমপিদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।
লেবার পার্টির লন্ডন থেকে নির্বাচিত এমপি টিউলিপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। জনসমাগম স্থলে নারীদের যৌন হয়রানির বিষয়ে নয় মাস ধরে তদন্ত পরিচালনাকারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উইম্যান অ্যান্ড ইকুয়ালিটি কমিটিতে যোগ দিয়েছেন। ২৩ অক্টোবর মঙ্গলবার কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে পার্লামেন্ট সদস্যরা জানান, লন্ডনে নারীদের যৌন হয়রানির মাত্রা এত তীব্র আকার ধারণ করেছে যে মাঝে মাঝে সেটা স্বাভাবিক বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। তদন্তের সময় হয়রানির শিকার নারীদের কথা শুনেছেন হাউস অব কমন্সের কমিটির সদস্যরা। তারা গণপরিবহন থেকে শুরু করে বার, ক্লাব ও অনলাইনে পর্যন্ত হয়রানির আলামত পেয়েছেন।
কমিটির প্রধান মারিয়া মিলার বলেন, নারীরা প্রায়ই ‘ঝুঁকির’ মধ্যে থাকেন। তারা সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত। কনজারভেটিভ পার্টির এই এমপি আরও বলেন, ‘গণ পরিবহনে হয়রানির শিকার হওয়া যেন নারীদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়, অনলাইনে, ট্রেন-বাস ও বার-ক্লাবেও হয়রানি হতে হয় তাদের। এটাই সবচেয়ে সাধারণ হয়রানি আর এটি নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে কঠিন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে এমন ঘটনায় অভিযোগও দায়ের করা হয় না। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষয়টি এখন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিই হয়ে গেছে। অনেক পুরুষ মনে করেন যে, নারীদের সঙ্গে এমনটা করা যায়।
হয়রানি বন্ধে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গণ পরিবহনে হয়রানি বন্ধে ট্রেন ও বাস কর্তৃপক্ষকে সচেতন ভুমিকা পালন করতে বলা হয়েছে। এমন অভিযোগে হয়রানিকারীদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গণ পরিবহনে বসে যেন কেউ পর্নোগ্রাফি ভিডিও না দেখে সেটাও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
এছাড়া সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর সুপারিশ করেছে কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করারও সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকার যেন ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন অ্যান্ড গার্লস’ নিয়ে নতুন কৌশল ঘোষণা করে এবং পর্নোগ্রাফির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করে।
কমিটি জানায়, যুক্তরাজ্যের প্রায় প্রত্যেক নারীই যৌন হয়রানির শিকার। অনেকেই শিশু থাকতেই এই অভিজ্ঞারা মুখোমুখি হন। একটা সময় এতটাই হয়রানি হন যে সেটা তাদের কাছে নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হয়রানি সরাসরি না হলেও এর বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতেও সময় লাগে অনেকের। স্বাধীনভাবে চলতে অস্বস্তিবোধ করেন তারা। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যৌন হয়রানির এই প্রভাবটি আইনে আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য সরকার যৌন হয়রানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনও কোনও পদক্ষেপ স্পষ্ট নয়।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে নারী সহিংসতা প্রতিরোধে ১০ কোটি পাউন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। দফতরের এক মুখপাত্র জানান, নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও যৌন হয়রানি অবৈধ। সেটা বাসা, কর্মক্ষেত্র কিংবা স্কুল যেখানেই হোক না কেন। যৌন হয়রানি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, ‘নারী ও মেয়েদের সহিংসতা প্রতিরোধের বিষয়টি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ’

Advertisement