যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই : মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উদ্দিন চৌধুরী গামা

(মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উদ্দিন চৌধুরী গামা পহেলা ফেব্রুয়ারি, সোমবার লন্ডনের হ্যামারটন হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। তাঁকে নিয়ে কবি ও সাংবাদিক অপূর্ব শর্মার বিশেষ লেখাটি কয়েক বছর আগে সিলেটের দৈনিক যুগভেরীতে প্রকাশিত হয়। ব্রিটবাংলা সম্পাদকের হাতে এর একটি কপি দিয়েছিলেন মরহুম আনোয়ার উদ্দিন চৌধুরী গামা। মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই লেখাটি এখানে তুলে ধরা হল)

‘আপকা কুছ নেহি হুয়া, ঘাবড়াও মত-সব ঠিক হো যায়েগা’ চোখ খুলতে একজন খাসিয়া নার্সের মুখের এমন কথা শুনে বুঝতে পারি আমি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি। কীভাবে হাসপাতালে এলাম, কারা ভর্তি করিয়েছে তখনও তা ছিল অজানা। তবে মনে আগের দিনের কথা। ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথেই গুলির শব্দ! আমাদের ক্যাম্পের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় পাক আর্মি। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই জকিগঞ্জ সীমান্তের আটগ্রাম রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। পাক সেনাদের নিক্ষিপ্ত একটি গুলি আমার ডান হাতে বিদ্ধ হয়। অবচেতনভাবেই আমি হামাগুড়ি দিয়ে কুশিয়ারা নদী সাঁতরে ওপারে চলে যাই। এরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে জানতে পারি, ভারতীয় আর্মি আমাকে উদ্ধার করে স্থানীয় মাছিমপুর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। সেদিনই অপরাশেন করে হাত থেকে গুলি বের করে আমাকে শঙ্কামুক্ত করা হয়। অবচেতন থাকায় আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলাম। ডাক্তার ও নার্সদের যথাযথ চিকিৎসায় দ্রুত আমি আরোগ্য লাভ করি। মহান মুক্তিযুদ্ধ দিনের নিজের জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের একটি মুহুর্তের কথা এভাইে ব্যক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উদ্দিন গামা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্যে তিনি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শত্রুদের উপর। অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান, প্রতিরোধ গড়ে তোলা, ট্রেনিং ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ-স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরো ৯ মাস কেটেছে তার পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির স্বপ্নে।
যেভাবে মুক্তিযুদ্ধে …
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন। এর কেন্দ্রীয় প্রধান ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। সিলেটেও এর শাখা কমিটি গঠন করা হয়। সিলেট জেলা কমিটির প্রধান করা হয় আক্তার হোসেনকে। সহকারী প্রধান ছিলেন এনামুল হক (বীর প্রতীক), রফিকুল হক ও আনোয়ার উদ্দিন চৌধুরী গামা। সদর থানা কমিটির প্রধান ছিলেন ফখরুল ইসলাম খান এবং সহকারী প্রধান করা হয় মরহুম লালু মিয়াকে। এছাড়াও ছাত্রলীগে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য সংগঠনও রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। তবে আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী উল্লেখযোগ্য তৎপরতা চালায়। মার্চে কালিঘাট স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাকবাহিনী সিলেট শহরে আক্রমণ চালাবার খবর পূর্ব থেকে অবহিত হয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। এর দু’দিন পর আনোয়ার উদ্দিন গামা নগরীর ছড়ারপাড়ের নিজেদের বাসায় বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। বাসায় পৌঁছে তিনি জানতে পারেন, তার খোঁজে পাক বাহিনী এখানে এসেছিল। তাকে না পেয়ে তার পিতা মরহুম ইব্রাহীম আলীকে ধরে নিয়ে গেছে। আরো জানতে পারেন, ছড়ারপার এলাকার বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা বাছির মিয়া ও পাঠানটুলার কুতুব উদ্দিনকে পাক আর্মি হত্যা করেছে। মা হামিদা বানুর কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে রক্তে আগুন ধরে যায় গামার। ঠিক এমন সময়ই মা গামাকে বলেন, “বাবা তোমাকে যুদ্ধে যেতে হবে, দেশকে শত্রু মুক্ত করতে হবে”। মায়ের কাছ থেকে এমন নির্দেশ পেয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কয়েকজন সহযোগির সাথে যোগাযোগ করে সেদিনই মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে তিনি সিলেট ছাড়েন। এর আগে সদর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান ফখরুল ইসলামের বাড়িতে সংগঠিত হন তারা। সেখানে কেন্দ্রীয় দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ওপারে যাবার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হন। পাঁচ-ছয়জন সঙ্গীসহ পায়ে হেঁটে প্রথমে বরমচাল ও পরবর্তীতে আমিনাবাদ চা-বাগানে যান। নূরজাহান চা বাগানে একদিন অবস্থানের পর কামালগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ওপারে পাড়ি জমান ২৯শে মার্চ। বর্ডার অতিক্রম করার সাথে সাথেই বিএসএফ সদস্যরা তাদেরকে আটক করে। তারা নিজেদের পরিচয় ও উদ্দেশ্যের কথা জানালে তাদেরকে ধর্মশালা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে করিমগঞ্জে। করিমগঞ্জে পূর্ব থেকে অবস্থান করা দেওয়ান ফরিদ গাজী, ডাক্তার মালিক, মকসুদ ইবনে লাল, সিরাজ উদ্দিন প্রমুখের সাথে দেখা হলে তারা গামাসহ অন্যান্যদের ট্রেনিংয়ে যোগদানের পরামর্শ দেন।
ট্রেনিং চলে দু’ মাস দু’ সপ্তাহ ….
চোখেমুখে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর গামা অন্যান্যদের সাথে ট্রেনিংয়ে যোগদান করেন। ভারতের আফলংয়ে দু’ মাস ট্রেনিং নেওয়ার পর তাদেরকে রাতাছড়া ট্রেনিং ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেওয়া হয় আরো দু’সপ্তাহের ট্রেনিং। ট্রেনিংয়ে একটি প্লাটুনের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন গামা। মূলত গেরিলা পদ্ধতির ট্রেনিংয়ের উপরই প্রাধান্য দেন প্রশিক্ষকেরা। ট্রেনিং পর্ব প্রসঙ্গ আনোয়ার উদ্দিন চৌধুরী গামা বলেন, ট্রেনিং পর্বের দিনগুলো ছিল খুবই কঠিন। কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে প্রতিটি দিন অতিক্রম করতে হতো। ভোর থেকে শুরু হত প্রশিক্ষন পর্ব। গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ, আত্মরক্ষার কৌশল, মর্টার শেলিং, গ্রেডেন নিক্ষেপ, শত্রুকে ব্যতিব্যস্ত রাখার কৌশল, অস্ত্র চালানো- সবই শেখানো হয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। প্রত্যেক মক্তিযোদ্ধাই যুদ্ধের বিভিন্ন কলা কৌশল রপ্ত করার ব্যাপারে ছিলেন দৃঢ় প্রত্যয়ী।
দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ …
প্রশিক্ষণ শেষে ট্রেনিং প্রাপ্তদের বিভিন্নভাগে বিভক্ত করে সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধের জন্য নিযুক্ত করা হলেও আনোয়ার উদ্দিন গামাকে বিশ্বস্ত হিসেবে ক্যাপ্টেন বড়ুরা তত্ত্বাবধানে করিমগঞ্জে অস্ত্রাগার রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়। বেশ কিছু দিন সে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। প্রথম প্রথম এই দায়িত্ব পালন করতে ভালো লাগলেও দেশ মাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে উদগ্রীব হয়ে উঠেন তিনি। ভারতীয় ক্যাপ্টেনকে তিনি যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য যে কোনো কমান্ডের সাথে তাকে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করলে তিনি তাকে সময়মত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। অক্টোবর মাসে আসে সেই কাঙ্খিত মুহুর্ত। তাকে …নেতৃত্বাধীন কমান্ডের সাথে জকিগঞ্জের আটগ্রাম ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়। আটগ্রাম ক্যাম্পে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পনা ছিল দ্রুত জকিগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করা। কিন্ত স্থানীয় রাজাকার মারফত পাক বাহিনী আটগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর জানতে পেরে…তারিখে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। গুলিবিদ্ধ হন গামা।
যৌথ বাহিনীর সাথে অভিযানে অংশ গ্রহণ…
আহত হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে পুনরায় করিমগঞ্জে যান গামা। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। সে সময় দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আক্রমণের জন্য যে যৌথবাহিনী গঠন করা হয়, তাতে তাকেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
১৩ ডিসেম্বর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, মিত্রবাহিনী জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। সারারাত পাকবাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় চলে। যুদ্ধে পাক আর্মির ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য প্রাণ হারায়। সারেন্ডার করে প্রায় ৪০জন হানাদার। সেখান থেকে ভোটে সিলেটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা। গাছবাড়ি এলাকায় পরদিন সকালে হানাদারদের সাথে কয়েক ঘন্টা গুলি বিনিময় হয় তাদের। এক পর্যায়ে পিছু হঠে পাক বাহিনী। গুলি করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন তারা। (সদস্য সংখ্যা নেতৃত্বে কে?)
এদিন শেওলা এলাকা অতিক্রম করার সময় মুক্তিযোদ্ধারা আকাশে কয়েকটি বিমান দেখে আঁতকে উঠেন। পরে তারা বিমান থেকে ছুড়ে ফেলা লিফলেট দেখে বুঝতে পারেন এগুলো ভারতীয় বিমান। পাক বাহিনীল উদ্দেশ্যে লিফলেটের সারমর্ম ছিল ‘পাবিস্তান আর্মি সারেন্ডার ছাড়া তোমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। তোমরা সারেন্ডার কর। তাহলে প্রাণে রক্ষা পাবে।’ পাশাপাশি বিমান থেকে পাক আর্মিদের অবস্থানস্থল লক্ষ্য করে বোম্বিং করা হয়। সেখান থেকে অগ্রসর হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা কদমতলী এলাকায় চলে আসেন। সোর্স মারফত তারা জানতে পারেন, স্থানীয় ইটখলায় বেশ কিছু সংখ্যক পাক আর্মি তখনও অবস্থান করছে। যেভাবেই হোক তাদের পরাস্ত করতে হবে এমন সংকল্প করেন যোদ্ধারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধারা চান্দাই এলাকার আব্দুল হামিদের বাড়িতে অবস্থান নেন। ইটখলায় হামলা চালানো যায়, এমন সুবিধাজনক স্থান থেকে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাংকার তৈরী করেন।
দু:সাহসী গামার পাক আর্মিকে সারেন্ডারের আহ্বান…
১৫ অগাস্ট সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। মুুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করবেন নাকি আরো কিছু সময় অপেক্ষা করবেন এনিয়ে যখন চিন্তায় মগ্ন ঠিক তখনই গামা ব্যাঙ্কারের উপরে উঠে পাক বাহিনীকে আত্মসমর্পনের আহ্বান জানান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তার এই দু:সাহসী ভুমিকায় বিস্মিত হন সহযোদ্ধারা। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাক আর্মি আত্মসমর্পনের ঘোষণা দেয়। এরপর একে একে প্রায় ৪০জন পাক সদস্য অস্ত্র জমা দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। যুদ্ধের নিয়ম বিরুদ্ধ হওয়ায় আত্মসমর্পনকারীরা করুন পরিণতির হাত থেকে রেহাই পায়। ১৫ ডিসেম্বর পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয় সিলেট।
শাহজালালের দরগাহে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন…
সিলেটকে শত্রুমুক্ত করার পর মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনের জন্য হযরত শাহজালাল (র:) এর দরগাহকে বেছে নেন। সিলেটের আকাশে লাল সবুজের পতাকা উত্তোলনকালে অন্যান্যদের সঙ্গে আনোয়ার উদ্দিন গামাও ছিলেন। এছাড়াও সেদিন যারা পতাকা উত্তোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন মতিন, শওকত, আফরাইন, বদর, জালাল প্রমুখ।
যুদ্ধ শেষে অস্ত্র সমর্পন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্যে বিদেশ গমন…
যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অস্ত্র সমর্পনের নির্দেশ দেওয়া হয়। সিলেট রেজিষ্ট্রারী মাঠে জেলার বেসামরিক প্রশাসক দেওয়ান ফরিদ গাজী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অস্ত্র গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে আনোয়ার উদ্দিন গামা নিজ অস্ত্র জমা দেন।
স্বাধীন দেশে অনাবিল আনন্দে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দিনগুলো কাটলেও গামা একসময় উপলব্ধি করতে পারেন, স্বাধীন দেশকে গড়তে হলে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রয়োজন। তাই কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেন। কী করবেন এ নিয়ে যখন তিনি ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন, তখনই জন্মদাত্রী পরামর্শ দেন বিদেশে চলে যাবার জন্য। বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করেন প্রয়াত স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। ১৯৭২ সালেই চাকুরী নিয়ে পাড়ি জমান জার্মানীতে। জার্মানীর বাংলাদেশী এম্বেসীতে চাকুরী নেন। তখন সেখানে এম্বেসড ছিলেন হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর সবাইকে দেশে ফেরার আহ্বান খন্দকার মোস্তাক সরকার। তবে ঘাতক সরকারের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর সহযোগিতায় চলে আসেন যুক্তরাজ্যে। সেই থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী।


যুক্তরাজ্যের বুকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উদ্যোক্তাদের একজন…
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন ছিল সেখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রতিষ্ঠা করার। ১৯৯৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা সোরাব আলী লন্ডনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একটি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। তার সাথে একাত্মতা পোষণ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনে সহায়তা করেন আনোয়ার উত্তিন গামা। ১৯৯৬ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ লন্ডনের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ লন্ডনের সদস্য সংখ্যা ৩০।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই…
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দন্ডাদেশ চান। যতদ্রুত সম্ভব দেশের শত্রুদের ফাঁসির কাষ্টে ঝুলানোর দাবী জানিয়েছেন তিনি। গামা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে না। শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। তিনি আফসোস করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা হলে আজ দেশকে নানামুখি সংকটে পড়তে হতো না। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে এজন্য দেশ প্রেমিক বাঙালীদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
দেশে ফেরার প্রতীক্ষা…
মুক্তিযোদ্ধা গামা ৩ বছর পর অবসরে যাবেন। এরপর দেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তিনি জানান, দেশে ফিরে জনসেবায় ব্রতী হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার। মানুষের কল্যানে আত্মনিয়োগ করে জীবনের বাকী জন্মভূমিতেই কাটাতে চান। এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় দিন কাটছে তার।

 

Advertisement