রাখাইনে ভারসাম্য ও সংঘাতহীন পদক্ষেপের পক্ষে চীন ও রাশিয়া

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এক উন্মুক্ত ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নিরাপত্তা পরিষদকেই দায়িত্ব নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বেশিরভাগ সদস্য দেশ। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের বিচার দাবি করেছেন। সুইডেন ও নেদারল্যান্ডস জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি মিয়ানমারের এ অপরাধকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তবে স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া বরাবরের মতো মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘে চীনের নিযুক্ত উপ-রাষ্ট্রদূত উউ হাইতাও বলেছেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে রাখাইন ইস্যুটি দ্বি-পক্ষীয়ভাবে সমাধান করা উচিত। সংকট নিরসনে ধৈর্য ধরা উচিত এবং মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনাকে এগিয়ে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য ও সংঘাতহীন পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া।

নিরাপত্তা পরিষদের চলতি আগস্ট মাসের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাজ্য আয়োজিত উন্মুক্ত বিফ্রিংয়ে বক্তব্য দেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস, ইউএনডিপির অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর তেগেগনিঅর্ক গেট্টু এবং ইউএনএইচসিআর এর শুভেচ্ছা দূত ও বিশিষ্ট অভিনেত্রী কেইট ব্লানশেট। এতে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক মাহমুদ আহমাদ। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের বাইরে এই সভায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বক্তব্য প্রদান করে।

জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস গত জুলাই মাসে তার কক্সবাজার সফরের সময় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের যে সকল মর্মস্পর্শী বর্ণনা শুনেছেন তা এই সভায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সমস্যা অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে পারে না। নিরাপত্তা পরিষদ প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট গ্রহণে একতা দেখিয়েছিল, এই একতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন যদি আমরা যথাযথ কাজের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দাবি পূরণ করতে চাই। মহাসচিব গুতেরেস কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। জাতিসংঘ এবং এর বিভিন্ন সংস্থাসমূহকে রাখাইন প্রদেশে বাধাহীন প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।

‘আমরা যেন আর ব্যর্থ না হই’- এই আহ্বান জানিয়ে ইউএনএইচসিআর এর শুভেচ্ছা দূত কেইট ব্লানশেট বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতভেদের ঊর্ধ্বে উঠে নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্যকে কাজ করার আহ্বান জানান ব্লানশেট।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন গত এক বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে রেখে এর সমাধানে কাজ করে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ধন্যবাদ জানান। গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই সুপারিশমালার ভিত্তিতেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হতে পারে মর্মে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের পদক্ষেপসমূহের টেকসই বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো উদারভাবে এগিয়ে আসতে হবে তা না হলে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দেবে।

প্রত্যাবসনের পরিবেশ তৈরিতে তিনি মিয়ানমার কর্তৃক চারটি আশু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন।

সুপারিশগুলো হচ্ছে- রাখাইন প্রদেশের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম ও শহরগুলোতে প্রয়োজনীয় মানবিক ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআরকে বাধাহীনভাবে প্রবেশাধিকার দিতে হবে যা মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পাদিত তাদের সমঝোতা স্মারকে স্পস্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে আটকে থাকা কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়া এবং ফেরত না নেওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের পক্ষ থেকেই তাদের মানবিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।

রাখাইন স্টেটের আইডিপি ক্যাম্প উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং সেখানে আটক মানুষ যাতে নিজ বাসভূমিতে বা তাদের অন্য কোনো পছন্দনীয় স্থানে পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে টেকসইভাবে প্রত্যাবর্তন করতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস ও পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং হিংসা উদ্রেককারী বক্তব্য ছড়ানো যা সহিংসতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে তা দমন করতে হবে।

Advertisement