লতা মঙ্গেশকর আর নেই

ভারতের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর আর নেই।শনিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে তার শরীরের অবস্থার অবনতি হয়।রোববার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।এরআগে,জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। বন্ধ রাখা হয়েছিল লাইফ সাপোর্ট।আশার আলো দেখছিলেন চিকিৎসকরাও। তবে শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক পরিস্থিতি আবারও অবনতি হওয়ায় লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।চিকিৎসকরা জানিয়েছেন,গায়িকার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। সন্ধ্যায় শারীরিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। বোন লতাকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন আরেক কিংবদন্তি আশা ভোঁসলে ও পরিবারের বাকি সদস্যরা।ভারতের নাইটেঙ্গেল হিসাবে পরিচিত লতা মঙ্গেশকর।ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত তিনি।পেয়েছেন পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ,দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার।সেরা প্লে-ব্যাকের জন্য তার ঝুলিতে রয়েছে একাধিক জাতীয় পুরস্কারও।এ উপলক্ষে কিংবদন্তি এই গায়িকার ব্যক্তিগত ও পেশাদারি জীবনের কিছু টুকরো তথ্য পড়ুন।

* ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ইন্দোরে মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর।তার বাবা পন্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর ছিলেন শাস্ত্রীয়সংগীত শিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতা।মা শেবান্তি ছিলেন গৃহিণী।লতা তিন ছোট বোন আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর ও মীনা মঙ্গেশকর এবং ছোট ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

* ১৯৪২ সালে বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ১৩ বছর বয়সী লতাকে পরিবারের জন্য আয়ের হাল ধরতে হয়। এজন্য গান গাওয়া ও অভিনয়ের পথে পা বাড়ান তিনি।

* লতা মঙ্গেশকর প্রথম গান গেয়েছিলেন মারাঠি ছবি ‘কিতি হাসাল’-এর (১৯৪২) জন্য। দুঃখজনক ঘটনা হলো, চূড়ান্ত সম্পাদনায় বাদ দেওয়া হয় ‘নাচু ইয়া গাদে, খেলু সারি মানি হাউস ভারি’ কথার গানটি।

* ‘মজবুর’ (১৯৪৮) ছবিতে প্রথম বড় সুযোগ পান লতা মঙ্গেশকর। এ ছবিতে ‘দিল মেরা তোড়া’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছিলেন তিনি। তবে তার প্রথম তুমুল জনপ্রিয় গান হলো ‘মহল’ (১৯৪৯) ছবির ‘আয়েগা আনেওয়ালা’। এতে অভিনয় করেন প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেত্রী মধুবালা।

* পঞ্চাশের দশকে হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পে অপরিহার্য হয়ে ওঠেন লতা মঙ্গেশকর। তখন থেকেই তার ক্যারিয়ার ক্রমে ওপরে উঠেছে। তবে পঞ্চাশের দশকে শচীন দেব বর্মণের সঙ্গে দ্বৈরথের কারণে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তারা একসঙ্গে কাজ করেননি।

* শচীন দেব বর্মণের পুত্র রাহুল দেব বর্মণের সুরে অনেক গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ‘পরিচয়’ (১৯৭২) ছবির ‘বীতি না বিতাই’। এর জন্য ১৯৭৩ সালে সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

* ১৯৭৪ সালে সবচেয়ে বেশি গানের শিল্পী হিসেবে গিনেস বুকে স্থান পান লতা মঙ্গেশকর।

* নব্বই দশকে এ আর রাহমান ও প্রয়াত গজল সম্রাট জগজিৎ সিয়ের সঙ্গে কাজ করেছেন লতা মঙ্গেশকর। প্রয়াত যশ চোপড়ার প্রায় সব ছবির গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

* গান গেয়ে অনেক সুনাম ও সম্মান অর্জন করেছেন লতা মঙ্গেশকর। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মভূষণ (১৯৬৯), দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৯), ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (১৯৯৩), পদ্মবিভূষণ (১৯৯৯), এনটিআর জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৯), ভারতরত্ন (২০০১)।

* ১৯৯০ সালে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়েন লতা মঙ্গেশকর। তার প্রযোজনায় গুলজার পরিচালনা করেন ‘লেকিন’ (১৯৯০) ছবিটি। এতে ‘ইয়ারা সিলি সিলি’ গানের জন্য তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান লতা। এটি সুর করেন তার ছোট ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

Advertisement