লন্ডনে জ্ঞান পিপাসু প্রয়াত মনি হক কে স্মরণ

ব্রিটবাংলা ডেস্কঃ: বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও জ্ঞান পিপাসু সদ্য প্রয়াত ফয়জুল হক মনিকে শ্রদ্ধার সাথে লন্ডনে স্মরণ করতে গিয়ে তাঁর সুহৃদ স্বজনরা বলেছেন, তিনি ছিলেন প্রতি মুহূর্তের একজন জ্ঞান পিপাসু মানুষ।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর এই জ্ঞানের তৃষ্ণা কখনও মেটেনি।

মনি হকের অকাল মৃত্যুতে সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর ) পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে লন্ডনস্থ সৈয়দপুর যুব কল্যান পরিষদ আয়োজিত এক শোক সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁর নিজ গ্রাম সৈয়দপুরের শোকাতুর বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

তাঁরা বলেছেন ফয়জুল হক মনি, যিনি মনি হক নামে পরিচিত ছিলেন সবার কাছে, তিনি ছিলেন এমন একজন সজ্জন, সৃজনশীল
মানুষ, যিনি নিজে যেমন ছিলেন জ্ঞান পিপাসু, ঠিক তেমনি স্বজন-সুহৃদসহ সকলকেই সেই একই তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্থ করতে চেষ্টা করে গেছেন আজীবন।

সৈয়দপুর যুব কল্যান পরিষদের সভাপতি মাস্তাকুজ্জামান খোকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাজিদুর রহমানের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই শোক সভায় বক্তব্য রাখেন মনি হকের ঘনিষ্ট সহযোগী, রাজনীতিক সুনামগন্জ জেলা আওয়ামালীগের সহ- সভাপতি সৈয়দ আবুল কাশেম, কমিউনিটি নেতা মল্লিক শাকুর ওয়াদুদ, সত্যবাণীর প্রধান সম্পাদক সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা, কবি আহমেদ ময়েজ, কবি মাশুক ইবনে আনিস, কমিউনিটি নেতা শেখ নুর, জামান সৈয়দ নাসের, সৈয়দ আব্দুল কাদির আঙ্গুর, সাদিক কোরেশী, প্রবীন মুরব্বী মাষ্টার ফারুক আহমদ, জুনেদ মিয়া এবং যুব কল্যান পরিষদের সাবেক সভাপতি সৈয়দ সাদেক, সাবেক সেক্রেটারী জিয়া শহীদ, বর্তমান সহসভাপতি সৈয়দ সাজনু, সৈয়দ জামিল, কোষাধ্যক্ষ শেখ রেজোয়ানুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ কামরুল প্রমূখ।

শোক সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত মনি হকের শুভার্থী সৈয়দপুর আদর্শ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান, মনি হকের স্কুল জীবনের সহপাঠী বদরুল ইসলাম খান, শুভার্থী সোহেল আহমদ, জগন্নাথপুর টাইমস এর স্টাফ করেসপন্ডডেন্ট সৈয়দ মামুন সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী উপস্থিত ছিলেন ।

মনি হকের পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তাঁর ভাই আব্দুল হক।

একাডেমিক শিক্ষায় কোন ডিগ্রীধারী না হলেও মনি হক ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র, যার মেধাকে এমসি কলেজের তৎকালীন তাঁর শিক্ষকরা পর্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, শোক সভায় এমনটি জানান বক্তাদের কেউ কেউ। এলাকার তরুনরা তাকে ‘সক্রেটিস’ নামে আখ্যায়িত করতেন,এমন তথ্য দিয়ে কোন কোন বক্তা বলেন, এলাকার তরুণরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবেন এমন স্বপ্ন ছিলো মনি হকের নিত্য সময়ের।

মনি হকের ঘনিষ্ট সহযোগী সৈয়দ কাশেম বলেন, আমাদের সিনিয়র হলেও মনি ভাই ছিলেন বন্ধুর মত। পাঠাগারসহ এলাকার শিক্ষাঙ্গনগুলোর উন্নয়নে তিনি ছিলেন দিল দরিয়া। রাজধানী ঢাকায় বসবাস করলেও এলাকার শিক্ষিত যুব সমাজের সাথে ছিলো তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সৈয়দ কাশেম সাধারণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মনি হকের ভূমিকার বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন তাঁর বক্তৃতায়।

সৈয়দ আনাস পাশা বলেন, বিশ্ব ইতিহাসের প্রতি মনি ভাইয়ের ছিলো আলাদা আকর্ষন, তিনি ছিলেন বইয়ের পোকা। সক্রেটিসের জন্মস্থান এথেন্সে গিয়ে সৈয়দপুরের সক্রেটিসখ্যাত মনি হককে বারবার মনে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘নিজেকে জানো’ স্লোগান দিয়ে ৮০র দশকের শুরুতে সাধারণ পাঠাগারকে কেন্দ্র করে নিজ গ্রাম সৈয়দপুরের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিলো মনি হক ছিলেন তাঁর অন্যতম কারিগর। আনাস পাশা বলেন, সৈয়দপুরে আজকে যে উদ্যমী শিক্ষিত তরুণ সমাজ তৈরী হয়েছে তাঁর পেছনে মনি হকের উৎসাহের অবশ্যই ভূমিকা আছে।

মল্লিক শাকুর ওয়াদুদ মনি হকের আত্মার শান্তি কামনা করে বলেন, তিনি ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী জ্ঞান পিপাসু।

আহমদ ময়েজ মনি হককে দার্শনিক আখ্যায়িত করে বলেন, সাহিত্য বা সাংবাদিকতা এমন একক কোন বিষয়ে মনি হকের বিচরণ সীমাবদ্ধ ছিলোনা। মূলত তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক।

কবি মাশুক ইবনে আনিস স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ প্রবণ হয়ে উঠেন। তিনি বলেন আমার আজকের অবস্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মনি ভাইয়ের। তিনি ছিলেন আমার গাইড, আমার অভিভাবক, যিনি হাত ধরে ধরে আমাকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।

স্মৃতিচারন শেষে প্রয়াত ফয়জুল হক মনির আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বিশিষ্ট মুরুব্বি সৈয়দ আব্দুর রউফ।

Advertisement