শনিবার চ্যানেল এসে ফান্ড রেইজিং : ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে কমিউনিটির দানশীলদের প্রতি আহ্বান

ব্রিটবাংলা ডেস্ক: কোভিড-১৯ লকডাউনের কারণে ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার গত রমজানসহ প্রায় ৬ মাস বন্ধ রাখতে হয়। আর এতে করে মসজিদের দৈনন্দিন আয় অনেক কমে গেছে। বিশাল এই মসজিদ পরিচালনায় যেভাবে ব্যয় হয় সেই অনুপাতে আয় আসেনি। তাই মসজিদ পরিচালনায় সকলকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে আহবান জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ।

গত ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে বিলেতের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানানো হয়। এতে জানানো হয়, আগামী ২৪ এপ্রিল শনিবার বিকেল ৩টা থেকে পরদিন ফজর পর্যন্ত চ্যানেল এসে (স্কাই ৭৭৭) লাইভ ফান্ড রেইজিংয়ে অংশ নেবে ইস্ট লন্ডন মসজিদ। এতে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের সাহায্য প্রয়োজন। ইস্ট লন্ডন মসজিদের ফাইন্যান্স এন্ড এনগেইজমেন্ট ডাইরেক্টর দেলওয়ার খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব খান ও সেক্রেটারি ড. আব্দুল হাই মুর্শেদ। সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে রামাদ্বানে করণীয় বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ূম এবং মোনাজাত করেন ইমাম হাফিজ মাওলানা আবুল হোসাইন খান।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইস্ট লন্ডন মসজিদ বছরের পর বছর কমিউনিটির মানুষকে ধর্মীয়, শিক্ষামূলক এবং সামাজিক সেবা প্রদান করে আসছে। কিন্তু কোভিড-১৯ লকডাউনের কারণে গত এক বছরে রমজানসহ প্রায় ৬ মাস মসজিদটি বন্ধ রাখতে হয়। তবে এই কঠিন সময়েও ইস্ট লন্ডন মস্ক কমিউনিটির প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান অব্যাহত রাখে। কিন্তু দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার কারণে মসজিদের আয় অনেক কমে গেছে। এদিকে মসজিদের দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ এবং মিনারগুলি পুনঃনির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

হালকা ওজনের ফাইবারগ্লাস দিয়ে তৈরি গম্বুজ ও মিনারের ক্যাপগুলো বেশ পুরনো হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারিয়েছে অন্যদিকে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই এগুলো পুনঃনির্মাণ করা জরুরি। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫শ হাজার পাউন্ড। আগামী দুই বছরের মধ্যে গম্বুজ ও মিনারেট পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়েছে মসজিদ। যেসকল দাতা ১ হাজার পাউন্ড করে দান করবেন তারা চাইলে তাদের নাম ‘‘ডোম সাপোর্টার’’ ওয়ালে লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে।
মসজিদের ওয়েবসাইটে ‘‘ডোম অ্যাপিল’’ নামে একটি পেইজ খোলা হয়েছে। এই পেইজ ভিজিট করে গম্বুজ ও মিনার পুনঃনির্মাণের জন্য ডনেশন করা যাবে। মসজিদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, লকডাউনের সময় মসজিদ বন্ধ থাকলে আমাদের অন্যান্য সার্ভিসগুলো চালু ছিলো। ইস্ট লন্ডন মসজিদ বৃটেনের একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় মসজিদটি আজকের এই অবস্থানে পৌঁছতে পেরেছে। আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য এমন একটি মসজিদ রেখে যেতে পারছি-এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।

সহ-সভাপতি আইয়ুব খান বলেন, মসজিদের গম্বুজ ও মিনারগুলোর জীবন-মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে প্রায় ৬ বছর আগে। এগুলোর মেয়াদ ছিলো ৩০ বছর, এখন ৩৬ বছর চলছে। তাছাড়া বর্তমানে মারিয়াম সেন্টারের পাশ দিয়ে ক্রেন ঢোকানোর যে জায়গা আছে সেখানে যেকোনো সময় বিলডিং হয়ে যেতে পারে। যদি বিলডিং হয়ে যায় তাহলে গম্বুজ প্রতিস্থাপনের জন্য ক্রেন ঢোকানো যাবে না। তাই জরুরী ভিত্তিতেই পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে।

সেক্রেটারি ড. আব্দুল হাই মুর্শেদ বলেন, ইস্ট লন্ডন মসজিদ হচ্ছে কমিউনিটির মসজিদ। আমরা কমিউনিটির পক্ষ থেকে এই মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছি। মসজিদটি সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে এবং মানুষ এখানে এসে প্রশান্তিমনে ইবাদত করবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, মারিয়াম সেন্টার নির্মাণ ও সিনাগগ ভবন ক্রয় বাবদ এখনও দুই মিলিয়ন পাউন্ড ঋণ (ক্বরজে হাসানা) আছে। আমরা আগামী ২ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করে মসজিদকে স্বয়ংসম্পুর্ণ করতে চাই। আমরা চাই মসজিদের আয় থেকেই মসজিদ চলবে। এ জন্য আমরা ওয়াকফ ফান্ড চালু করেছি। এই ফান্ডের বিয়োগ থেকে আসা লাভের অর্থে মসজিদ পরিচালিত হবে।

দেলওয়ার খান বলেন, আমরা রামাদ্বানে প্রতিদিন প্রায় ৬শ মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করে থাকি। কিন্তু কোভিড লকডাউনের কারণে গত রামাদ্বানে যেমন তা করা সম্ভব হয়নি তেমনই চলতি রামাদ্বানেও সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত রামাদ্বানে আমরা প্রতিদিন ৩শ প্যাকেট গরম খাবার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করি। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এনএইচএস কর্মীদের জন্য আমার খাবার সরবরাহ করি। গত রামাদ্বানে আমরা প্রায় ৮ হাজার প্যাকেট খাবার বিতরণ করি। একইভাবে এবারের রামাদ্বানেও আমাদের ফুড ডিস্ট্রিবিউশন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

শায়খ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, করোনা মহামারিতে আমরা কত মানুষ হারিয়েছি। আমরাও মারা যেতে পারতাম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন বলে আজ রোজা রাখতে পারছি। আগামী বছর রামাদ্বান পাবো কিনা জানিনা। তাই রামাদ্বানে প্রতিটি মুহূর্ত আমাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমরা তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে। তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে রামাদ্বানে একটেবিলে বসে ইফতার করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।

Advertisement