সিলেটে আইসিইউ বেডের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা

করোনা মহামারির এবারের ঢেউয়ে সিলেট বিভাগের চিকিৎসা ব্যবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে চাপ। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সাধারণ বেডে কোনোমতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া গেলেও মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচাতে মিলছে না প্রয়োজনীয় আইসিইউ বেড। প্রিয়জনকে বাঁচাতে স্বজনরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন। আইসিইউ সংকটের পাশাপাশি অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর এসব কারণে বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।জানা যায়, সিলেট বিভাগের কোটি মানুষের জন্য সরকারিভাবে রয়েছে মাত্র ৩০টি আইসিইউ বেড। যার ১৬টি সিলেটের ডা. শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। আর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছে মাত্র আটটি এবং মৌলভীবাজারের সদর হাসপাতালে আরও ছয়টি আইসিইউ বেড রয়েছে।

সরকারি হাসপাতালের এসব আইসিইউ বেডের বাইরে সিলেট নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও করোনা রোগীদের জন্য কিছু আইসিইউ বেড রয়েছে। এরমধ্যে নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ১৮টি, মাউন্ড অ্যাডোরা হাসপাতালে ৯টি ও নুরজাহান হাসপাতালে আরও ১১ টি আইসিইউ বেড রয়েছে।তবে এসব হাসপাতালে আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি করলে গুনতে হয় লাখ লাখ টাকা। যা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে। রোগীর চাপ বাড়ায় ও আইসিইউ সংকটে বেসরকারি হাসপাতালের এসব বেডও খালি নেই বলে জানা গেছে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কেউ মারা গেলে অথবা সুস্থ হলেই কেবল মিলছে বেড।সিলেটে একটি আইসিইউ বেডের জন্য করোনাক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের স্বজনদের রীতিমতো মাতম চলছে। প্রিয়জনকে বাঁচাতে একটি আইসিইউ বেডের জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা।এদিকে গত বুধবার (৭ জুলাই) সিলেটে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৬২ জনের। এর আগে গত সোমবার সিলেটে আট জন মারা যান। তবে মৃত্যু ও শনাক্ত বাড়লেও সিলেটে বাড়ছে না আইসিইউ শয্যা। এমনকি বাজেট না থাকায় কাঠামো নির্মাণ হলেও থমকে আছে ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের আরও ১০ শয্যার কাজ।সমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, আরও ১০ শয্যার একটি আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ থেকে এটার কাঠামোগত কাজ হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র্রীয় অক্সিজেন বা যন্ত্রাংশের বাজেট না থাকায় তা এখনই চালু করা যাচ্ছে না।

করোনা ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. সৈয়দ নাফি মাহদি বলেন, হাসপাতালে আইসিইউ ও সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি। কোনও শয্যা খালি নেই। তবে প্রতিদিন কয়েকজন হাসপাতাল থেকে ছাড় পেলেও সাথে সাথে রোগী ভর্তি হচ্ছে। আর করোনায় যারা অসুস্থ, তারা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শামসুদ্দিনে বর্তমানে রোগীর এত চাপ যে, করোনা ইউনিটের ১০০ বেডের বাইরে আরও তিনটি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ১০৩ টি বেডই এখন পরিপূর্ণ। আর আইসিইউ’র ১৬টি বেড গত কয়েকদিন ধরেই পরিপূর্ণ। প্রতিদিন ২-৩ জন মুমূর্ষু রোগীকে ফেরত পাঠাতে হচ্ছে। বিষয়টি আমাদেরকেই পীড়া দিচ্ছে।তিনি আরও বলেন, গেল প্রায় ১৫ দিন থেকেই আমাদের এখানে কোনও আইসিইউ বেড খালি নেই। এমনকি সিলেটের কোথাও খালি আছে বলেও আমার জানা নেই। প্রতিদিন আমাদের কাছে অসংখ্য কল আসছে আইসিইউর জন্য। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকেও ফোন দিয়ে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা দিতে পারছি না।স্থাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুরো সিলেট বিভাগের সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা রয়েছে ৪৪৮টি। যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। এরমধ্যে সিলেট বিভাগের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে রয়েছে ১৬টি আইসিইউসহ ১০০ শয্যা। এছাড়া খাদিম শাহপরাণ হাসপাতালে ৩১, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ১০০, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ৬টি আইসিইউ শয্যা মিলে ৫৬টি ও রাজনগর হাসপাতালে ৩০টি রয়েছে। তবে এসব হাসপাতালের মধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে করোনা ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে।

এদিকে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের ওপরও চাপ বেড়েছে। ঠিকমতো সরবরাহ না থাকলে যেকোনও সময় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায়।তিনি বলেন, মারাত্মকভাবে করোনা আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের খরচ বেড়েছে। অক্সিজেনের বেশি খরচ হওয়ার কারণে অক্সিজেন প্লান্টগুলো চাপ নিতে পারছে না। সেজন্য সিলেটে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিতে পারে। তবুও অক্সিজেনের সংকট যাতে না হয় সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যদি সিলেটে অক্সিজেনের সংকট হয় তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সিলেটের করোনা ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১০ হাজার ও ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩০ হাজার লিটার অক্সিজেনের প্লান্ট থাকলেও নিয়মিত অক্সিজেনের যোগান মিলছে না। দেশের অন্যান্য স্থানে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অক্সিজেন কোম্পানিগুলো লকডাউন ও পরিবহনের অজুহাত দেখিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণের অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছে না। অক্সিজেন চেয়ে একাধিকবার তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি

Advertisement