সিলেট পুলিশ লাইনসে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘স্মৃতি ৭১’-এর উদ্বোধন

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে সিলেট পুলিশ লাইনসে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘স্মৃতি ৭১’-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে সিলেট নগরীর রিকাবিবাজার জেলা পুলিশ লাইনসের ভেতরে নির্মিত এ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করা হয়। সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম ও সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম এর উদ্বোধন করেন।পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সিলেটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন অনেকে। তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য মানুষকে গণকবর দেওয়া হয় শহরের রিকাবিবাজার এলাকার পুলিশ লাইনসের ভেতর। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর এখানে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হলো স্মৃতিস্তম্ভ। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী- মুক্তিযুদ্ধের পরপরই গণকবরটি চিহ্নিত করা হয়। রিকাবিবাজারের পার্শ্ববর্তী মুন্সিপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে ফেলে রাখে। পরে এসব শহীদের মরদেহ এনে স্বজন ও পরিচিতজনেরা পুলিশ লাইনসের ভেতরে একটি ডোবায় গণকবর দেন। তবে কতজনকে এখানে গণকবর দেওয়া হয়েছে, এমন সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও সংরক্ষিত না থাকলেও গণকবর দেওয়া ৮ জন শহীদের নাম-তথ্য জানা গেছে। তারা ওই সময় পুলিশ বাহিনীতে চাকরিরত ছিলেন। তারা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক আবদুল লতিফ, হাবিলদার আবদুর রাজ্জাক, কনস্টেবল মোক্তার আলী, শহর আলী, আবদুস ছালাম, মো. হানিফ ব্যাপারী, মনিরুজ্জামান ও পরিতোষ কুমার। এসকল পুলিশ সদস্য ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল জিন্দাবাজার এলাকার তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংকে (বর্তমানে সোনালী ব্যাংক) দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যাংকের টাকা লুটের উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে। পরে ৬ এপ্রিল এসব শহীদকে পুলিশ লাইনসে গণকবর দেওয়া হয়। এর বাইরে শহরে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ অনেককেও এখানে কবর দেওয়া হয়েছে।সিলেটে বীর শহীদদের গণকবর সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেও ‘স্মৃতি ৭১’ স্থাপন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের প্রচেষ্টায় ও জেলা পুলিশের উদ্যোগে এ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার নিশারুল আরিফ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আল আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক ইকরামুল কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট অনলাই প্রেসক্লাব সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ রানা প্রমুখ।

Advertisement