স্মরণে বরন : আলহাজ্ব আইয়ুব আলী চেয়ারম্যান

।। মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম রাজু ।।

পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকে একের পর মানুষ আসছে। মহান স্রষ্টা কার জন্যে কতটুকু হায়াৎ কিংবা জীবন বরাদ্ধ দিয়েছেন একমাত্র তিনিই জানেন।

এই অজানা এক জীবনে সবাই নিজ নিজ জ্ঞান ও মেধানুযায়ী অনেকে কিছু করেছে এবং করছে। আবার সময় শেষ হলে চলেও যাচ্ছে! কেউ বিদায়ের কিছুদিনের মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ কর্মগুণে দীর্ঘদিন মানুষের মণিকোঠায় বেঁচে রয়েছেন। তাঁদেরর একজন হলেন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ৫ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব আইয়ুব আলী। পিতা মরহুম মোঃ নজর উল্লাহ’র চার ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।

সুন্দর চেহারার অধিকারি এই মানুষটি জীবনের শুরু থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজও কর্মে রেখেছেন জ্ঞান ও মেধার স্বাক্ষর। পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যদিয়ে গড়ে উঠেন মানুষের মতো একজন মানুষ। চমৎকার আচার আচরণের মাধ্যমে জয় করেন মানুষের মন, ঠাই করে নেন জনতার মণিকোঠায়।
যা তাঁকে নিয়ে যায় অন্য রকম এক উচ্চতায়।

পড়াশোনা শেষে সমাজ ও জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। এখানেও সফল হন। সামনে আসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রার্থী হন চেয়ারম্যান পদে। মহান স্রষ্টার রহমত ও জনতার ভোটে পেয়ে যান সফলতা। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সুন্দর ব্যবহার আর সেবার বদৌলতে চিরচেনা ছাতা প্রতীক নিয়ে লড়ে বারবার নির্বাচিত হন চেয়ারম্যান। ছাতা, আমাদের ভাষায় ছাত্তি, ছাতা বা ছাত্তি যাই হোক এটাকে বলা হত উনার লক্ষী প্রতীক। সদা হাস্যুজ্জ্বল এই মানুষটি ছিলেন উদার মনের অধিকারি।

উনার উদারতার একটা উদাহরণ দেই। উনার আমলে আসে সড়ক বাঁধার কাজ। আমরা তখন পুরাতন বাড়িতে। আমাদের মুরব্বিগন গিয়ে আবদার করেন হাওড়ের ঢেউয়ের সাথে প্রত্যেকটি বছরই লড়াই করতে হয়। মেহেরবানি করে কবরস্থানের ওখান থেকে একটু দক্ষিণ পশ্চিমদিকে যদি সড়ক নিয়ে যেতেন তাহলে আমরা বেঁচে যেতাম। উপস্থিত কারো কারো আপত্তি থাকার পরও তিনি সেদিকেই নিয়ে গেলেন। যার ফলে ঢেউয়ের থাবা হতে বাড়িটি রক্ষা পায়। ঘটনাটি আমার জন্মের আগের। মুরব্বিদের কাছে গল্পটা অনেকবার শুনেছি।

রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ পঞ্চায়েত বিচারক। ভাটি বাংলায় যথেষ্ট পরিচিত ও সুনাম ছিল তাঁর।
খুব ভেবে চিন্তে অল্প কথা বলতেন কিন্তু যাই বলতেন এক্কেবারে নির্ভেজাল মূল্যবান।

না ছিল পেশি শক্তি না ছিল লাঠিয়াল বাহিনী। মেধা ও যোগ্যতার বদৌলতে  এক নাগারে ২২ বা ২৩ বছর ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নোয়াগাঁও গ্রামের নিজ বাড়িটি বড় বাড়ি থেকে পরিচয় লাভ করে চেয়ারম্যান বাড়ি হিসেবে। এলাকার পাশাপাশি দূর দূরান্তেও এক নামে পরিচিত নোয়াগাঁও চেয়ারম্যান বাড়ি।

কবে যে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন তা সঠিক তথ্য জানা নেই। তবে কিছুটা ধারনা পেয়েছিলাম একটি ঘটনা থেকে। তখন তিনি দায়িত্বে নেই। আনুমানিক সাতাশ-আঠাশ বছর আগে উনার গ্রামের একজনের বাড়িতে গেলাম। বাড়ির কর্তা এবং তার ছেলেসহ ছয় সাতজন ছিলাম আমরা।
দেখা গেল উঠোনে ছোট্ট একটি কোদাল, যা গৃহস্তালি কাজে ব্যবহৃত হয়, মনে হলো অনেক পুরাতন।
কোদালের আলোচনাটা আসতেই কর্তা বলে উঠলেন, এটা আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব যেবছর প্রথম চেয়ারম্যান হয়েছিলেন সেই বছরকার।
একথা শুনে কর্তার কাছে পুরো ইতিহাসটা বলার অনুরোধ করলাম।

তিনি বললেন, আগেকার সময়ে বিভিন্ন জেলার লোকজন বৈশাখে ধান কাঁটতে আসতো। সেবছর সময়ের আগে এসে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, বসে থেকে লাভ কি ধান আসবার আগ পর্যন্ত কাজ করো। কোদাল-টুকরি বানিয়ে দিয়ে সড়কে মাটি কাঁটার কাজে লাগিয়ে দিলেন। ওরা
যাবার বেলা ওই কর্তা তাদের কাছ থেকে কোদালটি কিনে রাখেন। ২৭ থেকে ২৮ বছর আগে তিনি অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগের কথা বলছিলেন।

মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় আজীবন ছিলেন রাজনীতির মাঠে। ছয়জন কন্যা এবং তিনজন পুত্র সন্তানের গর্বিত পিতা চেয়ারম্যান সাহেব ছিলেন শান্তির নীঢ়। নেতৃত্বের কুঠির এক বটবৃক্ষ। ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে তিনি চলে যান মাবুদের সান্নিদ্ধে। পরিবারবর্গ বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন।

মানুষ চলে যায়। গুণ ও কর্ম দ্বারা বিদায়ের পরও স্মৃতিতে বহুদিন বেঁচে রয়। আলহাজ্ব আইয়ুব আলী চেয়ারম্যান সাহেব তেমনি একজন মানুষ ছিলেন। মহান আল্লাহ রাব্বুলের দরবারে চেয়ারম্যান সাহেবের জান্নাতুল ফিরদাউস ও পরিবারবর্গের দীর্ঘায়ু সুস্বাস্থ্য এবং সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।

লেখক : সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী।
০৮.০২.২০২১.

Advertisement