স্লোগান-মিছিলে সমাবেশস্থলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা

প্রায় পাঁচ বছর পর আজ যশোরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে যশোরে পৌঁছেছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারে করে যশোর মতিউর রহমান বিমানঘাঁটিতে নামেন তিনি। সেখানে কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার পর দুপুর ২টার দিকে তিনি যশোর শামস্–উল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভায় ভাষণ দেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে উৎসবের শহরে পরিণত হয়েছে যশোর।  সকাল থেকেই দলে দলে যশোরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে জড়ো হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। স্লোগান ও বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে সারি সারি মিছিল নিয়ে শহরের দিকে আসছেন তারা। শহরের পালবাড়ী মোড়, মনিহার, চাচড়া মোড়, চাচড়া ডালমিল রোড দিয়ে নেতাকর্মীরা স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে প্রবেশদ্বারে জড়ো হয়েছেন। শহরের বাইরের নেতাকর্মীরা যারা বাসযোগে সমাবেশস্থলে এসেছেন, ২০টি স্পটে তাদের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশস্থলে যোগ দিতে শুধু যশোর নয়; জেলার বাইরে ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা থেকেও অসংখ্য নেতাকর্মী যশোরে এসেছেন।

বিকেল ৩টায় এ জনসভায় বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। তার ঐতিহাসিক এ জনসভা ঘিরে আওয়ামী লীগসহ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতকর্মীরা উজ্জীবিত রয়েছেন।যশোর শহরজুড়ে বিরাজ করছে সাজসাজ রব। প্রচারে মুখর শহরসহ পুরো জেলা। জনসভার জন্য শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মাইক বসানো হয়েছে। মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে রংবেরঙের ফেস্টুন। তোরণ নির্মাণ করে শহরকে সাজানো হয়েছে ভিন্ন রূপে। এর পাশাপাশি শহরের সব প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে পড়েছে নতুন রঙের প্রলেপ। পৌরসভা শহরের রাস্তাঘাটও করা হয়েছে ঝকঝকে। ফলে শহরের চেহারা পাল্টে গেছে।জনসভাকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে পাঁচ হাজারের বেশি পুলিশ। সাদা পোশাকেও পুলিশ মোতায়েন থাকবে। যশোর ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, মাগুরা, বাগেরহাট, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ জেলা থেকে বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের আনা হয়েছে। র‌্যাবের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া পুলিশ লাইনসে প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্স। যে কোনো মুহূর্তে তারা যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এ ছাড়া সভাস্থলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোন রুট দিয়ে প্রবেশ করবেন, কোথায় গাড়ির পার্কিং থাকবে, সে জন্য আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশ ও ট্রাফিক সার্জেন্টরা থাকবেন। সভা শেষে যেন সহজে মানুষ বাড়ি পৌঁছাতে পারেন, সে জন্য ট্রাফিক পুলিশকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

র‍্যাব-৬-এর সার্জেন্ট মো. শহিদুল জানান, জনসভাস্থল ছাড়াও আশপাশে ১৩০ জন র‍্যাব সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এরই মধ্যে শহরের প্রতিটি প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।জনসভাকে কেন্দ্র করে সাতটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের দুটি টিমে ১৫ জন ও সিভিল সার্জন অফিসের পাঁচ টিমে রয়েছেন ৭৮ জন। এ ছাড়া হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার এবং প্রধানমন্ত্রীর রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী তিনজন রক্তদাতাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।সিভিল সার্জন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ও প্রধান সহকারী পারভীন আক্তার বানু জানান, সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের নির্দেশনায় পাঁচটি মেডিকেল টিমের ৭৮ জনের নামের তালিকা প্রস্তুত করে প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। প্রাথমিক চিকিৎসায় তাদের কাছে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে।

সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে গঠন করা মেডিকেল টিমের সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে দুটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জনসভাস্থলে অবস্থান করা টিমে দায়িত্ব পালন করবেন মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. গৌতম কুমার আচার্য্য, অর্থোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম, কার্ডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. তৌহিদুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ নার্স রওশনারা, কার্ডিওগ্রাফার দীপক রায়, অফিস সহায়ক কামাল হোসেন ও গোলাম সরোয়ার। হাসপাতালে অবস্থানকারী টিমে থাকবেন সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নূর কুতুবুল আলম, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. গৌতম কুমার ঘোষ, অর্থোসার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মোশাররফ হোসেন, কার্ডিওলজিস্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. খন্দকার রফিকুজ্জামান, সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসরিন সুলতানা রিনা, নাসরিন আক্তার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পারভেজ মোশাররেফ হোসাইন, এসএসিএমও ফিরোজ আহম্মেদ, অফিস সহায়ক আবুল কালাম আজাদ ও আবদুল মালেক।ডা. আখতারুজ্জামান আরও জানান, অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু হাসনাত ও অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিবের নেতৃত্বে অপারেশন থিয়েটার সুসজ্জিত রাখা হবে। এ ছাড়া প্যাথলজিস্ট ডা. আবুল হাসানকে প্রধানমন্ত্রীর রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী তিনজন রক্তদাতাকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি জেনারেটর থাকবে।যশোর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মনোরঞ্জন সরকার জানান, ফায়ার সার্ভিসের চারটি ও ডুবুরির ৪টি ইউনিট প্রস্তুত থাকবে।জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ জানান, জনসভাস্থলে আসা মানুষের জন্য চারটি সাবমার্সিবল ও ২০টি ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ৮০টি অস্থায়ী টয়লেট।

Advertisement