৮ ভোটে হেরে গেলেন ছাত্রদলের সেই শ্রাবণ

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে মাত্র ৮ ভোটে হেরে গেছেন আলোচিত নেতা রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। ছাত্রদল করায় যার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করে বাবা যশোর আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম।

বুধবার রাতে কাউন্সিলররা সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করেন। রাজধানীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাড়িতে এই ভোটাভুটি হয়।

কাউন্সিলরদের বোটে ছাত্রদলের নতুন সভাপতি হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ইকবাল হোসেন শ্যামল।

ফজলুর রহমান খোকনের কাছে হেরে গেছেন রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সভাপতি পদে জয়ী হতে হয়েছে খোকনকে। তিনি পেয়েছেন ১৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ পেয়েছে ভোট ১৭৮।

আর সাধারণ সম্পাদক পদে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন শ্যামল। তিনি পেয়েছেন ১৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাকিরুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৪ ভোট।

ষষ্ঠ কাউন্সিলে ৯ জন সভাপতি প্রার্থী এবং ১৯ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর মধ্য থেকে এই দুজনকে বেছে নিয়েছেন কাউন্সিলররা। সারা দেশে ছাত্রদলের ১১৭টি সাংগঠনিক শাখার ৫৩৪ কাউন্সিলরের মধ্যে ৪৮১ জন ভোটাভুটিতে অংশ নেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। তিনি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তার বাবা যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান। তার তিন ভাই যশোর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

শ্রাবণ ছাত্রদল করায় তার সঙ্গে পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করার ঘোষণা দেন বাবা রফিকুল ইসলাম। কিছুদিন আগে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শ্রাবণের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ছেলে ভিন্নমতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ১৫ বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানেও শ্রাবণ অংশ নেননি। অথচ একটি মহল প্রচার করছে আমার পরিবারের বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ আছে।

লিখিত বক্তব্যে কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমি জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পদক, কেশবপুর উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আমার পাঁচ ছেলে ও এক কন্যাসন্তান সবাই সাবালক-সাবালিকা।

তিনি বলেন, আমার জ্যেষ্ঠপুত্র কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্তা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত হয়ে নৌকা মার্কায় সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দ্বিতীয় ছেলে কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না কেশবপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি। তৃতীয় ছেলে কাজী মাযাহারুল ইসলাম সোনা যশোর জেলা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। চতুর্থ ছেলে কাজী আযহারুল ইসলাম মানিক কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক।

কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কনিষ্ঠ ছেলে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৩ সালে ভর্তি হয়। তখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছাত্রদলের সংগঠনে জড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ কমে আসে।

তিনি বলেন, বারবার আমি এবং আমার পরিবারের সবাই অনেক চেষ্টা করেও ছাত্রদল ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করাতে ব্যর্থ হয়েছি। এ জন্য আমার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করি। সেও আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখে না।

কাজী রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সঙ্গে শুধু বায়োলজিক্যাল রিলেশনশিপের কারণে একটি কুচক্রী মহল মিথ্যাচার করছে যে, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের যোগাযোগ আছে এবং আমার পরিবার বিএনপি করে। তারা এই অভিযোগ ঢাকা পর্যন্ত করে এসেছে। যারা আমার অতীত ও বর্তমান জানেন না, তাদের এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে বিধায় আমি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা অবহিত করলাম।

শ্রাবণের বাবার সংবাদ সম্মেলনে পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শ্রাবণ আরও লাইমলাইটে চলে আসেন। তবে শেষ পর্যন্ত কাউন্সিরদের ভোটে অল্পের জন্য হেরে যান এই ছাত্রদল নেতা।

Advertisement