বাংলা মিডিয়ার একশত বছরের গৌরব অর্জন নিয়ে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলেরআয়োজন

আহাদ চৌধুরী বাবু : ব্রিটেনে বাংলা মিডিয়া একশত বছর পাড়ি দিয়েছে গত বছর৷একশত বছরের গৌরব অর্জন নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সমৃদ্ধ ইতিহাসকে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে৷

ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার বিশাল সমৃদ্ধ ইতিহাস যেমন রয়েছে তেমনি এই বিশাল অর্জন সম্ভব হয়েছে কিছু সৃজনশীল মানুষের দেশের প্রতি মায়ের প্রতি ভালোবাসা এবং নিজেদের দায় এবং দায়বদ্ধতার নিরিখে ভিন্ন সংস্কৃতিতে কঠিন চ্যালেঞ্চ গ্রহন৷যার ধারাবাহিকতার ফসল বর্ণবাদ এবং বৰ্ণ বৈষম্য কে পরাজিত করে তৃতীয়বাংলা প্রতিষ্ঠা এবং মুলধারায় নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া ৷ বাংলা মিডিয়ার শতবছরের আলোচনা বা গবেষণায় প্রারম্ভিক সময় থেকে চলমান সময়কালের বিষয়গুলো স্থান পায় গতানুগতিক ভাবে কিন্তু এই অর্জনের বা প্রাচীর নির্মানের যাদের শ্রম ঘাম বা অর্থের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত এবং এখন পর্যন্ত ঠিকে আছে তাদের অৰ্জনকে বড় করে দেখা বা স্বীকৃতির বিষয়টির সব সময় অন্তরালে থাকে ৷ একশত বছরের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আগামীর যাত্রার বিষয়ে পরিকল্পনা এবং ব্রিটেনের বাস্তবতার আলোকে গ্রহন যোগ্য পদক্ষেপের বিষয়টি সব সময় উপেক্ষিত ৷ প্রতিযোগীতার বাজারে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়ে সমন্বিত উদ্দ্যোগ নিতে ব্যর্থতার পরিসংখ্যান বাড়ছে ৷বন্ধ হচ্ছে টিভি, পত্রিকা এমন কি বিশালসম্ভবনাময় ইন্ডাস্ট্রির সংবাদ কর্মীদের নানান সুযোগ সুবিধা, বেতন পরিশোধ তাদের কর্ম ক্ষেত্রের প্রশিক্ষন সহ অন্যান্য বিষয়ে সব চেয়ে অমানবিক পন্থার আশ্রয় নেওয়া হয়।

কোন কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের আচরন ধর্য্য ধরে সহ্য করতে হয়৷ অনেকে আবার বিপদে পড়ে মানিয়ে নিতে বাধ্য হন ৷তবে বাস্তবতার নিরিখে তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতের দিকে যাত্রাকে নিরাপদ করতে প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। বাংলা সংবাদপত্রের অনলাইন এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সর্ম্পক উন্নয়ন বাজার সৃষ্টির এবং ধরে রাখার জন্য একটি গ্রহন যোগ্য নীতিমালা এবং বিজ্ঞাপন নীতিমালা প্রণয়ন ব্রিটেনের বাংলা গনমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা এটি ৷

ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার একশত বছর উপলক্ষে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের বিখ্যাত কুইনমেরি ইউনিভার্সিটির পিন্টার স্টুডিওতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিলেতে বাংলা সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বিভিন্ন অনলাইন সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার।অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুবায়ের। স্বাগত বক্তব্য দেন সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এর এডিটর-ইন-চিফ তৌফিক ইমরোজ খালিদী ৷

মুল প্রবন্ধে ব্রিটেনের শত বছরের অর্জনের বিষয়গুলো স্থান পায় ৷ তাছাড়া সময়ের ব্যাবধানে বৰ্তমান বাস্তবতার বিষয়টি স্থান পায় ৷ এখানে উল্লেখ্য ব্রিটেনে প্রথম বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালের ১ নভেম্বর। সত্যবাণী নামের এই সংবাদপত্র টিকে ছিল ১৪ মাস। সেই থেকে শতবর্ষে শতাধিক বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সবচেয়ে পুরানো সংবাদপত্রের বয়স অর্ধশতক।

তবে এই পাঁচ দশকের মধ্যে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্র বিগত ২০, ৩০ ও ৪০ বছর ধরে প্রকাশনা চালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে পুরনো টেলিভিশন স্টেশন ১৮ বছর পার করেছে। আছে বাংলা রেডিও স্টেশনও। সাম্প্রতিককালে যোগ হয়েছে অনেক অনলাইন পত্রিকা ৷ বিডি নিউজ এর এডিটর-ইন-চিফ তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, ‘‘ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষ উদযাপনের আজকের অনুষ্ঠানের অংশ হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। শুধু ব্রিটেনে কমিউনিটির ভিত্তি সুদৃঢ়ই নয়, শিকড় ভূমিতে ফেলে আসা স্বজাতির বিভিন্ন ক্রান্তিকালেও বারবার পাশে দাঁড়িয়েছে ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়া।’’ শতবর্ষের ইতিহাস পর্যালোচনায় এমনটিই তাঁর মনে হয়েছে বলে জানান বিডিনিউজ সম্পাদক।
অবাধ তথ্য প্রবাহের সাম্প্রতিক সময় মিডিয়ার স্বর্ণযুগ হলেও বাংলাদেশে এর নেতিবাচক বিভিন্ন দিক নিয়েও অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে কথা বলেন তৌফিক ইমরোজ খালিদি। তাঁর মতে, মিডিয়ার জন্য বাংলাদেশে উপযুক্ত কোন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা নেই। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে মিডিয়ার সংখ্যা, পাঠক বা দর্শকদের মাঝে যাদের কোন ভিত্তিই নেই। সুনির্দিষ্ট প্রমান ছাড়াই সুধুমাত্র টিআরপি বাড়ানোর জন্য যা ইচ্ছে তাই প্রকাশ বা প্রচার করা হয় এসব মিডিয়ায়। বিডিনিউজ সম্পাদক বলেন, ‘ইচ্ছে করলেই যে যা ইচ্ছে তাই আমরা প্রকাশ বা প্রচার করতে পারিনা এটি আমাদের বুঝতে হবে। যারা বুঝেনা তাদের জন্য প্রয়োজন যে রেগুলেটরী সিস্টেম সেটি নেই বাংলাদেশে’। শুধু সংবাদ মাধ্যম নয়, সোস্যাল মিডিয়াও বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রনহীন, এমন মন্তব্য করে তৌফিক খালিদি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্লগাররা পর্যাপ্ত রিসার্চ ছাড়াই সোস্যাল মিডিয়ায় তাদের লিখা আপলোড করেন। আমি এ বিষয়ে বলার চেষ্টা করার কারনে ভুল বুঝছেন তারা আমাকে’। বিডিনিউজ সম্পাদকের মতে এক্সট্রা অর্ডিনারী মিডিয়া গ্রোথ যে সমাজের জন্য ভালো নয়, তা বার বার প্রমান হচ্ছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের মিডিয়া বাইং ইন্ডাষ্ট্রি দূর্নীতির আখড়া এমন মন্তব্য করে তৌফিক খালিদি বলেন, ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় শীর্ষ হিটের অনলাইন হওয়ার পরও বিডিনিউজ দারিদ্রের মধ্যে আছে। অপ্রতিরুদ্ধ গতিতে রাতারাতি গজিয়ে উঠা সংবাদ মাধ্যমগুলো, যাদের সার্কুলেশন বা পাঠক নেই বললেই চলে তারাও রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের বেলায় প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যমগুলোর সমানে সমান দাবিদার’। তাঁর মতে দূর্নীতিগ্রস্থ মিডিয়া বাইং ইন্ডাষ্ট্রীর কারনেই এটি হচ্ছে’। তিনি বলেন, মিডিয়া বাইং ইন্ডাষ্ট্রীর হর্তাকর্তারা টিভি টকশোতে বড় বড় কথা বলেন, শিল্প-সাহিত্য চর্চা করেন, আর আড়ালে করেন দূর্নীতিকে লালন।
প্রশ্নত্তোর পর্বে আইসিটি এক্ট নিয়েও কথা বলেন তওফিক খালিদী। বাক স্বাধীনতার অপব্যবহার রোধে আইসিটি এক্ট ৫৭’র মত আইন প্রয়োজন এমন মন্তব্য করলেও বাংলাদেশে প্রভাবশালীদের কারনে এই আইনের অপব্যবহার হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

বিডি নিউজ এডিটর বলেন সাংবাদিকরা কেহ কেহ ভালো কাজ করছেন আবার অনেক আছেন আপোষের জন্য বসে থাকেন ৷কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত সংবাদ প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি বলেন সব চেয়ে আদর্শবাদী সাংবাদিক কে বলতে হয় মাস শেষে ঘর ভাড়া দিতে হয় ৷

তাই মাস শেষে বেতনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হয় ৷তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন তফাজ্জুল হোসেন মানিক মিয়া সন্তোস গুপ্তরা ভালো সাংবাদিক ছিলেন না তারা ছিলেন কলাম লেখক তবে তখন কার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে তাদের রাজনীতিক চিন্তা চেতনার প্রতিফলন ছিলো তাই বিশ্বাস করেছি এবং ধারণ করেছি।

এই অপব্যবহার নিয়ন্ত্রনে রাষ্ট্র ব্যর্থ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন ৷ প্রশ্ন উত্তর পর্বে অংশ নেন সাংবাদিক রহমত আলী, উৰ্মি মাজহার, শামসুল আলম লিটন, আব্দুল কাদির মুরাদ প্রমুখ ৷

তবে  বিলেতে বাংলা মিডিয়ার সেমিনারে কিছু হতাশাজনক ঘটনাও ঘটেছে আমার। বিলেতের বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে সংশ্লিস্ট ব্যক্তিদের কথা শুনা প্রয়োজন ছিল।

প্রয়োজন ছিল এখানে বর্তমানে যারা বাংলা মিডিয়ায় বিনিয়োগ করে, কোনোরকম বাংলা মিডিয়াকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাদের কথা শুনা। বিলেতে বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষ নিয়ে গবেষণা করেছেন ফারুক আহমদ। তার গবেষণাগ্রন্থ ‘ বিলেতে বাংলা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা’ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হয়, সেই ফারুক আহমদকে দর্শক গ্যালারিতে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখতেও শুভ লাগেনি অনেকের কাছে। যদিও তাকে সভার শেষ পর্যায় পরিচয় করেদেওয়া হয়

অন্যদিকে বিলেতে বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষ নিয়ে প্রেস ক্লাব  একটি অনুষ্ঠান করবে, আর তাতে দর্শক সারিতে মাত্র জনাত্রিশেক মানুষ বসা থাকবেন! এটাওতো মেনে নিতে কষ্ট হয়।এক্ষেত্রে বাংলা সংবাদপত্র ও মিডিয়া সর্ম্পকে অনেকেই অনেক পরিকল্পনার কথা বলেন কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না ৷

Advertisement