অভ্যুত্থান চেষ্টা: বাদশার ছোট ভাইসহ সৌদি রাজপরিবারের শীর্ষ তিন সদস্যকে আটক!

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: কথিত এক অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাদশা সালমানের এক ভাই ও ভাতিজাসহ রাজপরিবারের সিনিয়র তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে সৌদি আরবে। আটক ব্যক্তিরা হলেন বাদশা সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ, সাবেক ক্রাউন প্রিন্স ও আহমেদ বিন আবদুল আজিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন নায়েফ এবং রয়েল কাজিন প্রিন্স নাওয়াফ বিন নায়েফ। এর মধ্যে প্রথম দু’জন সৌদি আরবে বড় ধরনের প্রভাবশালী। এসব আটকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের। নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, রাজপরিবারের এসব সদস্যকে আটক করা হয়েছে কথিত এক অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে। সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এ রিপোর্টের সত্যতা নিশ্চিত বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করেনি। এতে আরো বলা হয়, এর আগে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নির্দেশ দেয়ার পর রাজধানী রিয়াদে রিজ কার্লটন হোটেলে সৌদি আরবের রাজপরিবারের অনেক সদস্য, মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।

২০১৬ সালে নাটকীয়ভাবে তৎকালীন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন বাদশা সালমান। তারপর থেকে সৌদি আরবের ক্ষমতার মূলে এই মোহাম্মদ বিন সালমানই রয়েছেন বলে মনে করা হয়। তারপর অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। বিশ্বজুড়ে বহু বিতর্ক হয়েছে তাকে নিয়ে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্টে বলেছে, সর্বশেষ আটকের ঘটনা ঘটে শুক্রবার খুব সকালে। পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার আগে পর্যন্ত সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। ২০১৭ সালে তাকে গৃহবন্দি করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, রাজপরিবারের এসব সদস্যদের বাড়িতে মুখোশ ও কালো পোশাক পরে গার্ডরা উপস্থিত হয়। তারা তাদের বাড়িঘর তল্লাশি করে।

যদি মার্কিন মিডিয়ার এই খবর সত্যি হয় তাহলে এটা হবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের তার পদ বা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার আরো বড় একটি উদ্যোগ। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশা আবদুল আজিজের যেসব ছেলে বর্তমানে জীবিত আছেন তার মধ্যে অন্যতম প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ। তাকে ক্ষমতাসীন রাজপরিবারের বয়ষ্কদের মধ্যে খুব বেশি সম্মান করা হয়। অন্যদিকে সিনিয়র অন্য প্রিন্সদের মধ্যে মোহাম্মদ বিন নায়েফ ছিলেন ক্ষমতার পরবর্তী উত্তরাধিকারী। কিন্তু সেই সুযোগ আসার আগেই এখন থেকে তিন বছর আগে আকস্মিকভাবে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেন বাদশা। এর আগে একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাকে সৌদি আরবে আল কায়েদাকে পরাজিত করার কৃতিত্ব দেয়া হয়। এই আল কায়েদা এক সময় সৌদি আরবকে গ্রাস করেছিল।

ওদিকে ভীষণ রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারে ধারাবাহিকভাবে পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর ২০১৬ সালে বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যাপক প্রশংসা করা হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তবে বেশ কিছু কেলেঙ্কারি তাকে ঘিরে ধরেছে। তার মধ্যে অন্যতম ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেটের ভিতরে ভিন্ন মতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকান্ড। অভিযোগ আছে, এই হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে তার নির্দেশে। তবে সৌদি আরব থেকে তা জোর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

ওদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, ২০১৭ সালে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তারপর থেকেই বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বাদশা সালমানের ছেলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতাকে আকড়ে ধরেন। ওই বছরের শেষের দিকে তিনি দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে রাজপরিবারের বিপুল সংখ্যক শীর্ষ স্থানীয় সদস্য, প্রিন্সকে আটক করেন। অনেক পরে পর্যায়ক্রমে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স বলছে, শুক্রবারের আটক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সকালে। কিন্তু কি কারণে এই আটক, তার নেপথ্য কারণ তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে যাদেরকে আটক করা হয়েছে, তারা একটি কথিত অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছিলেন বলে রিপোর্ট করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। বিভিন্ন সূত্র বলেছে,ক্ষমতাকে নিজের কব্জায় নেয়ার কারণে ক্ষমতাসীন পরিবারের বিভিন্ন প্রভাবশালী শাখায় ক্ষোভ ছড়িয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এ ছাড়া সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় তেল স্থাপনায় এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা হয়। কিন্তু তা প্রতিরোধে তার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ওইসব সদস্যের মধ্যে। ২০১৮ সালে হত্যা করা হয় সুপরিচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে। এর সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্সকে জড়িয়ে অনেক রিপোর্ট প্রকাশ হয়।

সূত্রগুলো বলেছেন, সৌদি আরবে বাদশা সালমানের ‘ফুল ব্রাদার’ বা আপন ভাইদের মধ্যে জীবিত আছেন একমাত্র প্রিন্স আহমেদ। তাকে দেখা হয় ক্ষমতার পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে। কিন্তু সূত্রগুলো এ সময়ে তাকে আটক করাকে দেখছে, তার সামনের সেই সুযোগ থেকে সরিয়ে দেয়া হিসেবে। এ অবস্থায় সৌদি আরবের ভিতরের লোকজন এবং পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন, বর্তমান বাদশা সালমানের বয়স ৮৪ বছর। তিনি যখন জীবিত তখনও ক্রাউন প্রিন্সের বিরোধিতা করছে না পরিবার। এর মধ্য দিয়ে স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে যে, প্রিয় পুত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চান না বাদশা সালমান। বেশির ভাগ দায়দায়িত্ব তিনি ছেলে, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে দিয়েছেন, তবু তিনি সপ্তাহান্তে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বিদেশী অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।

ওদিকে আড়াই মাস বিদেশে থাকার পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে রাজধানী রিয়াদে ফেরেন প্রিন্স আহমেদ। তারপর থেকে তিনি ‘লো প্রোফাইল’ রক্ষা করে চলেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় লন্ডনে তার বাসভবনের ভাইরে বিক্ষোভ করেন কিছু মানুষ। বিক্ষোভকারীরা সৌদি আরবে আল সউদ পরিবারের পতন চেয়ে স্লোগান দেয়। এ নিয়ে বক্তব্যে প্রিন্স আহমেদ দৃশ্যত সমালোচনা করেছিলেন সৌদি আরবের নেতৃত্বের। এর আগে সূত্রগুলো বলেছিলেন, সৌদি আরবের আল সউদ পরিবারের সিনিয়র সদস্যদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এলায়েন্স কাউন্সিল। এর সদস্যদের মধ্যে মাত্র তিনজন ২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স বানানোর বিরোধিতা করেছিলেন। তার অন্যতম প্রিন্স আহমেদ। ওই সময় থেকেই তার ছেলে ও সাবেক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফের চলাফেরা সীমিত করা হয়েছে। তার ওপর নজরদারি রাখা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হচ্ছে, আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানের সঙ্গে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান উচ্চাকাঙ্খী সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করছেন, ঠিক তখনই ঘটলো সর্বশেষ এই আটকের ঘটনা। বড় অর্থনীতির গ্রুপ জি-২০ এর বর্তমান চেয়ার সৌদি আরব।

Advertisement