পপলার এন্ড লাইম হাউজ আসনের এমপি আপসানা বেগম বলেছেন,গত ১০ বছর ধরে ব্রিটেনের স্কুলগুলোতে কারিকুলাম সংকুচিত হচ্ছে। বিশেষকরে ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে। অনেক ইউরোপিয়ান ভাষা শিক্ষার সুযোগ আছে অথচ বাংলা শিক্ষার সুযোগ দিনদিন সংকুচিত হচ্ছে। টাওয়ার হ্যামলেটসের স্কুলগুলোতে আগে যেভাবে বাংলা শেখার সুযোগ ছিলো তা অনেক সংকুচিত হয়ে এসেছে।তিনি বলেন, আমি এই বিষয়টি নজরে রাখছি। বাংলা শিক্ষার সুযোগ বহাল রাখতে লেবার এমপি হিসেবে পার্লামেন্টে বিতর্ক করেছি। আমিই প্রথম এমপি যে বৃটিশ পার্লামেন্টে সিলেটি ভাষায় ডিবেট করেছি।আপনাসা বেগম এমপি গত ৩ জুলাই সোমবার বিকেলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কমিটি রুমে লন্ডন-বাংলা প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধিদলের সাথে মতবিনিময়কালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি প্রেস ক্লাবের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। পার্লামেন্টের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা শেষে কমিটি রুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে মিলিত হন এমপি আপসানা।
১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, জেনারেল সেক্রেটারি তাইসির মাহমুদ, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট রহমত আলী, ট্রেজারার সালেহ আহমদ, এসিসটেন্ট ট্রেজারার মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মিডিয়া এন্ড আইটি সেক্রেটারি আব্দুল হান্নান, প্রথম নির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু, নির্বাহী সদস্য সরওয়ার হোসাইন ও নির্বাহী সদস্য আনোয়ার শাহজাহান। এসময় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন ক্লাবের সাধারণ সদস্য ফটো সাংবাদিক খালিদ হোসাইন।মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আপসানা বেগম আরো বলেন, স্কুলগুলোতে যার যার মাতৃভাষা শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শুধু চারজন বাঙালি এমপিই কেন, আমরা ক্রস পার্টি মিলে কাজ করতে পারি। আমি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পার্লামেন্টে বিতর্ক করেছি। এর আগে এভাবে কোনো বিতর্ক হয়নি। ভবিষ্যতে নিজ দল লেবার পার্টি, ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টি ও অন্যান্য দলের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সংসদে একসঙ্গে কথা বলবো।তিনি বলেন, কনজার্ভেটিভ সরকার প্রস্তাবিত বিভিন্ন আইন সূ²ভাবে বিশ্লেষণে ভুমিকা রাখছেন। বিশেষ করে যেসব বিষয় বৃটিশ-বাংলাদেশী কমিউনিটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সেগুলোর বিষয়ে নিয়ে সোচ্চার ভুমিকা পালন করে আসছেন। যুক্তরাজ্যে বৃটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে শিশু দারিদ্রতার হার বেশি, বিশেষ করে টাওয়ার হ্যামলেটসে শিশু দারিদ্রতার হার সর্বোচ্চ। তাই শিশু দারিদ্রতা কমিয়ে আনতে তিনি কাজ করছেন।
তাছাড়া ল্যাংগুয়েজ ডাইভার্সিটি, কমিউনিটি ল্যাগুয়েজ সার্ভিস বহাল রাখার দাবীতে সংসদে ডিবেট-এ নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিই প্রথম কোনো এমপি যিনি সর্বপ্রথম পার্লামেন্টে সিলেটি ভাষায় ডিবেট করেছেন। এটা সংসদে সিলেটি ভাষা ও বাংলাদেশী কমিউনিটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে ভুমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, স্কুলগুলোতে কারিকুলাম সংকুচিত না হয়ে যেন আরো সমৃদ্ধ হয়। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য জিসিএসই এ লেভেল পর্যন্ত বাংলা শিক্ষার সুযোগ বহাল থাকে।আমন্ত্রণ গ্রহণ করে প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ পার্লামেন্ট পরিদর্শনে যাওয়ায় আপসানা বেগম এপি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপুর্ণ ভিজিট। বৃটিশ-বাংলাদেশী এমপি হিসেবে আপনাদের আমন্ত্রন জানিয়ে পার্লামেন্ট ঘুরে দেখাতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি।প্রেস ক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী ও জেনারেল সেক্রেটারি তাইসির মাহমুদ এমপি আপসানা বেগমকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একজন বৃটিশ-বাংলাদেশী এমপি হিসেবে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের গুরুত্বের সাথে আমন্ত্রণ জানিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ঘুরে দেখার সুযোগ করে দেয়া আমাদের জন্য অনেক সম্মানের। আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সম্পর্কে অজানা অনেক কিছুই জানতে পারলাম, যা আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে কাজে লাগবে।এর আগে বিকেল ৩টার দিকে সাংবাদিক প্রতিনিধিদল পার্লামেন্টের প্রোর্টকোলিজ হাউজে পৌছলে তাঁদের স্বাগত জানান এমপি আপসানা বেগমের একান্ত কর্মকর্তা মিশ রহমান, নিকোলা টেইলর ও শিরিন। সেখান থেকে নেতৃবৃন্দকে ওয়েস্টমিনস্টার হল হয়ে সেন্ট্রাল লবিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেন্ট্রাল লবিতে এমপি আপসানা বেগম প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখান।এমপিদের লাইব্রেরী, আর্কাইভ সেকশন, কমন টেরেস, হাউজ অব কমন্স চেম্বারের দুতলার গ্যালারী থেকে এমপিদের ডিবেট দর্শন শেষে কমিটি রুমে অনুষ্ঠিত হয় মতবিনিময়। সর্বশেষ সেন্ট ম্যারি আন্ডাক্রফ চ্যাপেল ঘুরে দেখার মধ্য দিয়ে প্রতিনিধিদলকে বিদায় জানান আপসানা বেগম। অবশ্য ঘোরারাঘুরি মাঝে কমন টেরেসে সাংবাদিকদের জন্য চা-নাস্তার আয়োজন করেন এমপি।পার্লামেন্টের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখার সময় ৪জন বৃটিশ এমপি এসে প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় তাঁরা সকলেই আপসানা বেগম এমপির উচ্চসিত প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, ওয়েস্টমিনস্টার হল তথা প্রথম পার্লামেন্ট সাইট প্রতিষ্ঠা হয় ১২৬৫ সালে। বর্তমানে পার্লামেন্টে এমপির সংখ্যা ৬৫০ জন হলেও বসার স্থান আছে মাত্র ৪২৭ জনের। তাই একসাথে বেশি সংখ্যক এমপি সংসদে ডিবেটে অংশ নিলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সংসদে সিনিয়র এমপিরা সম্মুখের সীটে বসেন। কিন্তু কারো নির্ধারিত কোনো চেয়ার নেই। যিনি আগে আসেন, যেখানে সীট পান সেখানেই বসেন। আর সীট না পেলে দাঁড়িয়ে থাকেন।