আব্দুল কাইয়ুম :: কেউ হয়তো বলবেন, লোকটা পাগল নাকি? ২৩ ঘণ্টায় দিন হলে বাকি এক ঘণ্টা যাবে কোথায়? বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, আপনি যদি ধরে নিন ২৩ ঘণ্টায় এক দিন আর বাকি এক ঘণ্টা থাকবে আপনার শরীর সুস্থ-সুন্দর ও রোগমুক্ত রাখার জন্য, তাহলে দেখবেন কত সহজে ভালো থাকা যায়।
আপনার দাঁতে পোকা। প্রায়ই মাথাব্যথা করে। অথবা পেটব্যথা হয়, ভাবছেন গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি, আর খাচ্ছেন অ্যান্টাসিড। হাঁটুব্যথা। কোমরব্যথা। প্রায়ই ঠান্ডা লেগে হাঁচি-কাশিতে ভোগেন। অল্প বয়সেই চোখে ছানি পড়ছে। কিংবা ঘাড়ব্যথা, যাকে স্পন্ডালাইটিস বলি, আর সে কারণে ছুটছেন ডাক্তারের কাছে। এই সবকিছুর মহৌষধ ওই এক ঘণ্টা!
এই এক ঘণ্টা রাখবেন সামান্য ব্যায়ামের জন্য। অনেকভাবেই ব্যায়াম করা যায়। তবে শর্টকাট ব্যায়াম ভালো। কারণ, এর জন্য খুব বেশি মাথা ঘামাতে হয় না। জিমে যাওয়া বা সুইমিংপুলে সাঁতার। অথবা ট্র্যাকস্যুটে পার্কে দৌড়ানো। এসব তো নিশ্চয়ই খুব ভালো। যাঁরা এ ধরনের ব্যায়ামে অভ্যস্ত এবং যথেষ্ট সময় দিতে পারেন, তাঁদের জীবন তো সব সময় ফুরফুরে। এতে সন্দেহ নেই।
কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই মনে করেন এত কিছু করার সময় কোথায়। তার চেয়ে একটু আরাম করি! কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই আরামে কিন্তু আরাম থাকে না। ৫০ না পেরোতেই অবস্থা কাহিল।
তাহলে মাত্র এক ঘণ্টার ম্যাজিকটা কী। এটা আর কিছু না, সকালে মাত্র ১৫ মিনিটের হালকা ব্যায়াম। এরপর ১৫ মিনিট সকালের নির্মল বাতাসে এক রাউন্ড একটু জোরে হেঁটে আসা। একটানা হাঁটাই ভালো। তবে শেষ পাঁচ মিনিটে, প্রয়োজনে একটু থেমে থেমে শাকসবজি, মাছ বা ছোটখাটো কেনাকাটাও সেরে নেওয়া যায়। আজকাল তো পাড়ায় পাড়ায় ভ্যানগাড়িতে টাটকা তরিতরকারি থাকে। ব্যস, সংসারের একটা কাজও হলো। এই গেল আপনার এক ঘণ্টার মধ্যে আধা ঘণ্টা।
বাকি আধা ঘণ্টার আগে বলে নিই হালকা ব্যায়ামটা কী। তেমন কিছু না। এর মূল দুটি অংশ। একটি স্ট্রেচিং আর অন্যটা ব্রিদিং। ইংরেজিতে বললাম। বাংলায় বললে বলতে হয়, স্ট্রেচিং হলো হাত-পা টানা দেওয়া আরকি। আর হাঁটু, হাতের কবজি, আঙুল, পায়ের পাতা, গোড়ালি, কোমর, ঘাড় এসব অঙ্গ একটু নাড়াচাড়া দেওয়া। হালকাভাবে। যেন কোনোভাবেই অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। শরীরের সবগুলো জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি দিনের শুরুতেই অন্তত কয়েকবার নাড়াচাড়া খেলে আপনাকে কনুইব্যথা-কোমরব্যথা-হাঁটুব্যথায় ভুগতে হবে না।
চোখ দুটির দিকে নজর দিন। এর ভালো ও সহজ উপায় হলো চোখের মণি দুটি হালকাভাবে কয়েকবার বাঁ থেকে ডানে বৃত্তাকারে, আর কয়েকবার এর বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে নিন। কয়েকবার করে কোনাকুনি ওপর ও নিচের দিকে তাকান। পাপড়ি ফেলুন কয়েকবার। চোখের দুই কোনায় আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করুন কয়েকবার। সবই হালকাভাবে।
আর ব্রিদিং হলো শুধু বুকভরে শ্বাস নিন আর একদম বুক খালি করে শ্বাস ছাড়ুন। এতে উপকারটা হলো, ফুসফুসের অসংখ্য বায়ুকুঠুরির সবগুলো প্রতিদিন কয়েকবার করে ফুলে উঠবে আবার পরক্ষণেই চুপসে যাবে। বায়ুকুঠুরিগুলো সব সময় সক্রিয় থাকবে। জীবনীশক্তি বাড়াতে এ ধরনের ব্রিদিং এক্সারসাইজের বিকল্প নেই।
ব্যায়ামের ব্যাপারে শুধু একটা কথা। গুরুতর কোনো অসুখ থাকলে আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
এখন বাকি আধা ঘণ্টা কী করবেন? প্রতিদিন দাঁতের যত্ন নিতে লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। রাতে খাওয়ার পর সুতা দিয়ে (ডেন্টাল ফ্লস) মিনিট দুয়েক দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার করুন। এরপর দাঁত ব্রাশ করুন। আবার সকালে খাওয়ার আগে আরেকবার দাঁত ব্রাশ করুন। নাশতার আগে দাঁত ব্রাশ করলে ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায়, এনামেল ক্ষয়ের আশঙ্কাও কমে যায়। এরপর সারা দিন আমাদের মুখে লালা থাকে, সব সময় কথা বলি। ব্যাকটেরিয়া বিশেষ সুবিধা করতে পারে না।
হাতে থাকল আরও ২০ মিনিট। সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানাটা আপনি পরিপাটি করে সাজিয়ে নিন। গেল ১০ মিনিট। সকালের চা আপনি নিজেই তৈরি করুন না কেন! আপনার একটু শ্রমও হলো আবার সাংসারিক জীবনে আপনি শেয়ারও করতে পারলেন। এ তো আনন্দের কথা।
টাটকা শাকসবজি-ফলমূল খেতে হবে। আর সিগারেট একদম না। পান-জর্দা একদম চলবে না। চিনি না খেয়ে গুড় খাওয়া ভালো। আজকাল আমেরিকায়ও চিনিবিরোধী আওয়াজ উঠেছে। একজন পুষ্টিবিজ্ঞানী চিনির বিরুদ্ধে এমন আন্দোলন শুরু করেছেন যে তাঁকে সবাই বলেন ‘অ্যান্টি সুগার গাই’!
চিনির ব্যাপারে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, আমাদের ভাত-মাছ-ডালের মধ্যেই চিনি আছে। পাকস্থলী বিপাক প্রক্রিয়ায় খাদ্যকণা ভেঙে শেষ পর্যন্ত চিনি তৈরি করে। আর আমরা যদি সরাসরি চিনি খাই তাহলে পাকস্থলীর তো কাজই থাকবে না। সেই চিনি সরাসরি রক্তে চলে যাবে। আর খাদ্যের সঙ্গে যে আঁশ থাকে, যা শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলো ধুয়েমুছে বর্জ্য হিসেবে শরীর থেকে বের করে দেয়, সে কাজটি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হবে।
রাতে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুম। আর বাকি ১৬-১৭ ঘণ্টা কাজ করুন। সকালের দৈনিক পত্রিকায় একনজর চোখ বুলিয়ে নিন। একটু গল্প-উপন্যাস-কবিতা পড়ুন। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করুন। ঘরের কিছু কাজ করুন।
আর কী চাই? এই তো জীবন।
সরকার যদি বলত, এখন থেকে ২৩ ঘণ্টা দিন ধরে বাকি এক ঘণ্টা থাকবে শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য, কত ভালোই না হতো।