ব্রিটবাংলা ডেস্কঃযুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের উপদেষ্টা ও ইউএস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি ডাইরেক্টর প্রফেসর ডঃ রবার্ট ক্রেইন ইস্ট লন্ডন মস্ক আর্কাইভ পরিদর্শন করেছেন। তিনি এবার দ্বিতীয়বারের মতো ইস্ট লন্ডন মসজিদ পরিদর্শনে এলেন।
গত ৫ মার্চ শুক্রবার বিকেলে আমন্ত্রিত হয়ে লন্ডন মুসলিম সেন্টারে এসে পৌঁছালে মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ তাঁকে স্বাগত জানান। পরে তাঁকে মারিয়াম সেন্টারের গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থিত মসজিদ আর্কাইভ ঘুরে দেখানো হয়। এরপর তিনি মারিয়াম সেন্টারে নন-মুসলিম ভিজিটিং সেন্টারসহ বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন।
ড. ক্রেইন ইস্ট লন্ডন মসজিদ আর্কাইভ প্রজেক্টের ভূয়শী প্রশংসা করে এটিকে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্কাইভের গুরুত্ব অপরিসীম।
এই আর্কাইভের মাধ্যমে শুধু ইস্ট লন্ডন মসজিদই নয়; গোটা ইউরোপের মুসলিম কমিউনিটির তথ্য ও তত্ত্ব সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। আমরা আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে রাখতে না পারলে একসময় হারিয়ে যাবো। এই আর্কাইভের মাধ্যমে আজ থেকে শত বছর আগে পূর্ববর্তী বংশধর ইস্ট লন্ডন মসজিদ প্রতিষ্ঠায় যে অবদান রেখে গেছেন তা যুগযুগ ধরে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।
আর্কাইভ পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সেক্রেটারি আইয়ূব খান, ট্রেজারার মোহাম্মদ আব্দুল মালিক, সিইও নজমুল হোসাইন, ডাইরেক্টর দেলওয়ার হোসাইন খান ও ট্রাস্টি আব্দুল্লাহ ফলিক।
এ সময় সক্ষিপ্ত বক্তব্যে মসজিদের সিইও নজমুল হোসাইন বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে ড. রবার্ট ক্রেইনের মতো একজন মহান ব্যক্তি মসজিদের আর্কাইভ পরিদর্শন করতে এসেছেন। আমাদের মাঝে তাঁকে পেয়ে আমরা গর্বিত।
এই সফরের মাধ্যমে প্রফেসর বরার্ট ক্রেইন যেমন ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও এর আর্কাইভ সম্পর্কে জানতে পারলেন, ঠিক তেমনি আমাদেরও ড. ক্রেইনের বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে জানার সুযোগ হলো। বিশেষ করে মুসিলম বিশ্বের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং বিষয় সম্পর্কে আমরা অবহিত হলাম।
উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্ব আমেরিকার ম্যাসাচুসেট অঙ্গরাজ্যের ক্যাম্ব্রিজ শহরে ১৯২৯ সালে জন্মনেয়া প্রফেসর ড. রবার্ট ক্রেইন ১৯৮০ সালে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।
তিনি তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের উপদেষ্টা ও ইউএস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি ডাইরেক্টরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ১৯৮১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইউএস রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পুরোপুরিভাবে ইসলামী কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ওয়াশিংটন ইসলামিক সেন্টারের ‘দাওয়াহ’ বিভাগের ডাইরেক্টর ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থট এর ডাইরেক্টর অব পাবলিকেশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কাতার ফাউন্ডেশনের প্রফেসর ও কাতার সেন্টারের ডাইরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল, মুসলিম বার অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। ড. ক্রেইন এক ডজনেরও বেশি গ্রন্থের লেখক। এছাড়াও লিগ্যাল সিস্টেম, গ্লোবাল স্ট্রাটেজি ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ৫০টিও বেশি গুরুত্বপুর্ণ নিবন্ধ রয়েছে তাঁর।
উল্লেখ্য, শতাধিক বছরের পুরনো আড়াই লক্ষ ডকুমেন্টস সংরক্ষণের মধ্যদিয়ে গত বছরে ২২ নভেম্বর ইস্ট লন্ডন মসজিদ আর্কাইভ প্রজেক্ট আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ওইদিন সন্ধ্যায় আর্কাইভ স্ট্রংরুম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন লন্ডন মেয়র সাদিক খান। উদ্বোধনের পর থেকে সময় সময় বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আর্কাইভ পরিদর্শনে আসছেন।