করোনার ভয়াবহতা জানতেন ট্রাম্প, ইচ্ছা করে গুরুত্ব দেননি

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: করোনা ভাইরাসের ভয়াবতা সম্পর্কে জানতেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তা সত্ত্বেও তিনি এ বিষয়ে গুরুত্ব দেননি। এড়িয়ে গেছেন। সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড-এর সঙ্গে এক রেকর্ডকৃত কথোপকথনে এমনটা স্বীকার করেছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে উডওয়ার্থ একটি বই লিখেছেন। এর নাম দিয়েছেন ‘রেইজ’। বইটি আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর বাজারে আসার কথা রয়েছে। তাতেই মার্কিন এই সাংবাদিক এসব কথা বলেছেন।

এর ফলে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নিজের মুখেই ভয়াবহতার সত্য বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু তিনি করোনা ভাইরাসের এই ভয়াবহতা এড়িয়ে গেছেন। কড়া সমালোচনা করেছেন জো বাইডেনও। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড বলেছেন, মহামারির ঝুঁকির কথা জেনেও ইচ্ছাকৃতভাবে ফেব্রুয়ারিতে দেশের জনগণকে ভুলপথে পরিচালিত করেছেন ট্রাম্প। এমন সব তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। অনলাইন আল জাজিরায় এ খবর লিখেছেন সাংবাদিক উইলিয়াম রবার্টস। দেশে প্যানিক বা পীড়া সৃষ্টি হোক এমনটা চাননি বলে ট্রাম্প বিষয়টিকে এড়িয়ে গেছেন বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এর ফলে অপ্রয়োজনে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ। বিষয়টিতে তিনি গুরুত্ব দিলে প্রাণহানী অনেক কমে যেতো।

বব উডওয়ার্ডের সঙ্গে রেকর্ডেড ওই কথপোকথন হয় ট্রাম্পের গত ৭ই ফেব্রুয়ারি। এতে ট্রাম্প বলেন, আপনি শুধু বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ঠিক এ রকমভাবেই এটা অতিক্রম করে যাবে। এটা খুব কৌশলগত একটি বিষয়। অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়। শক্তিশালী ফ্লুর চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ এটা (করোনা ভাইরাস)। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিষয়টিতে জোর দিয়ে আবার বলেন, এটা অত্যান্ত ভয়াবহ জিনিস।

বব উডওয়ার্ড তার বইয়ে আরো বলেছেন, করোনা ভাইরাস যে ভয়াবহ হুমকি এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ২৮শে জানুয়ারি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টারা গোয়েন্দা বিষয়ক ব্রিফিংয়ে জানান। উডওয়ার্ডের দেয়া তথ্যমতে, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ওব্রায়েন প্রেসিডেন্টকে জানান যে, আপনার প্রেসিডেন্সির মেয়াদে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তার মধ্যে এটা (করোনা ভাইরাস) হবে সবচেয়ে বড় জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি। আপনি যেসব কঠিন বিষয় মোকাবিলা করেছেন এই সঙ্কট তার মধ্যে সবচেয়ে জটিল হতে পারে। সাংবাদিক উডওয়ার্ড ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে এ বছর জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান সাক্ষাৎকারে ১৮ বার মিলিত হন।
বার বার গোয়েন্দা সতর্কতা দেয়ার পরও ট্রাম্প এই হুমকির বিষয়টি জনসমক্ষে এড়িয়ে যান ফেব্রুয়ারিতে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে তিনি এ ঝুঁকির বিষয়ে অবহিত করেননি বা কোনো সতর্কতা দেননি। উল্টো তিনি ২রা ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজের উপস্থাপক সিন হ্যানিটিকে বলেন, চীন থেকে আসা এই জিনিস আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। ওদিকে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে ধীর গতিতে সাড়া দেয়া এবং জাতীয় পর্যায়ে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল প্রণয়নে ব্যর্থতার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করেন সমালোচকরা। তারা মনে করেন, এ কারণে অপ্রয়োজনে বহু মৃত্যু ঘটেছে এবং অর্থনীতির অব্যাহত ক্ষতি হচ্ছে। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, করোনা ভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন এক কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষ।

সমালোচকরা বলেন, করোনা ভাইরাস ইস্যু ভুলভাবে মোকাবিলার কারণে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ট্রাম্প। জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট জো বাইডেনের চেয়ে পিছনে পড়ে যাচ্ছেন তিনি। এতে ভোটাররা বলছে, অপর্যাপ্ত সাড়া দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। মিশিগানের ওয়ারেনে এক নির্বাচনী সভায় বুধবার জো বাইডেন বলেছেন, তিনি (ট্রাম্প) জানতেন কতটা ভয়াবহ ছিল এই ভাইরাস। ফ্লুর চেয়েও এটা ভয়াবহ ছিল। তিনি তা জানতেন এবং বিষয়টি গায়েই মাখেন নি। আরো নিন্দার বিষয় হলো, তিনি এ নিয়ে মার্কিন জনগণের কাছে মিথ্যাচার করেছেন। এই ভাইরাস মাসের পর মাস দেশের ওপর যে হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে তিনি সে বিষয়ে জনগণকে জেনেও এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দিয়েছেন।

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নিজের কথায়ই ভয়াবহতার সত্য কথা বেরিয়ে এসেছে। করোনা ভাইরাসের বিপর্যয়কর প্রকৃতি সম্পর্কে ট্রাম্প পুরোপুরি অবহিত ছিলেন। উল্টো তিনি এই হুমকিকে গুরুত্ব দিয়ে নেয়ার চেয়ে সত্য গোপন করেছেন। এতে আমাদের পুরো দেশ হুমকিতে পড়েছে, আমরা ছিলাম অপ্রস্তুত।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের রেকর্ড করা অডিও কথোপকথন বুধবার #ট্রাম্পনিউ’তে ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এই হ্যাসট্যাগে বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ৬ লাখ ১৫ হাজার টুইট পড়েছে। প্রথমদিকে ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা দাবি করতে থাকেন যে, বিশ্বকে যথাযথভাবে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে চীন। এ জন্য তিনি এই প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে প্রথমে সাড়া দিয়েছেন ধীর গতিতে। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র কাইলি ম্যাকইনানি মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট কখনোই এই ভাইরাসের বিষয়ে অবজ্ঞা করেন নি। তিনি কোভিড-১৯ নিয়ে কখনো জনগণের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেননি। প্রেসিডেন্ট ছিলেন শান্ত এবং তার কর্মকান্ডে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে।
কিন্তু বব উডওয়ার্ডের কাছে দেয়া সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১৯ শে মার্চ বলেছেন, ‘আমি সব সময়ই এটাকে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখতে চেয়েছি। এখনও আমি এটাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখি না। কারণ, আমি কোনো প্যানিক সৃষ্টি করতে চাই না।’ তাদের কথোপকথনের এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টে।

Advertisement