করোনায় চীন থেকে দেশে ফেরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী খুন

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ফেনীতে নিখোঁজের দু’দিন পর সেফটিক ট্যাংক (ম্যানহোল) থেকে মো. ইউনুস বাবু (২২) নামে এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার মধ্যরাতে শহরের পাঠানবাড়ি রোডস্থ শফিকুর রহমান সড়কের পুরাতন রেজিষ্ট্রি অফিস এলাকার তাসপিয়া ভবনের সেফটিক ট্যাংক থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

ইউনুস বাবু জেলার সোনাগাজী উপজেলার তাকিয়া বাজারের পাইকপাড়ার সওদাগর বাড়ির বাসিন্দা। তিনি শহরের শাহীন একাডেমি এলাকার একটি বাসায় পরিবারসহ ভাড়া থাকতেন। বাবু চীনের আহোট ইউনিভার্সিটিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছিলেন। করোনার প্রাদুর্ভাবে লকডাউনের কারণে চীন থেকে দেশে চলে আসে বাবু।

বাবুর ছোট ভাই মো. ইফরান বাপ্পী জানান, তার বড় ভাই ইউনুস বাবুকে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শাহরিয়ার ও রাকিব নামে দুই বন্ধু ফোন করে বাসা থেকে ডেকে নেন। এরপর থেকে ভাইয়ার কোন খোঁজ-খবর পাইনি আমরা।

নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সুদ্বীপ রায় জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে ইউনুস বাবু ও তার বন্ধু শাহারিয়ার পাঠানবাড়ি রোডস্থ শফিকুর রহমান সড়কের পুরাতন রেজিষ্ট্রি অফিস এলাকার তাসপিয়া ভবনের দারোয়ান মোজাম্মেল হক শাহিনের সঙ্গে দেখা করতে যায়। ভোররাতে ওই ভবনের এক নারী ভাড়াটিয়া ফজরের নামাজ পড়তে ঘুম থেকে উঠলে বাইরে বাড়ির কেয়ারটেকারের মোজাম্মেল হক শাহিনকে অসংগলœ দেখতে পান।

এ সময় ওই ভবনের সেফটিক ট্যাংক থেকে কোন ব্যক্তির গোংরানো শব্দ পেলে ওই নারী তার ছেলেকে ডেকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। একপর্যায়ে সেফটিক ট্যাংক থেকে রক্তাক্ত ও অজ্ঞান অবস্থায় শাহরিয়ার নামে এক যুবককে উদ্ধার করে। গুরুত্বর আহত শাহরিয়ার বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় বাড়িটির কেয়ারটেকার মোজাম্মেল হক শাহিনকে শুক্রবার সকালে আটক করে পুলিশ।

এদিকে শাহরিয়ার আহত হলেও তার বন্ধু ইউনুস বাবুর কোন সন্ধান পাচ্ছিলো না পরিবারের স্বজনরা। শুক্রবার রাতে ইউনুস বাবুর মা রেজিয়া বেগম বাদি হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। টানা দু’দিন তার খোঁজ না পেয়ে তিনি ধারণা করেন তার ছেলে ইউনুস বাবুও ওই সেফটিক ট্যাংকের মধ্যে থাকতে পারে। শনিবার রাতে তিনি সেখানে গিয়ে সেফটিক ট্যাংকের মধ্যে খোঁজ নিলে একটি মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।

ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আদিল মাহমুদ জানান, পুলিশ সেফটিক ট্যাংক থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। উদ্ধার হওয়া মরদেহটি ইউনুস বাবুর বলে শনাক্ত করেছে স্বজনরা।

ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুদ্বীপ রায় আরো জানান, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিহত ইউনুস বাবুর মাথার ডান পাশে সামনের অংশে ২টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত আর পেছনে ৩টি কোপের দাগ পেয়েছে। তার গলার কণ্ঠনালীতে পাটের রশি দিয়ে গিট দেয়া ছিলো। শরীরের ওপরের অংশে একটি টিশার্ট জড়ানো থাকলেও, নিচের অংশে কোন কাপড় ছিল না।

নিহত বাবুব মা রেজিয়া বেগম জানান, ছেলের হাতে থাকা দামি আইফোনজনিত কারণে এ ঘটনা ঘটানো হতে পারে বলে ধারণা করছেন। ছেলের মরদেহ উদ্ধার হলেও তার আইফোনসেটটি শুক্রবার থেকে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ভবনের কেয়ারটেকার মোজাম্মেল হক শাহিন ও তার সঙ্গী রাকিব নামে এক যুবক মিলে ইউনুস বাবু ও শাহরিয়ারকে কুপিয়ে সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা চাপাতি জব্দ করেছে। এ ঘটনায় শাহরিয়ারের মায়ের দায়ের করা মামলায় ওই বাড়ির কেয়ারটেকার শাহীনকে শুক্রবার দুপুরে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।

ওসি আলমগীর আরো জানান, কি কারণে ইউনুস বাবুকে হত্যা ও শাহরিয়ারকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে তার তদন্ত করছে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। হত্যার রহাস্য উদঘাটনের জন্য রোববার আদালতে কেয়ারটেকার শাহীনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হবে। তাকে রিমান্ডে নিলে পুরো ঘটনা জানা যাবে বলে পুলিশ ধারণা করেছেন।

Advertisement