করোনা: কাতারে বাংলাদেশিসহ অভিবাসী শ্রমিকদের ‘জেলজীবন’, অবরুদ্ধ অবস্থায় আতঙ্কে কাঁপছেন

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ‍কাতারের সবচেয়ে বড় লেবার ক্যাম্প বা শ্রমিকদের আশ্রয়শিবির লকডাউনের কারণে কার্যত এক বন্দিশিবিরে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশি, নেপালিসহ এখানে বসবাসকারীদের বেশির ভাগই অভিবাসী শ্রমিক। সেখানে অবকাঠামো খাতে কাজ করতে তারা গিয়েছেন বিভিন্ন দেশ থেকে। সেখানে কয়েক শত শ্রমিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ওই শিবিরটি লকডাউন বা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে অভিবাসী এসব শ্রমিক তাদের অবস্থাকে জেলখানার জীবনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বাংলাদেশি একজন শ্রমিক বলেছেন, প্রতিদিনই এখানকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এক নম্বর ক্যাম্প থেকে ৩২ নম্বর ক্যাম্প পর্যন্ত সবটাই এখন লকডাউন করা হয়েছে। এর ভিতর আমার যেসব বন্ধুরা বসবাস করছেন তারা এক কঠিন পীড়ার মধ্যে রয়েছেন।

আতঙ্কে রীতিমতো কাঁপছেন তারা। অনলাইন দ্য গার্ডিয়ানকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ।

এতে বলা হয়েছে শ্রমিকদের ওই শিবিরটি দোহা’র ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া’তে বা শিল্প এলাকায়। এর ভিতরে অবস্থান করেন কয়েক হাজার শ্রমিক। তার ভিতরের অবস্থা একেবারে নাজুক। এর মধ্যেই গাদাগাদি করে অবস্থান করেন তারা। ফলে এই শিবিরের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্রুত বিস্তার ঘটার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

শিবিরটির চারপাশে পাহারা বাসিয়েছে পুলিশ, যাতে কেউ বাইরে যেতে না পারেন। একেবারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তাদেরকে। এমন পরিস্থিতিতে এর ভিতরে যেসব শ্রমিক অবস্থান করছেন তাদের বেশির ভাগই ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের জন্য স্টেডিয়াম নির্মাণ সহ যেসব অবকাঠামোগত প্রকল্প রয়েছে তাতে কাজ করেন। মঙ্গলবার কাতার কর্তৃপক্ষ ওই শিল্প এলাকার কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকাকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে এর ভিতরে অবস্থানরত শ্রমিকরা তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কে বসবাস করছেন।

পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কিছু শ্রমিককে বেতনহীন ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে। তবে তাদেরকে এ সময়ে শুধু খাদ্য ও থাকার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। নেপালি একজন শ্রমিক বলেন, আমরা কয়েকজনে মিলে হাঁটতে যেতে পারি না। বাধা দেয়া হয়। চায়ের দোকানে একসঙ্গে চা পান করতে পারি না। তবে খাবার কিনতে পারি। তা বাসায় নিয়ে আসতে পরি। কিন্তু আমার উদ্বেগ বাড়িতে রেখে আসা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। আমার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে তাদেরকে দেখাশোনার মতো কেউ থাকবে না।
১১ই মার্চ কর্তৃপক্ষ বলেছে, একটি আবাসিক ভবনে পরীক্ষা করে ২৩৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বিদেশী নাগরিক। তারা অভিবাসী শ্রমিক। এ অবস্থায় করোনা থেকে রক্ষা পেতে সম্ভাব্য সব কিছুই করছেন উদ্বিগ্ন শ্রমিকরা। একজন শ্রমিক বলেন, আমাদের জীবনকে রক্ষা করার জন্য আমরা সবকিছুই করছি। কিন্তু এই আশ্রয়শিবিরটি নোংরা। তাই আমরা সবকিছু পরিষ্কার করছি। বিছানার চাদর পাল্টাচ্ছি। জীবাণু ধ্বংস করতে স্প্রে করছি।

যদিও কাতার লকডাউনে রয়েছে, প্রকাশ্যে চলাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবু কিছু নির্মাণ শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, তাদের করোনা ভাইরাস পজেটিভ ধরা না পড়ায় তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে কাজ করতে। এক্ষেত্রে শুধু তাদের শরীরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। কাতারের মতো এমন সব ক্যাম্পে যেসব শ্রমিক অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন তাদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল ইস্যু বিষয়ক উপপরিচালক স্টিভ ককবার্ন বলেছেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কাতার সরকারকে অবশ্যই মানবাধিকারের বিষয়টি দেখতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, কোনো বৈষম্য ছাড়াই সবাই প্রতিরোধমুলক যত্ন, আক্রান্ত সবাই চিকিৎসা পাচ্ছে এটা সহ সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

উল্লেখ্য, দোহার শিল্প এলাকা গড়ে উঠেছে কিছু গুদামঘর, কারখানা ও শ্রমিকদের আবাসন স্থলকে নিয়ে। গাদাগাদি করে এবং নোংরা পরিস্থিতেতে এখানেই বসবাস করেন কয়েক লাখ শ্রমিক। রান্নাঘর এবং টয়লেটগুলোর অবস্থা এমন যে, সেখানে খুব সহজেই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। কাতারের জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই অভিবাসী। বৃহস্পতিবার সরকার ঘোষণা করেছে, সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬০ জন। পারস্য উপসাগরীয় ৬টি দেশের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যক সংক্রমণ। সব মিলিয়ে ওই অঞ্চলে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩০০ মানুষ।

Advertisement