কুয়েতে আটকা বাংলাদেশিদের ফেরার আকুতি

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: রোগ-শোকে কাতর কুয়েতের প্রত্যাবাসন ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে রীতিমত আহাজারি করছেন। সেখানে ক’দিনে একে একে পাঁচ বাংলাদেশির মৃত্যু তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে! মঙ্গলবার থেকে সীমিত সংখ্যক বাংলাদেশিকে ফেরানোর জন্য ৬ টি ফ্লাইট প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই সব ফ্লাইটে ১২৩৬ জন ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি দেশটির এক উপমন্ত্রীর বক্তব্যে সাড়ে ৪ হাজার বাংলাদেশির মধ্যে বিশাল সংখ্যকের ফেরার অনিশ্চিত হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রত্যাবাসন ক্যাম্পে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। সর্বশেষ প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় বিভিন্ন রকম অভাব-অভিযোগের কথা জানিয়ে চাঁদপুর তথা বৃহত্তর কুমিল্লার অধিবাসী কয়েকজন প্রবাসী তাদের দ্রুত ফেরা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ভিডিওতে তারা হাউমাউ করেছেন। বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থরা জানিয়েছেন ক্যাম্পে গাদাগাদি করে অমানবিক এক পরিবেশে রাখা হয়েছে তাদের। খাদ্য-পানীয়ের সঙ্কট তো আছেই, অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই।

ওষুধপত্রের কোনো সংস্থান নেই। বিনা চিকিতসায় তাদের চোখের সামনে ৫ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন জানিয়ে চাঁদপুরের বাসিন্দারা তাদের স্থানীয় এক নেতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান, আমাদের দেশে ফেরার দ্রুত ব্যবস্থা করুন। তা না হলে আমরা বাঁচবো না। এ সময় একজন বলেন, আমাদেরকে যদি নাই নেন তাহলে ওখান থেকে বিষ পাঠান। আমরা খাইয়া মরে যাইগা। এ সময় অন্যজনকে বলতো শোনা যায়, আপনাদের যদি দয়া হয় তাহলে আমাদের নেন, না হলে বিষ পাঠান, বিষ খায়া আমরা একসঙ্গে মরে যাই। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন বলেন, আজ ২৬ দিন হলো, দূতাবাসের কেউ আমাদের খোঁজ নিলো না, আমরা বেঁচে আছি না মরে গেছি। কুয়েতি অফিসারদের আমরা কিছু করতে গেলে তারা বলে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির লোক আমাদের দেশে পাঠাচ্ছে না। বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির কেউ তাদের সঙ্গে নূন্যতম যোগাযোগটুকু করেনি জানিয়ে ভিডিও বার্তার সূচনাতে একজন বলেন, আমরা সেবদি ক্যাম্পে আছি। আমাদের এখানে অনেক আংকেল আছেন, অনেকে অনেক সমস্যার ভেতরে আছে। কারণ এখানে অনেকের ডায়াবেটিস আছে, তাদেরকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। তারা খুব করুণ অবস্থায় আছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি অতি দ্রুত আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরপর একজন বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, আমি শাহরাস্তি, চাঁদপুরের। তিনি তার এলাকার নেতা অধ্যাপক রফিকের উদ্দেশ্যে বলেন, রফিক সাব, আপনি নেত্রীর কাছে যান। নেত্রী যেনো আমাদের সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করেন সেটা বলুন। আমরা বড় কষ্টে আছি। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছি। আমাদের নেত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ আমাদের যেন অতি তাড়াতাড়ি এখান থেকে উদ্ধার করেন। দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করেন। ভিডিওতে একে একে বাংলাদেশিদের মারা যাওয়ার প্রসঙ্গে একজন বলেন, আমাদের মধ্য থেকে একের পর এক ভাই বিদায় (মারা) নিচ্ছে। জানি না আমাদের দিন কীভাবে যাবে, কোন দিন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছি, রোগে ভারাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমাদের মধ্য থেকে আমাদের পাঁচ ভাই বিদায় হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যে আরও কিছু লোক আছে রোগে আক্রান্ত। তাদের দেখে যেন আমাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, করোনার ভয়ে কুয়েত সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা দিয়েছে। অবৈধ মোট ২৩ হাজার বিদেশি এই সূযোগটি নিয়েছে। তারা জেলজরিমানা ছাড়া কুয়েত সরকারের টিকেটে নিজ নিজ দেশে ফেরার শর্তে আত্মসমর্পন করেছে। পুলিশের কাছে ধরা দেয়া ওই ২৩ হাজার অভিবাসীর মধ্যে ৪ হাজার ৪ শ ৯০ বাংলাদেশি রয়েছেন বলে কুয়েত টাইমস এর রিপোর্টে বলা হয়েছে। ভারতসহ অন্য দেশে শ্রমিকদের নিজ নিজ দেশে দূতাবাস কুয়েত সরকারের ওই অ্যারেঞ্জমেন্টের মধ্যেও দেখভাল করছে। অনেককে এরই মধ্যে দেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এই অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসছে যে বাংলাদেশ দূতাবাসের কেউ তাদেন খোঁজ নেয়নি। রাষ্ট্রদূত অবশ্য তাদের ফেরানোর চেষ্টা কুয়েত সরকারের সঙ্গে দেন-দরবারে ব্যস্ত বলে দাবি করেছেন।

Advertisement