“কোভিট 19 : এপ্রিলের মাঝামাঝিতে বৃটেনের সম্ভাব্য অবস্থান”

        Dr. Zaki Rezwana Anwar FRSA
আমরা যদি প্রথমে বৃটেনে কোভিট 19-এ আক্রান্তদের সংখ্যার দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে মার্চের সাতাশ তারিখের পর আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা ক’মে একত্রিশে মার্চে খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল।  যেহেতু বৃটেনে এই রোগ নির্ণয়ের জন্যে পরীক্ষা করা হচ্ছে খুবই কম, কাজেই আক্রান্তের সংখ্যা বৃটেনে কোভিট-19 পরিস্থিতি বোঝার জন্যে খুব ভাল সূচক নয়।  বৃটেনের পরিস্থিত বুঝতে হলে এবং বৃটেনের সঙ্গে অন্যান্য দেশের তুলনা কোরতে হলে আমাদের কোভিট-19এ মৃতের সংখ্যার দিকে তাকাতে হবে।
আজকের (১লা এপ্রিল) হিসেব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ইটালিতে তেরো হাজারের বেশী, স্পেইনে ন’হাজারের বেশী এবং বৃটেনে দু’হাজারের বেশী। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে বৃটেনে মৃতের সংখ্যা ইটালি বা স্পেইনের সাথে তুলনা কোরলে অনেক কম, কিন্তু শুধুমাত্র এক নজরে মৃতের সংখ্যা দেখলে আমরা গোটা চিত্রটি সম্পর্কে ধারণা পাব না। পুরো ধারণাটি পেতে হলে আমাদেরকে দেখতে হবে মৃত্যুর বৃদ্ধির হারের ধরনটিকে।
ইটালির কথাই ধরা যাক। ইটালিতে গোড়ার দিকে মৃতের সংখ্যা একশ থেকে এক হাজারে পৌঁছুতে সময় লেগেছিল আট দিন, অর্থাৎ ঐ সময়ে মৃত্যুর বৃদ্ধির হার ছিল দিনপ্রতি শতকরা তেত্রিশ ভাগ। অন্যদিকে বৃটেনে প্রথম একশ জনের মৃত্যুর পর প্রথম আট দিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল পাঁচশ আটান্নতে, অর্থাৎ প্রথম আটদিনে  মৃত্যুর বৃদ্ধির হার ছিল দিনপ্রতি শতকরা চব্বিশ ভাগ যা ছিল ইটালির চাইতে কম। তার পরের ছ’দিনে ইটালিতে মৃত্যুর হার ছিল দিনপ্রতি শতকরা বিশ ভাগ। আর ছ’দিনে (অর্থাৎ প্রথম আট দিনের পর) বৃটেনে মৃত্যুর বৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল দিনে শতকরা সাতাশ ভাগে। অর্থাৎ বৃটেনে কোভিট 19এ মৃত্যুর ঘটনা শুরু ওয়ার পর থেকে চৌদ্দ দিন পর আজ পহেলা এপ্রিলে মৃতের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে দু’হাজার তিনশো বাহান্নোতে।
যদি বৃটেনের মৃত্যুর বৃদ্ধির হার আগামী ছ’দিনে গত ছ’দিনের মতই থাকে তাহলে বৃটেনে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা দশ হাজারের গিয়ে পৌঁছুবে যা সরকারি আগাম গগণার চাইতে প্রায় পাঁচ গুণ বেশী।
ভূমিকম্পে যেমন আফটার শক হয় তেমনি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মহামারীতে  সেকেন্ড ওয়েভ হয়  অর্থাৎ একবার প্রাদুর্ভাব কমে গিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে  দ্বিতীয়বার আবার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। স্পেনিশ ফ্লুতে কিন্তু সেকেন্ড ওয়েভটিই ছিল বেশী ভয়ঙ্কর। সেকেন্ড ওয়েভ বৃটেনে কেমন হবে তা বোঝা যাবে এন্টিবডি পরীক্ষাটি সবার জন্যে বাজারে আসার পর। তবে ভালভাবে ঐ টেষ্টটির এক্যূরেসি পরীক্ষা করার আগে বাজারে ছেড়ে দেওয়াটা হবে একটি বিপজ্জনক ঘটনা। কারণ অনির্ভরযোগ্য  পরীক্ষার চাইতে পরীক্ষা না করাও এক অর্থে ভাল।
লেখক : ডক্টর জাকি রিজওয়ানা আনোয়ার। মা ও শিশু বিশেজ্ঞ। চ্যানেল এসের সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার এবং সিনিয়র কমিউনিটি এক্টিভিস্ট।
Advertisement