ক্ষমতায় গেলে সব রাজাকারের বিচার হবে|| তারেক রহমান

মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সব রাজাকারের বিচার হবে। শেখ হাসিনা বলেছেন তার বেয়াই রাজাকার হলেও ভালো রাজাকার। তবে তারেক রহমান ঘোষণা দিয়ে বলেন, রাজাকার ভালো কিংবা মন্দ হোক, সব রাজাকারকেই বিচারের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করলেও এবারও অনেক চিহ্নিত রাজাকারকে দলের মনোনয়ন দিয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্ব লন্ডনের দ্যা রয়েল রিজেন্সি অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসসহ অনেকে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের নামে প্রহসনের পর আওয়ামী লীগ ব্যাংক ডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছিলো।

এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে প্রহসন করে তারা রাতের অন্ধকার জনগণের ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ডাকাতদের দলে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যতবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে কখনোই তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারেনি।

তারেক রহমান বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের অন্যতম লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া তবে আসল লক্ষ্য ক্ষমতা কিংবা ক্ষমতার বাইরে সর্বাবস্থায় রাজনৈতিক দলটি জনগণের সঙ্গে থেকে জনগণের আস্থা অর্জন করা। যদি তাই হয়, তাহলে বিএনপি একশো ভাগ সফল কারণ বিএনপির সঙ্গে বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ। রাজনৈতিক দল হিসেবে এটি অবশ্যই বিএনপির সবচেয়ে বড় সাফল্য। এখানেই জনগণের বিজয় আর আওয়ামী লীগ নামক দলটির পরাজয়।

তারেক রহমান বলেন, সুতরাং বিএনপির হতাশ হওয়ার কিছু নেই কারণ দেশে ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি বরং ২৯ ডিসেম্বর রাতে জনগণের ভোট ডাকাতি হয়েছে। ভোট ডাকাতরা যেই ফলাফল ঘোষণা করেছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলাফল ঠিক উল্টোটা হতো বলে ভোটাররা বিশ্বাস করে । দেশের জনগণ বিএনপির সঙ্গে এই ভয়েই র‍্যাব,পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আওয়ামী লীগ রাতের বেলা ভোট ডাকাতি করেছে। দিনের বেলায়ও কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটে চুরি করেছে।

তিনি বলেন, ভোট ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি করে আওয়ামী লীগ আর বেশিদিন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারবেনা। পাকিস্তানিরাও টিকতে পারেনি।

আওয়ামী লীগের দোসর স্বৈরাচারী এরশাদও টিকতে পারেনি। হাসিনাও টিকতে পারবেনা। এই ভোট ডাকাত সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ও নির্দেশে বিএনপি সঠিক পথেই এগুচ্ছে উল্লেখ করে তারেক রহমান দেশে প্রবাসে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থক শুভার্থীদের ‘ ধৈর্য, সাহস এবং একতাবদ্ধ’ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্য বিনষ্ট করতে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে ভোট ডাকাত সরকার নিজেদের ভোট ডাকাতির কলঙ্ক থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরাতে নানারকম অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। মিথ্যা অপপ্রচার ও ভুয়া সংবাদ ছড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহবান জানান তারেক রহমান।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিল উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বছরের পর বছর ধরে বলে আসছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারেনা। বিএনপি বারবার বলে আসছে, আওয়ামী লীগ আইনের শাসনে বিশ্বাস করেনা, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা। এবার এটি আবারো প্রমাণিত হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ যেভাবে যেভাবে গুম খুন অপহরণ ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে এখনো একইরকম চিত্র। একইরকম ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রায় চার বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান অপরদিকে চার বছর ক্ষমতায় ছিলেন জিয়াউর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানের চার বছরে গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম হয়েছে, মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। দেশে দুর্নীতি লুটপাট হয়েছে। দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন।

অপরদিকে মাত্র চার বছরের শাসনামলে জিয়াউর রহমান দেশকে আধুনিক ও সমৃদ্ধির ধারায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর চেষ্টায় বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের যাত্রা শুরু হয়। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার তৈরী হয়। তারেক রহমান বলেন, জনগণের ইচ্ছায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে জিয়াউর রহমান দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের কাছে লিখিত দরখাস্ত করে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিজ নামে রাজনীতি করার সুযোগ নিয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানের শাসনকালের তুলমানুলকে আলোচনা করলে দেখা যাবে শহীদ জিয়ার সাফল্যের কাছে শেখ মুজিব ম্লান। এ কারণেই আওয়ামী লীগ শহীদ জিয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে দিয়ে চায়না।

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর আলোচনা তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের নাম জড়িত। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দিকনির্দেশনাহীন স্বাধীনতাকামী বাঙালির সামনে চট্টগ্রামে একটি ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বের কিন্তু তাদের ব্যর্থতায় সেই দায়িত্বটি পালন করেন জিয়াউর রহমান। তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিএনপি কখনোই কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করেনি বরং সত্য ইতিহাস স্বীকার না করে আওয়ামী লীগ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। স্বাধীনতার জিয়াউর রহমানের সাফল্যগুলো সারাদেশে তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জন্য তিনি বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

Advertisement