গুজরাট দাঙ্গায় ‘নির্দোষ’ মোদি, বিধানসভায় কমিশনের রিপোর্ট

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ভারতের গুজরাট রাজ্যে ২০০২ সালের জাতিগত দাঙ্গার নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে রাজ্যটির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার মন্ত্রিপরিষদকে নির্দোষ পেয়েছে ঘটনা তদন্ত গঠিত নানাবতী কমিশন।

বুধবার গুজরাটের বিধানসভায় উপস্থাপিত কমিশনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

২০০২ সালে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার তদন্তে গঠিত নানাবতী কমিশনের রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয়ার পাঁচ বছর পর এদিন গুজরাটের বিধানসভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কোনো দোষ খুঁজে না পেলেও বেশ কিছু পুলিশ অফিসার যে দাঙ্গার সময় ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশও করেছে কমিশন।

২০০২ সালে গোধরায় ট্রেনে আগ্নিকাণ্ডে ৫৯ করসেবকের মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকে গুজরাটের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় তিন দিন ধরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় ১০০০ জন। যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের।

দাঙ্গায় তৎকালীন গুজরাট সরকার এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে পরোক্ষ উস্কানি দেয়া এবং নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে দাঙ্গার তদন্তে গঠিত নানাবতী কমিশন। দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে বা নিয়ন্ত্রণে গড়িমসির কোনও অভিযোগের প্রমাণই খুঁজে পায়নি কমিশন।

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় গুলবার্গ সোসাইটি জ্বালিয়ে দেয় হিন্দু দাঙ্গাকারীরা। সোসাইটিটির অধিকাংশ বাসিন্দা ছিল মুসলিম। ওই ঘটনায় জাকিয়া জাফরির স্বামী ও তৎকালীন কংগ্রেসের সংসদ সদস্য এহসান জাফরিসহ ৬৯ জন নিহত হন।

এহসান বারবার পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন করে সাহায্য চাওয়া সত্ত্বেও কোনো সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ ওঠে। নিহত জাফরির বিধবা স্ত্রী জাকিয়া জাফরি জানিয়েছেন, তার স্বামী সাহায্য চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে ফোন করেছিলেন, কিন্তু সাহায্য আর আসেনি।

ওই হত্যাকাণ্ড গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যা নামে পরিচিত। সুপ্রিমকোর্টের পর্যবেক্ষণে বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদি ও অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করে। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে সুপ্রিমকোর্ট অভিযোগ খারিজ করে রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আহমেদাবাদ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জাকিয়া জাফরি পিটিশন করেন এবং ২০১৩ সালে তা খারিজ হয়। ২০১৪ সালে গুজরাট হাইকোর্টে পিটিশন করেন তিনি।

কমিশনের তদন্তের এখতিয়ারে ছিল তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকাও। সে ক্ষেত্রে অবশ্য বেশ কিছু পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিন দিন ধরে দাঙ্গা চললেও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু পুলিশ অফিসার ‘প্রয়োজনীয় তৎপরতা ও আগ্রহ দেখাননি’। কিছু পুলিশ অফিসার আবার দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন, উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশও করেছে কমিশন।

Advertisement