ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল ’ সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ – খুলনা উপকূল অতিক্রম করতে পারে

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গেছে, উত্তরপশ্চিম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (২০.০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৬পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ০৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থকে ৫২৫ কি: মি: দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১০ কি: মি: দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কি: মি: দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেক ৩৭৫ কি: মি: দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূণিঝঢ় ‘বুলবুল’ এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দুপুর থেকে দমকাসহ ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি: মি: এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৩০ কি: মি: যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কি: মি: পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহেক ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম কালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১০০-১২০ কি: মি: বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ও মুনফেজ (Moon Phase) এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী,চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
১। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাঃ
• আবহাওয়া পরিস্থিতি বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে এবং এ সংক্রান্ত বুলেটিন/রিপোর্ট প্রকাশ করবে।
• দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি এবং সিসিপি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সার্বক্ষনিক খোলা থাকবে।
• এনডিআরসিসি সংশ্লিষ্ট ১৩ (তের) টি জেলার জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে।
• সিপিপি ও রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকগনকে তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
• আবহাওয়া সংকেত অনুযায়ী সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার চলাচলের বিষয়ে সকল জেলা প্রশাসকগণ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
• আবহাওয়ার সংকেত অনুযায়ী বিভিন্ন রুটে নৌ-যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
• সকল পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সভা অনুষ্ঠান করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।
• সংশ্লিষ্ট সকল জেলা প্রশাসক ঘূণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র সমূহ প্রস্তুত রাখবেন এবং যোগাযোগ উপযোগী করবেন।
• সংশ্লিষ্ট সকল জেলা প্রশাসক আশ্রয়কেন্দ্রে আগত জনগনের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রাখবেন। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকগণ নগদ বরাদ্দ হতে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করবেন।
• সংশ্লিষ্ট সকল জেলা প্রশাসক আশ্রয় কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন আনার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করবেন। বিপদ সংকেত অনুযায়ী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়া মাত্র বিপদাপন্ন জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনয়ন নিশ্চিত করবেন।
• বেরিবাঁধ, ফসল, গবাদি পশু, মৎস্য সম্পদ ইত্যাদি ক্ষয়-ক্ষতি রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
• সংশ্লিষ্ট সকল জেলা প্রশাসক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত লোকজনের পাশাপাশি গবাদি পশুর জন্য নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, মেডিকেল টিম প্রস্তুতসহ আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলি নিশ্চিত করবেন।
• “ঘূর্ণিঝড় বুলবুল থেকে নিজের ও পরিবারের জীবন/সম্পদ রক্ষার জন্য শনিবার ০৯ নভেম্বর ২০১৯ দুপুর ০২. ০০ টার মধ্যে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিন”-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়—এই বার্তাটি সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বহুল প্রচারের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে এবং সকল মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে এসএমএস আকারে জনগনের মাঝে ব্যপক প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-কে পত্র প্রদান করতে হবে।
• জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উপকূলীয় ১৩ (তের) জেলার সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীর ছুটি বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২। সংশ্লিষ্ট সকল জেলা প্রশাসকগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনকে আশ্রয় প্রদানের জন্য ০৮/০১১/২০১৯ খ্রি: তারিখের মধ্যে নিম্নোক্ত আশ্রয় কেন্দ্রসমূহ প্রস্তুত করা হয়েছেঃ

জেলা উপজেলা আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা (স্কুল, কলেজসহ) ধারণ ক্ষমতা (জন)
১। বাগেরহাট মোংলা ৮৪ টি ৪৭৬০০
রামপাল ৩২ টি ১২২০০
শরণখোলা ৯৭ টি ৩৮৮০০
মোড়লেগঞ্জ ৮২ টি ১৩৮০০
মোট ২৯৫ টি ১১২৪০০
২। সাতক্ষীরা কালীগঞ্জ ১০৫ টি ১০৫০০
শ্যামনগর ১৭৫ টি ১৭৫০০০
আশাশুনি ৮১ টি ৮১০০০
সাতক্ষীরা সদর ২৬৪ টি ২৬০০০০
কলোরোয়া ২১৮ টি ২০০০০০
মোট ১১৭৪ টি ১০২৬৫০০
৩। খুলনা কয়রা ১২১ টি ৮৭০০০
দাকোপ ৮৯ টি ৬২৫০০
পাইকগাছা ৩২ টি ২৬২৫০
বটিয়াঘাটা ২৭ টি ১৫০০০
ডুমুরিয়া ২৯ টি ১২৭৫০
তেরখাদা ২২ টি ১৫৪০০
রুপসা ২৯ টি ২০৩০০
মোট ৩৪৯ টি ২৩৮৯৫০ জন

৩। “ঘূর্ণিঝড় বুলবুল থেকে নিজের ও পরিবারের জীবন/সম্পদ রক্ষার জন্য শনিবার ০৯ নভেম্বর ২০১৯ দুপুর ০২. ০০ টার মধ্যে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিন”-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়—এই বার্তাটি সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বহুল প্রচারের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে এবং সকল মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে এসএমএস আকারে জনগনের মাঝে ব্যপক প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-কে গত ৮/১১/২০১৯ খ্রি: তারিখ পত্র প্রদান করা হয়েছে। ৪। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জেলা ভিত্তিক মোট ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দের তথ্যঃ
ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলীয় সংশ্লিষ্ট ১৩টি জেলায় বরাদ্দঃ
তারিখ জেলার সংখ্যা জিআর চাল (মেঃটন) জিআর (ক্যাশ) শুকনো খাবার (প্যাকেট) শিশু খাদ্য (টাকা) গো খাদ্য (টাকা)
০৮/১১/২০১৯ ১৩ জেলা ২,০০০ (দুই হাজার) ১,১০,০০০০০/- (এক কোটি দশ লক্ষ) ১৪,০০০ (চৌদ্দ হাজার) ৯,০০,০০০ (নয় লক্ষ) ৯,০০,০০০ (নয় লক্ষ)

৫। দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস ও জরুরী সাড়াদান ব্যবস্থাপনা- সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে নির্দেশনা প্রদানের উদ্দেশ্যে আন্ত: মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভাপতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান এমপি’র সভাপতিত্বে আজ সকাল ১১ টায় মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

Advertisement